লকডাউনে দায়িত্ব পালনকালে হেনস্তার শিকার সংবাদকর্মীরা
রাজধানী ঢাকাসহ দেশজুড়ে সরকারের কঠোর বিধিনিষেধের (লকডাউন) দ্বিতীয় দিন চলছে বৃহস্পতিবার (১৫ এপ্রিল)। এ বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে ঢাকাসহ দেশের সড়কগুলোর মোড়ে মোড়ে অবস্থান নিয়েছে পুলিশ। পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলায় নিয়োজিত অন্য বাহিনীর সদস্যরাও আছেন তৎপর। তবে রাজধানীতে লকডাউনে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে হয়রানির শিকার হয়েছেন সাংবাদিকরা। এমনকি এক সাংবাদিকের মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
সংবাদকর্মীরা বিধিনিষেধের আওতামুক্ত হলেও তাদের এভাবে হয়রানির ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা শুরু হয়েছে। অনেকে বলছেন, ঢাকায় চলাচলের ক্ষেত্রে পুলিশের পক্ষ থেকে যে মুভমেন্ট পাস চালু করা হয়েছে, সাংবাদিকদের সেই পাসের আওতার বাইরে রাখা হলেও এভাবে তাদের হয়রানি করার ঘটনা সংশ্লিষ্টদের সমন্বয়হীনতাকেই সামনে নিয়ে আসছে।
লকডাউনের প্রথম দিন বুধবার (১৪ এপ্রিল) দুপুর আড়াইটার দিকে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের রেডিও মোড় এলাকায় ছবি তুলতে গিয়ে চার হাজার টাকার মামলার শিকার হয়েছেন দৈনিক মানবজমিনের ফটোসাংবাদিক জীবন আহমেদ। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আগারগাঁওয়ের রেডিও মোড়ের ওখানে ১৫-২০টি গাড়ি জটলা পাকানো ছিল। এটা দেখে আমি ছবি তুলতে গেছি। তখন ট্রাফিক পুলিশের একজন বললেন ড্রাইভিং লাইসেন্স দেন। কিন্তু আমি ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখাতে পারিনি। তারপর গাড়ির কাগজ চাইলে দিলাম। কাগজ দেয়ার পর আমাকে চার হাজার টাকার মামলা দেয়। আমি বললাম, আমাকে এতো টাকার মামলা না দিলেও পারতেন।’
ঘটনার পর জীবন আহমেদ এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেছেন, ‘বুঝলাম না ডাক্তার ও সাংবাদিকদের গাড়িতে কেনো পুলিশ মামলা দিচ্ছে, এইগুলো তো জরুরি সেবা। আমাকেও চার হাজার টাকার মামলা দিলো। আমি আজ দুপুরে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় ছবি তুলতে আগারগাঁওয়ে চেকপোস্টের সামনে দাঁড়িয়েছিলাম । এমন সময় ক্যামেরা বের করার আগেই আমাকে ৪০০০ টাকার মামলা ধরিয়ে দেয়া হলো।’
বৃহস্পতিবার (১৫ এপ্রিল) বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর মিরপুর ১ নম্বর এলাকার ওভার ব্রিজের নিচে দাঁড়িয়ে যান ও জনচলাচলের ভিডিওচিত্র ধারণ করছিলেন অনলাইন নিউজ পোর্টাল ঢাকা পোস্টের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক সাইদ রিপন। ঘটনাস্থলে দায়িত্ব পালন করছিলেন আনুমানিক ১০ থেকে ১২ পুলিশ সদস্য। এ সংবাদকর্মীর ভাষ্য, ভিডিও করতে করতে পুলিশের কাছাকাছি চলে গেলে সেখানে থাকা ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ডিসি (মিরপুর বিভাগ) আ স ম মাহাতাব উদ্দিন আমাকে বলেন, ‘ভিডিও করছেন, আপনি কে?’
তখন অন্য পুলিশ সদস্যরা বলেন, ‘স্যার এ তো সাংবাদিক। তার গলায় কার্ড আছে।’ জবাবে ডিসি মাহাতাব উদ্দিন বলেন, ‘কিসের সাংবাদিক! কিসের ঢাকা পোস্ট! প্রেস ক্লাবের নিবন্ধন আছে?’
রিপনের অভিযোগ, ‘এসব বলার পর আমার হাত থেকে ডিসি মোবাইল ফোন কেড়ে নেন। তিনি উল্টো আমার ভিডিও করা শুরু করেন। তারপর আমার মোবাইল নিয়ে গাড়িতে করে চলে যান ডিসি। গাড়িতে উঠে বলেন, ‘প্রেস ক্লাবের নিবন্ধনের কাগজপত্র নিয়ে এসে আমার অফিস থেকে মোবাইল নিয়ে যাবেন।’
বেলা ১১টার দিকে মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়ার প্রায় দুই ঘণ্টা পর ১টার দিকে মিরপুর ডিসি কার্যালয় থেকে সেটি ফেরত আনেন এই সাংবাদিক। তখন তার সঙ্গে মিরপুর বিভাগের ডিসি কার্যালয়ে গিয়েছিলেন আরেক অনলাইন নিউজ পোর্টাল রাইজিং বিডি ডটকমের নিজস্ব প্রতিবেদক হাসিবুল ইসলাম।
ঘটনাটির বিষয়ে জানতে চাইলে আ স ম মাহাতাব উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘সেটা জেনে আপনি কী করবেন? ওরে নিয়ে ডিসি মিরপুরের অফিসে আসেন। ওকে নিয়ে আসেন, তখন ঘটনা সামনা-সামনি বলব।’
এছাড়া, বিধিনিষেধে দায়িত্ব পালনকালে দৈনিক ঢাকা টাইমসের নিজস্ব প্রতিবেদক আলামিন রাজু ও অর্থসূচক পত্রিকার সংবাদকর্মী মো. হৃদয় আলমও হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ মিলেছে।
এদিকে, পুলিশ সদরদফতর থেকে বলা হয়েছে, বিধিনিষেধের আওতামুক্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান, তাদের চলাচলে মুভমেন্ট পাস প্রয়োজন নেই। শুধু পরিচয়পত্র প্রদর্শন করে কর্মস্থলে আসা-যাওয়া করতে পারবেন তারা।
বিধিনিষেধের আওতামুক্ত যারা, তারা হলেন-
১. চিকিৎসক
২. নার্স
৩. মেডিকেল স্টাফ
৪. কোভিড-১৯ টিকা/চিকিৎসার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি/স্টাফ
৫. ব্যাংকার
৬. ব্যাংকের অন্যান্য স্টাফ
৭. সাংবাদিক
৮. গণমাধ্যমের ক্যামেরাম্যান
৯. টেলিফোন/ইন্টারনেট সেবাকর্মী
১০. বেসরকারি নিরাপত্তাকর্মী
১১. জরুরি সেবার সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তা/কর্মচারী
১২. অফিসগামী সরকারি কর্মকর্তা
১৩. শিল্পকারখানা/গার্মেন্টস উৎপাদনে জড়িত কর্মী/কর্মকর্তা
১৪. আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য
১৫. ফায়ার সার্ভিস
১৬. ডাকসেবা
১৭. বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস ও জ্বালানির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি/কর্মকর্তা ও
১৮. বন্দর-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি/কর্মকর্তা
বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে স্থাপিত চেকপোস্টে যেসব পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন, তাদের এ বিষয়ে জরুরি ভিত্তিতে ব্রিফিং করার জন্য সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের অনুরোধ করা হয়েছে।
পিডি/এসএস/এইচএ/এএসএম