পত্রিকার মালিকরা ঋণ শোধ করেছেন কি না- খোঁজ নেবেন কি?
পত্রিকার মালিকরা কে, কোন ব্যাংক থেকে কত টাকা ঋণ নিয়েছেন এবং তা শোধ করেছেন কি না- সেই খোঁজ নেয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শুক্রবার (১৪ জুন) দুপুরে বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ক্রমাগত বৃদ্ধি-সংক্রান্ত এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনারা দয়া করে সব ব্যাংক থেকে এ তথ্যটা আগে বের করেন। যত মিডিয়া এখানে আছে, যত পত্রিকা… কাজ করেন, প্রত্যেকে ব্যাংকে গিয়ে বলবেন, আমি অনুরোধ করেছি। আপনাদের প্রশ্নের জবাবে, কোন মালিক, কোন ব্যাংকের কত টাকা ঋণ নিয়ে কত টাকা সুদ দেয়নি বা খেলাপি হয়ে পুনরায় করে যাচ্ছেন…; এখানে একটা হিসাব বের করলে আমাকে আর প্রশ্ন করতে হবে না। আর মালিকদের বলেন, তাদের ঋণখেলাপির টাকাগুলো পরিশোধ করতে, তাহলে আর খেলাপি থাকবে না।'
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ওই সাংবাদিক প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন রাখেন, বর্তমান সরকারের আমলে অনেক ক্ষেত্রে সাফল্য থাকলেও ঋণখেলাপিদের কেন নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না? উত্তরে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘যেহেতু আমাদের সুদের হার বেশি, চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ হয়, আর যখন হিসাবটা করা হয় তখন চক্রবৃদ্ধি হারে যেটা বলা হলো সেটা ধরে সুদসহ হিসাব দেয়া হয়। ফলে ঋণের পরিমাণটা দেখায় অনেক বড়। প্রকৃত ঋণটা যদি ধরা হয় তাহলে দেখা যাবে ঋণ তত বড় নয়। এর পেছনে নিশ্চয়ই বড় কোনো উদ্দেশ্য আছে। ফলে চক্রবৃদ্ধি সুদসহ খেলাপি ঋণের পরিমাণ ধরা হয়। তবে খেলাপির ঋণের পরিমাণ যেন নিয়ন্ত্রণে থাকে সেজন্য সরকার ব্যবস্থা গ্রহণ করছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
আরও পড়ুন >> দাম বাড়বে যেসব জিনিসের
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল অসুস্থ থাকায় প্রধানমন্ত্রী নিজে বাজেট-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেন। গতকাল প্রস্তাবিত বাজেট অধিবেশনে অর্থমন্ত্রীর অসমাপ্ত বাজেট বক্তব্যও পড়ে শেষ করেন প্রধানমন্ত্রী।
বাজেট সম্পর্কে যেসব গবেষণা সংস্থা নেতিবাচক মন্তব্য করেছে তাদের উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কিছু লোকের মানসিক অসুস্থতা রয়েছে, যারা কিছুই ভালো দেখেন না। আমার কথা হচ্ছে সাধারণ মানুষ সুখি কি-না? তাদের উন্নতি হচ্ছে কি-না?’
তিনি বলেন, ‘কেউ ভালো কথা বললে গ্রহণ করব, মন্দ কথা বললে ধর্তব্যে নেব না। এককথায় এ বাজেট একটি জনকল্যাণমূলক বাজেট।’
কৃষকরা ধানের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না- এমন প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ধান উৎপাদনে প্রণোদনা দেয়া হয় বলে কৃষকের খরচ কম। প্রায় সব খরচ সরকারই দেয়। কৃষকের দেখভাল আমরা করছি বলেই দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে।’
‘কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে বলেই এখন ধান কাটার লোক পাওয়া যাচ্ছে না’- যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।
আরও পড়ুন >> দাম কমছে যেসব পণ্যের
কালো টাকা সাদা করার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ সুযোগ দেয়া হয়েছে যাতে অর্থপাচার না হয়। অপ্রদর্শিত টাকা অনেকে পাচার করতে চান। সেই টাকা বিনিয়োগের সুযোগ দেয়া হচ্ছে। কালো টাকার স্তূপ যেন না জমে, তা যেন কাজে আসতে পারে, সেজন্য এ সুযোগ। তবে এজন্য যারা সৎ পথে উপার্জন করেন তাদের হতাশ হওয়ার কিছু নেই। যারা সৎ থাকেন তাদের যাতে সুবিধা হয় তা আমরা দেখব।
বাজেট-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মসূচি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্যে ব্যবসা-বাণিজ্য অত্যন্ত জরুরি। পোশাক শিল্পে নগদ প্রণোদনাসহ বিভিন্ন সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে। সে লক্ষ্যে বাজেটে দুই হাজার ৮২৫ কোটি টাকা রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে প্রত্যন্ত এলাকায় ইন্টারনেট সংযোগ দেয়া হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, সরকার ফাইভ-জি চালুর উদ্যোগ নিচ্ছে। দেশব্যাপী তথ্যপ্রযুক্তির নিরাপত্তার জন্য পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। এছাড়া গবেষণা কাজে অর্থ বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করা হচ্ছে। নির্বাচনী ইশতেহারে দেয়া প্রতিশ্রুতিগুলো সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে বলেও জানান টানা তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা ও পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট নিহতদের স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।
আরও পড়ুন >> ইতিহাসের সর্ববৃহৎ বাজেট : প্রধানমন্ত্রী
রীতি অনুযায়ী প্রতিবার বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন অর্থমন্ত্রী। এবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল অসুস্থ হওয়ায় সংবাদ সম্মেলন করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এর আগে বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করা হয়। এটি দেশের ৪৮তম এবং বর্তমান সরকারের তৃতীয় মেয়াদের প্রথম বাজেট। ‘সমৃদ্ধ আগামীর পথযাত্রায় বাংলাদেশ : সময় এখন আমাদের, সময় এখন বাংলাদেশের’ শিরোনামে প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ধরা হয় ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বাজেট এটি।
গতকাল বেলা ৩টায় জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বাজেট অধিবেশন শুরু হয়। শুরুতে বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। নতুন অর্থমন্ত্রী হিসেবে এটি তার প্রথম বাজেট।
দাঁড়িয়ে বাজেট বক্তৃতা শুরু করলেও পরে স্পিকারের অনুমতি নিয়ে অর্থমন্ত্রী নিজ আসনে বসে বাজেট উপস্থাপন করেন। কিন্তু বিকেল ৪টার পর অসুস্থ অর্থমন্ত্রীর পক্ষে প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন সম্ভব না হওয়ায় স্পিকারের অনুমতি নিয়ে বাকি অংশ সংসদে উপস্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এমইউ/এমএআর/এমকেএইচ