অভিযোগ ‘ভিত্তিহীন’ বললেন ওমর ফারুক
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) বিদায়ী মহাসচিব ওমর ফারুক বলেছেন, ‘জলিল-কাজল-মধু পরিষদের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে আমার বিরুদ্ধে যেসব কথা বলা হয়েছে তা সবৈব মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। আমার জনপ্রিয়তায় ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে তারা এসব কথা বলেছেন।
সোমবার জাগো নিউজের কাছে তিনি এমন দাবি করেন। এর আগে রোববার বিএফইউজের নির্বাচন স্থগিত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সংবাদ সম্মেলন করে ওমর ফারুকের বিরুদ্ধে জলিল-কাজল-মধু পরিষদের পক্ষ থেকে বেশকিছু অভিযোগ করা হয়।
ওমর ফারুক বলেন, ‘তারা সংবাদ সম্মেলন করে আমার বিরুদ্ধে যেসব কথা বলেছেন তা সবৈব মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। এ ধরনের মামলাবাজিতে আমি অভ্যস্ত নাই। আমি সবসময় মানুষের ভোটে নির্বাচিত হয়েছি। আমি কোনো নির্বাচনকে ভয় পাই না। আমি মানুষের পাশে ছিলাম, পাশে আছি এবং থাকব।’
আরও পড়ুন >> ‘বিদায়ী মহাসচিবের ভূমিকায় বিএফইউজের নির্বাচন স্থগিত’
‘যারা মামলা করেছেন তাদের সঙ্গে যাদের সম্পর্ক অতীতে ছিল এবং বর্তমানেও আছে; মামলার সঙ্গে তারাই জড়িত’- অভিযোগ করেন তিনি।
বিএফইউজের বিদায়ী মহাসচিব বলেন, ‘আমি কেন মামলা করাতে যাব? তারা কি আমার লোক? আমার প্যানেলের কেউ? নাকি তাদের কারও সঙ্গে আমার সামাজিক কোনো সম্পর্ক আছে। তারা সবসময় সামাজিকভাবে আমার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। সুতরাং তারা যে কথা বলছেন তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। ভোটারদের বিভ্রান্ত করতে তারা এটা করছে।’
‘আবদুল জলিল ভূঁইয়া এক নির্বাচনে দুবার পরাজিত হয়েছেন। জাকারিয়া কাজল আমার সঙ্গে ডিইউজের নির্বাচনে প্রায় ৩০০ ভোটে পরাজিত হয়েছিলেন। তারা এখন মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছেন। এ নির্বাচনেও তারা পরাজয়ের আশঙ্কা দেখে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে আবোল-তাবোল বকছেন।’
রোববারের সংবাদ সম্মেলনে জাকারিয়া কাজল অভিযোগ করেন, ‘নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগের দিন ৫ জুলাই নির্বাচন কমিশন সব প্রার্থীর সভা ডাকেন। সভায় উপস্থিত হয়ে আমরা জানতে পারি দুজন প্রার্থীর এক মামলায় প্রথম শ্রম আদালত নির্বাচন অনুষ্ঠানের ওপর স্থগিতাদেশ দিয়েছেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার প্রার্থীদের কাছে করণীয় জানতে চাইলে প্রতিদ্বন্দ্বী সভাপতি, সহ-সভাপতি, মহাসচিব ও কোষাধ্যক্ষরা নির্বাচন অনুষ্ঠানে লিখিতভাবে সম্মতি দেন। কিন্তু বিদায়ী মহাসচিব স্থগিত করা ভোটারদের ভোটাধিকার প্রদান নিয়ে আপত্তি করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার আইনগত বিষয় নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন স্থগিতের ঘোষণা দেন।’
এ অভিযোগের বিষয়ে ওমর ফারুক বলেন, ‘যারা নির্বাচন অনুষ্ঠানে লিখিতভাবে সম্মতি দেন তাদের মধ্যে আমিও আছি। নির্বাচন কমিশন যে তালিকায় স্বাক্ষর নিয়েছেন সেখানে দেখেন আমার নাম আছে কিনা? আমি স্বাক্ষর করেছি কিনা? ওই তালিকায় যদি আমার স্বাক্ষর থেকে থাকে তাহলে তারা সঠিক নয়। এর মানে তারা মিথ্যা কথা বলেছেন। যারা বৈধ ভোটার তাদের বিষয়ে আমি কেন আপত্তি তুলব? যদি দু-চারজন ভোটারের নাম বাদ পড়ে থাকে, আমি তাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করতে বলেছি।’
আরও পড়ুন >> স্থগিত আদেশ প্রত্যাহার, নির্বাচন হচ্ছে বিএফইউজের
সংবাদ সম্মেলনে আরও অভিযোগ করা হয়, ২০১৭ সালের ২৮ নভেম্বর বিএফইউজের বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হলেও কোনো এক রহস্যজনক কারণে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। এ বিষয়ে বিএফইউজের কোষাধ্যক্ষ মধুসূদন মন্ডল অভিযোগ করে বলেন, ‘গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সঠিক সময়ে বিএফইউজের নির্বাচনের জন্য জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আন্দোলন হয়েছে। আমি কমিটিতে থাকার পরও সেই আন্দোলনে যোগ দিয়েছি। কিন্তু আমাদের কিছু নেতা ক্ষমতার লিপ্সায় অবৈধভাবে নির্বাচন পিছিয়েছেন।’
এই অভিযোগের বিষয়ে ওমর ফারুক বলেন, ‘৫৬ জনের কামিটিতে জাফর ওয়াজেদ, মধুসূদন মন্ডল ও পুলক ঘটক- এই তিনজনের সিদ্ধান্ত বড় নাকি ৫৩ জনের সিদ্ধান্ত বড়। ৫৩ জনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিএফইউজের সভাপতি ও মহাসচিব চলেছেন। ওই তিনজনের সিদ্ধান্তে চলেননি। আমাদের নতুন যে গঠনতন্ত্র হয়েছে, সেই গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আমরা চলেছি।’
‘গঠনতন্ত্র পরিপন্থী কোনো কাজ আমরা করিনি এবং ওনারা যে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন সেখানে কোনো জনসমর্থন ছিল না। আমাদের বিরুদ্ধে তারা মহাসমাবেশ করেছিল, সেখানে ১২ জন লোক উপস্থিত হয়েছিল।’
সংবাদ সম্মেলনে ওমর ফারুককে ইঙ্গিত করে আবদুল জলিল ভূঁইয়া বলেন, ‘আপনারা জানেন বিগত দিনে কে কল্যাণ ফান্ডের টাকা খরচ করে ফেলেছেন। পত্রিকায় রেড কার্ড দেয়ার নামে কে বাণিজ্য করেছেন। এটা কে করেছেন সেটা সাংবাদিকরা সবই জানেন। আমি নাম বলতে চাই না।’
আবদুল জলিল ভূঁইয়ার এমন মন্তব্যের জবাবে ওমর ফারুক বলেন, ‘গত তিন বছরে কল্যাণ তহবিল থেকে এক টাকাও তোলা হয়নি। আবদুল জলিল ভূঁইয়া কল্যাণ তহবিলের আইন নিজে আটকে রেখেছেন। যে কারণে কোনো সদস্যকে কল্যাণ তহবিল থেকে তিন বছরে একটি টাকাও দেয়া যায়নি। বিএফইউজের কল্যাণ তহবিলে যে টাকা ছিল, তার পুরাটাই আছে। আর একজনও যদি প্রমাণ দিতে পারেন রেড কার্ডের জন্য আমি ১০ টাকা খেয়েছি, তাহলে আমি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াব।’
তিনি বলেন, ‘জলিল ভূঁইয়ার কাছে এখনও বিএফইউজের তিন লাখ টাকা পাওনা রয়েছে। তিনি মহাসচিব থাকা অবস্থায় ইফতার পার্টির নামে তিন লাখ টাকা চাঁদা আনেন কিন্তু সেই টাকা বিএফইউজের ফান্ডে জমা দেননি।’
আরও পড়ুন >> ভেস্তে গেলো বিএফইউজের সব আয়োজন
‘তারা আমার জনপ্রিয়তা দেখে মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছেন। আমি সভাপতি প্রার্থী হয়েছি। দেশব্যাপী কাজ করেছি। কাজ করার কারণে মানুষ আমাকে সমর্থন দিচ্ছেন। সেই সমর্থনের জোয়ার দেখে তারা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে এখন আবোল-তাবোল বলছেন, মিথ্যা কথা বলছেন’- যোগ করেন ওমর ফারুক।
প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার (৬ জুলাই) জাতীয় প্রেস ক্লাবে বিএফইউজের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আগের দিন বৃহস্পতিবার (৫ জুলাই) সাংবাদিক খায়রুল আলম ও সেবিকা রানীর করা মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার প্রথম শ্রম আদালতের চেয়ারম্যান ড. শাজাহান নির্বাচন স্থগিতের আদেশ দেন এবং সমন জারি করেন।
সোমবার বিএফইউজে নির্বাচন কমিশনের চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেনের পক্ষে তার আইনজীবী অ্যাডভোকেট মবিনুল ইসলাম সমনের জবাব দাখিল করেন। পরে ঢাকার প্রথম শ্রম আদালতের চেয়ারম্যান ড. শাজাহানের আদালত স্থগিত আদেশ প্রত্যাহার করেন। ফলে নির্বাচন হতে আর কোনো বাধা নেই বলে জানান মবিনুল ইসলাম।
এমএএস/এমএআর/বিএ