পরিচালক ও কয়েকজন সাংবাদিক
কামরুল ইসলাম রিফাত
আজ তৃতীয় দিন। উদ্দেশ্য.. ভারতের আলোচিত-সমালোচিত অভিনেত্রী পাওলি দাম এর ইন্টারভিউ। তৃতীয় দিনও ইন্টারভিউ না নিয়ে ফিরে আসতে হলো। কোন আফসোস নয়, মনের ভিতর জন্ম নিলো ক্ষোভ আর কয়েকটি প্রশ্ন।
রাজধানীর বিভিন্ন লোকেশনে চলছে..হাসিবুর রেজা কল্লোল পরিচালিত সিনেমা সত্ত্বার শুটিং। বিএফডিসি-তে বিশাল আয়োজনের মধ্য দিয়ে শুটিং চলছিল। হবে না কেন? বিশাল বাজেটের সিনেমা বলে কথা। তার উপর ভারতের অভিনেত্রী কাস্টিং এ। কাছাকাছি গিয়েই দেখলাম বিভিন্ন জনের মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে পাওলি দামের ছবি ডিলিট করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, সাংবাদিকদেরকেও শুটিং এর ফুটেজ ও ছবি না তোলার অনুরোধ করা হলো। কিন্তু তারপরও স্বয়ং পরিচালক, হাসিবুর রেজা কল্লোল ভাই এর কাছে আশ্বাস পাওয়া গেল... অপেক্ষা করলে পাওলির ইন্টারভিউ পাওয়া যাবে। প্রায় আড়াই ঘণ্টা অপেক্ষা করার পর জানানো হলো..পাওলি আজ ইন্টারভিউ দেয়ার মুডে নাই। পরিচালক আবারো আশ্বাস দিলেন.. পরে একদিন সময় দিবে। সাংবাদিক বড় ভাই আওলাদ হোসেন, স্পটে থাকায় তিনিও আমার হয়ে পরিচালককে বললেন। আবারো আশার বানী পেলাম। ফিরে এলাম অফিসে।
ঠিক সেদিন ফিরে এসে, ফেসবুকে বেশ কয়েকজন সাংবাদিকদের সাথে পাওলি দামের সেলফি এবং প্রথম আলোতে শুটিং লোকেশনের ছবিসহ নিউজ দেখতে পেলাম।
আজ আবারো..কাঙ্ক্ষিত পাওলি দামের ইন্টারভিউ পাওয়ার আশ্বাস পেয়ে ছুটলাম, কমলাপুর রেল স্টেশনে। প্রথমেই পরিচালকের হুশিয়ারি সংকেত- দু`তিন মিনিটের বেশি ফুটেজ নিয়েন না। আর সেই সাথে আশ্বাস- সূর্য ডুবলেই পেয়ে যাবেন পাওলি দামের ইন্টারভিউ। ঘন্টা দুয়েক কাটার পরই আবারো খোদ পরিচালকের মুখে শুনতে হলো- আজ পাওলির ইন্টারভিউ পাবেন না। পরে একদিন। সেই সাথে অতি বিনয়ের সাথে SORRY বলতে ভুললেন না তিনি। অনেকটা ক্ষোভ নিয়েই ফিরে এলাম সেখান থেকে। কিন্তু জন্ম নিলো কয়েকটি প্রশ্ন।
শ্রদ্ধেয় হাসিবুর রেজা কল্লোল ভাই, কোথায় যেন শুনেছিলাম "Sorry doesn`t cover everything." আপনি হয়তো Sorry বলেই নিজেকে মুক্ত করে ফেললেন। কিন্তু তার আগে আপনাকে একটা হিসাব না দিলেই নয়, যখন একজন টিভি সাংবাদিক এসাইনমেন্টে যায়, তার পেছনে একটা খরচ থাকে। আমাকে মাসিক যে বেতন দেয়া হয়, তার একটা অংশ। আমার সহকর্মী ভিডিওগ্রাফার এর বেতনের একটা অংশ। আমার গাড়ির ড্রাইভারের বেতনের একটা অংশ এবং গাড়ির জ্বালানি। মানলাম আপনার সিনেমা বিগ বাজেটের, কিন্তু সেই হিসেবে প্রতিদিনের সংবাদ সংগ্রহের জন্য কিন্তু কম বাজেট থাকে না। এবার প্রশ্নগুলোতে আসা যাক।
১. যেখানে আমরা অপেক্ষা করার পরও ইন্টারভিউ কিংবা শুটিং এর ফুটেজ পাই না, সেখানে কিভাবে হাতে গোনা কয়েকজন সাংবাদিক শুটিং এর ছবি, সেই সাথে পাওলির সাথে সেলফি তোলার সুযোগ পায়? (ভাই সেলফি তোলার কোন শখ এজন্মে হয় নাই, সংবাদ চাই)
২. মহরতের দিন দীর্ঘক্ষণ সাংবাদিকদের বসিয়ে রেখে, ইন্টারভিউ নেয়ার ব্যবস্থা না করে দিয়ে নিজেরা ফটোসেশনে ব্যস্ত হয়ে পরা কোন দায়িত্ববোধের ভিতর পরে?
৩. আমার জানার খুব ইচ্ছা..আপনাদের তালিকায় সাংবাদিক বলতে কারা কারা আছেন? সেই সাথে জানতে চাই, আমরা যারা সংবাদ সংগ্রহের জন্য ছুটে যাই...তাদেরকে আপনারা আসলে কি ভাবেন?
আর প্রশ্ন না করাই উত্তম। তবে একটা কথা, হাতের কাজ রেখেও যখন ছুটে যাই আপনাদের সিনেমার নিউজ করতে, সেখানে কিন্তু কোন স্বার্থ থাকে না। থাকে একটা মহৎ উদ্দেশ্য। নিউজ আমাদের দরকার এটা স্বীকার করি। কিন্তু তাই বলে গুটি কয়েক সাংবাদিকদের বাদ দিয়ে অন্য সব সাংবাদিকদের ছারপোকা ভাববেন না দয়া করে। আমরা ক্ষমতাবান বা পরিচিত ভাই ব্রাদার সাংবাদিক না হতে পারি, তবে আমরা সস্তা না। শুভ কামনা রইলো আপনার সিনেমা সত্তা`র জন্য।।
সিনিয়র রিপোর্টার, যমুনা টেলিভিশন