সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড
৪৮ ঘণ্টার কথা বলে ১২ বছরেও বিচার পায়নি পরিবার
সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যাকাণ্ডের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আসামিদের গ্রেফতার ও বিচারের কথা বলা হয়েছিল। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই আশ্বাসে আস্থা ফিরে পেয়েছিল সাংবাদিক সমাজ। তবে আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের এক যুগ পূর্ণ হয়েছে আজ। বিচার হয়নি, তদন্ত প্রতিবেদন দিতে সময়ক্ষেপণ করা হয়েছে ১০৫ বার। ১১ বছর পেরিয়ে ১২ বছরে এসেও সাংবাদিক সম্পতি হত্যার বিচার দাবিতে প্রতিবাদ সমাবেশ করতে হচ্ছে। কেন এখনো বিচার কাজ শুরু হয়নি, কেন তদন্ত প্রতিবেদন পেছানো হচ্ছে- এমন প্রশ্ন সাংবাদিকদের। কেন বিচার চেয়ে আন্দোলন করতে হচ্ছে, সরকারের প্রতি এমন প্রশ্নও সাংবাদিক নেতাদের।
রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) সেগুনবাগিচার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) প্রাঙ্গণে সাগর-রুনি হত্যার বিচার দাবিতে প্রতিবাদ সমাবেশ এসব প্রশ্ন তোলেন সাংবাদিকরা।
সমাবেশে সাংবাদিক নেতারা বলেন, ‘আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের ১১ বছর ঘুরে আবারও সেই ১১ ফেব্রুয়ারি আজ। ২০১২ সালের এদিন ভোরে আমাদের দুই সহকর্মী সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি নির্মমভাবে খুন হয়েছিলেন। এই হত্যাকাণ্ডের ১২তম বার্ষিকী আজ। দীর্ঘসময় পেরিয়ে গেছে, কিন্তু প্রকৃত হত্যাকারীদের এখনো শনাক্ত কিংবা গ্রেফতার করা হয়নি। বিচার প্রক্রিয়া থমকে আছে। নিষ্ঠুর এ হত্যাকাণ্ড ও বিচারহীনতায় আজ সাংবাদিক সমাজ হতবাক।’
সাংবাদিক সাগর ও রুনি দম্পতি হত্যার অবিলম্বে বিচার দাবি করে সাংবাদিকরা বলেন, ১২ বছরেও মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া অত্যন্ত লজ্জার। তদন্তকারী সংস্থা ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। পিবিআই বা অন্য সংস্থাকে তদন্তের দায়িত্ব দিয়ে অবিলম্বে দোষীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান তারা।
এ সময় মাছরাঙ্গা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক রাশেদ আহমেদ বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লজ্জা হয় কি না জানি না। এতবার কেন তদন্ত প্রতিবেদন পেছানো হবে? আদালতের বিবেকের কাছে আমার প্রশ্ন অন্য মামলার বিচার হলে এটা কেন দেরি হবে। আজ শুধু সাগর-রুনি হত্যা নয়, অন্য সাংবাদিক হত্যারও বিচার হয়নি। বিপরীতে সাংবাদিক নির্যাতন আরও বেড়েছে।’
ডিআরইউ’র সাবেক সভাপতি মুরসালিন নোমানী বলেন, ‘সাগর-রুনি হত্যার পরপরই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এই হত্যাকাণ্ডের ক্লু উদঘাটন হবে। আজ এক লাখ চার হাজার ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও সেই হত্যার ক্লু উদঘাটন হলো না। তদন্ত প্রতিবেদন ১০৫ বার পেছানো হয়েছে। র্যাবের তৎকালীন ডিজি বলেছিলেন এই হত্যাকাণ্ডের প্রনিধানযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে, তাহলে কেন? আমরা চাই র্যাবের সাবেক ডিজিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক, তাহলেই ক্লু বের হতে পারে। র্যাব যদি না পারে তাহলে তারাও বলুক যে তারা পারছেন না।’
আরও পড়ুন>> সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের তদন্তে গভীরে যেতে হচ্ছে: আইনমন্ত্রী
সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম হাসিব বলেন, ‘আমরা আমাদের সহকর্মী হত্যার বিচার চাই। এখানে আইনমন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছেন তার প্রতিবাদ জানাই। একই সঙ্গে আপনাকে আপনার বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে হবে।’
সাংবাদিক নেতা শেখ মামুন বলেন, ‘আজ আমাদের সহকর্মীদের হত্যার বিচার পেলাম না। বিচারের নামে প্রহসন চলবে কি না জানি না। বিচারহীনতার এই সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আমরা আমাদের সহকর্মী হত্যার বিচার চাই।’
ক্র্যাবের সাবেক সভাপতি মধুসূদন মন্ডল বলেন, ‘এই হত্যার এক যুগ পেরিয়ে গেলেও তদন্ত শেষ হয়নি, এটা আমাদের দুর্ভাগ্য। তৎকালীন আইজি বললেন প্রনিধানযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে, তাহলে কই সেই প্রনিধানযোগ্য অগ্রগতি? কেন বার বার তদন্ত প্রতিবেদন পেছানো হচ্ছে। প্রতিবেদন দিয়ে দেন, প্রয়োজনে আমাকে হত্যার আসামি করে হলেও প্রতিবেদন দেওয়ার দাবি জানাই। প্রতিবেদনের জন্য আর অপেক্ষা করতে চাই না।’
ডিআরইউ’র সাবেক সভাপতি শাহেদ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা অপেক্ষা করবো, প্রয়োজনে কেয়ামত পর্যন্ত অপেক্ষা করবো, তবুও বিচার চাই। একই সঙ্গে বিচারের দাবিতে ডিআরইউ’র পক্ষ থেকে দুই মাস পর পর কর্মসূচি ঘোষণা করা হোক।’
সিনিয়র সাংবাদিক আশিষ কুমার দে বলেন, ‘সাংবাদিক হত্যার একটিরও বিচার হয়নি। হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে ৪৮ ঘণ্টার সময় দিয়েছিলেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। ১২ বছরেও এটা আলোর মুখ দেখেনি। প্রধানমন্ত্রীকে বলতে চাই, ২১ বছর পর ক্ষমতায় এসে আপনি যদি আপনার পিতা হত্যার বিচার করতে পারেন তাহলে এই হত্যার বিচার কেন হবে না। বিচারহীনতা থেকে বেরিয়ে আসুন, আমরা আমাদের সহকর্মীদের হত্যার বিচার চাই।’
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি মানিক লাল ঘোষ বলেন, ‘আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের এক যুগ পেরিয়ে গেলেও আজ পর্যন্ত এটার বিচার আমরা পাইনি। বিচার পাওয়া তো দূরের কথা তদন্তকাজও শেষ হয়নি। আমরা খুনিদের গ্রেফতার চাই, তাদের বিচার চাই। বিচার পেতে কত বছর লাগবে ধারণাও করতে পারি না। তবে আমরা অপেক্ষায় আছি তদন্ত শেষে বিচার পাবো।’
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি সৈয়দ শুকুর আলীর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন আহমেদের পরিচালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন ডিআরইউ’র সাবেক সভাপতি শফিকুল করিম সাবু, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ওমর ফারুক, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব শেখ মানমুনুর রশিদ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহিদুল ইসলাম, ক্র্যাবের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম, ডিআরইউ’র সহ-সভাপতি শফিকুল ইসলাম শামিম, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ সাইফুল্লাহ, দপ্তর সম্পাদক রফিক রাফি, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সুশান্ত সাহা, নির্বাহী সদস্য ফারহানা ইয়াসমিন জুথি, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম প্রমুখ।
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় নৃশংসভাবে খুন হন সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি। এরপর গত ১২ বছর ধরে এই হত্যার বিচারের দাবিতে আন্দোলন করে আসছে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি। সাগর রুনি মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময় ১০৫ বার পিছিয়েছে। আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি আবারও দিন ধার্য করা হয়েছে।
ইএআর/ইএ/জিকেএস
সর্বশেষ - গণমাধ্যম
- ১ নিউইয়র্ক আইনসভার বিশেষ সন্মাননা পেলেন কেরামত উল্লাহ বিপ্লব
- ২ গণমাধ্যম সংস্কারে কমিশনকে সহযোগিতার আশ্বাস সাংবাদিক নেতাদের
- ৩ বাতিল অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড পুনর্বিবেচনা করবে পিআইডি
- ৪ গণমাধ্যমে প্রতিবন্ধীদের বিষয়ে সংবেদনশীলতা নিশ্চিতের আহ্বান
- ৫ বিজয় দিবস উপলক্ষে ডিএসইসি সদস্যদের জন্য ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প