শেখ হাসিনা যদি দেশে না ফিরতেন…
তেতাল্লিশ বছর আগে, বাংলার মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে জৈষ্ঠ্যের তাপদহের দিনে বর্ষণমুখর পরিবেশে স্বদেশের মাটিতে প্রত্যাবর্তন করেন বঙ্গবন্ধু তনয়া শেখ হাসিনা। বাংলার মাটি স্পর্শ করেই তিনি বাংলার মানুষের ভাত ও ভোটের অধিকার এবং মর্যাদাশীল জাতিতে পরিণত করার ব্রত নেন। সেই থেকে আজ অবধি মেধা ও প্রজ্ঞা দিয়ে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন এদেশের মানুষের জন্য।
বঙ্গবন্ধু কন্যার এই চার দশকের বেশি সময় ধরে চলার পথ মসৃণ ছিল না। তাকে সামরিক শাসনের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন কাজ করতে হয়েছে এবং এখনও করছেন। ছয় বছর নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব নিয়ে দেশে ফিরে মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।
শেখ হাসিনা যদি আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব না নিতেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী না হতেন তাহলে-
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা-
বঙ্গবন্ধু কন্যা যদি আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব না নিতেন, তাহলে এদেশের মানুষ কখনও তাদের ভোটাধিকার পেত না। আজকের পাকিস্তানের দিকে তাকালে বোঝা যায়, তাদের রাজনীতি ও অর্থনীতি কোন পর্যায়ে এসেছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশে ফিরেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন। এজন্য তাকে বহুবার হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। প্রতিবারই তিনি অলৌকিকভাবে বেঁচে গিয়েছেন। তার আন্দোলন সংগ্রামের কারণেই দেশে আজ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলীয়ান ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পেয়েছে।
আওয়ামী লীগের অস্তিত্ব-
শেখ হাসিনা যদি আওয়ামী লীগের দায়িত্ব না নিতেন তাহলে- মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া দল আওয়ামী লীগ বিপন্ন হয়ে যেত। তিনি দায়িত্ব নিয়ে বিপদ-সংকুল পথ পাড়ি দিয়ে আওয়ামী লীগকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছেন।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচার-
হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে হত্যা করে অকৃতজ্ঞতার পরিচয় দেয় বাঙালি জাতি। তিনি দেশে না ফিরলে জাতির পিতার হত্যাকাণ্ডের বিচার করা সম্ভব হতো না। কারণ খুনি জিয়া বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচারের পথ রুদ্ধ করে দিয়ে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করেছিল। পরে বঙ্গবন্ধু কন্যা ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে জাতীয় সংসদে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিলের বিল উত্থাপনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর বিচারের পথ উন্মুক্ত করেন এবং প্রচলিত আইনে বিচার করে দোষীদের বিচার সম্পন্ন করেছেন। এ বিচারের মাধ্যমে জাতি তার ঋণ শোধ করেছে।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার-
শেখ হাসিনা দেশে না ফিরলে জাতি কখনও তার কলঙ্ক মোচন করতে পারতো না। যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আজ স্বাধীন দেশে বসবাস করছি, মৌলিক অধিকার ভোগ করছি তাদের হত্যাকারী ও স্বাধীন বাংলাদেশের বিরোধিতাকারী মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার হয়েছে এবং এখনও চলমান। এর মাধ্যমে জাতি হিসেবে কলঙ্ক মোচন হয়েছে। এটা একমাত্র বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশে ফিরে জাতির হাল ধরার কারণে সম্ভব হয়েছে।
গৃহহীন ও ভূমিহীনদের পুনর্বাসন-
জাতির পিতার তনয়া দেশে ফেরায় গৃহহীন ও ভূমিহীনরা তাদের নিজস্ব ঠাঁই পেয়েছে। সারাদেশে প্রায় নয় লাখ ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করেছেন এবং এখনও চলমান। বঙ্গকন্যা দেশে না ফিরলে অসহায় ভূমিহীন এই পরিবারসমূহ সারাজীবনেও তাদের নিজস্ব আবাসস্থল পেত না।
পাহাড়ে শান্তির অগ্রদূত-
শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত উদ্যোগ ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ ও উন্নত পার্বত্য চট্টগ্রাম গঠনের লক্ষ্যে দীর্ঘদিন চলা রক্তক্ষয়ী সংঘাত নিরসন সম্ভব হয়েছে। শেখ হাসিনা দেশে ফেরায় দেশের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব নিরসনের মাধ্যমে দেশের অখণ্ডতা রক্ষা পেয়েছে।
ছিটমহল বিনিময়-
বাংলাদেশ স্বাধীনেরও প্রায় ৪৪ বছর পরে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে থাকা অমীমাংসিত ১৬২টি ছিটমহল বিনিময় হয়। যেখানে ৫৫ হাজারের মতো মানুষ নিজ নিজ দেশের সাথে যুক্ত হতে পেরেছে । শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণে এটা সম্ভব হয়েছে ।
মহাকাশে স্যাটেলাইট-
বঙ্গবন্ধু কন্যার কারণে মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা সম্ভব হয়েছে। যার মাধ্যমে বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে।
শিক্ষা , বিদুৎ ও অন্য অবকাঠামোগত খাত-
সারাদেশে শিক্ষার বিস্তার, বিদ্যুতের চাহিদা মেটানো, যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করার জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যুগোপযোগী শিক্ষাব্যবস্থা ও উপকরণ, বিদ্যুতের চাহিদা পূরণের জন্য পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ, কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করেছেন। যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করার জন্য বিশ্বের সাথে চ্যালেঞ্জ করে পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছেন। কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ করেছেন,বঙ্গবন্ধু রেল সেতুসহ গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ কাজ চলমান।
সমাজের অবহেলিত, নির্যাতিত জনগোষ্ঠী-যাদের মধ্যে অসহায়, বয়স্ক নারী ও পুরুয়, বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা ও প্রতিবন্ধীদের মাসিক ভাতার ব্যবস্থা করেছেন। এটা একমাত্র শেখ হাসিনার কারণে হয়েছে। তিনি নদীভাঙন, বন্যা, ঝড়, জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষার জন্য স্থায়ী বাঁধ নির্মাণসহ বিভিন্ন অবকাঠামো তৈরি করেছেন।
দেশের প্রতি ভালোবাসা ও মমত্ববোধ থেকে তিনি বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো জাতিতে পরিণত করার জন্য তিনি এসব করছেন। যদি শেখ হাসিনা দেশে ফিরে না আসতেন তাহলে হয়তো এখনও আমাদের লণ্ঠন জ্বালিয়ে রাত পার করতে হতো কিংবা ভালো আবাসনের চিন্তাও করতে পারতাম না। শেখ হাসিনার চৌকস নেতৃত্বের কারণে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে। তার হাত ধরেই ডিজিটাল বাংলাদেশে পরিণত হয়েছে। তিনি দেশে ফিরে না আসলে সবই অধরা থেকে যেত।
আজ সেই দিন ১৭ মে। ১৯৮১ সালের এই দিনে শ্রাবণ ধারার মধ্যে দেশের আলোকবর্তিকা হয়ে ভারতের দিল্লি থেকে কলকাতা হয়ে কুর্মিটোলা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামেন। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যে সেদিন শেখ হাসিনাকে একনজর দেখার জন্য লাখ লাখ লোক রাস্তায় অপেক্ষায় ছিল, স্লোগানে প্রকম্পিত হতে থাকে ঢাকার রাজপথ।
সেদিন মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের সেই গণসংবর্ধনায় বার বার মূর্ছা গিয়েছিলেন আজকের বাংলার আকাশের ধ্রুবতারা। সব হারিয়ে বাংলার মানুষের দিশারি হয়ে ফিরে আসা শেখ হাসিনা নিজের বাড়িতে তথা বঙ্গবন্ধু ভবনে প্রবেশের অনুমতি পাচ্ছিলেন না। তিনি দেশে ফিরে বাংলার মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে নিরন্তর কাজ করে উন্নত ও সমৃদ্ধি বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নে আজ বিভোর। এইদিনে শেখ হাসিনা যদি দেশে না ফিরতেন তাহলে হয়তো বাংলাদেশের ইতিহাস অন্যভাবে লেখা হতো।
লেখক: প্রতিবেদক, প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি)।
এইচআর/ফারুক/এমএস