বিশ্ব গণমাধ্যমে বাংলাদেশ
২০১৪ সালে আলোচিত বিভিন্ন ঘটনার কারনে বাংলাদেশ বছরজুড়ে বিভিন্ন সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন গণমাধ্যমের সংবাদের শিরোনাম হয়েছে। এ বছর বাংলাদেশ প্রায় ২৬৮৫ বার বিশ্বের বিভিন্ন মিডিয়ার শিরোনাম হয়েছে। সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে সিএনএন, নিউই্য়র্ক টাইমস, আল জাজিরা ও দ্যা ইকোনমিষ্ট এর মতো পৃথিবীর প্রধান গণমাধ্যমগুলোতে।
বাংলাদেশ নিয়ে ২০১৪ সালে আর্ন্তজাতিক গণমাধ্যমের নজর ছিলো গার্মেন্টস শিল্প ব্যবস্থাপনা, ওয়ারক্রাইম ট্রাইবুনাল, রোহিঙ্গা সমস্যা, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর বিচারবর্হিভূত হত্যা, বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। সরকার দলীয় লোক দ্বারা গুম-খুন-হত্যা। স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশ কখনো আর এমন ভাবে বিশ্ব গণমাধ্যমে আলোচিত হয়নি।
রোহিঙ্গা সমস্যা :
চলতি বছর মে মাসের বিশ তারিখ টাইম ম্যাগাজিন একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদক রোহিঙ্গাদের যে মানবেতর অবস্থায় দেখেছেন রিপোর্টটিতে তিনি তা তুলে ধরেন সাবলিলভাবে। নিকোল স্যাগাংগার করা রিপোর্টটিতে মিনোরা নামের এক নিপীড়িত ব্যক্তির হৃদয় বিদারক ঘটনাও তুলে ধরেন নিকোল।
নিউইয়র্ক টাইমসের রিপোর্টার ‘ডান রিভার্স টেরোরাইজড স্টারভিং’ শিরোনামে একটি মর্মস্পর্শী রিপোর্ট করে রাখাইনদের নিয়ে। এখানে উঠে আসে তাদের আবাস, স্বাস্থ্য, বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের দ্বারা কিভাবে অত্যাচারের শিকার মানুষগুলো বিতাড়িত হয়ে এখানে এসেছেন। তাদের ক্ষুধা আর দারিদ্রতার তাড়নায় অপরাধ প্রবণ হয়ে উঠার কথা। লেখাটি পাওয়া যাবে অনলাইন ভার্সনে।
পোশাক শিল্পে অস্থিরতা :
বাংলাদেশের পোশাক শ্রমিকদের উৎপাদনের মান পরিবেশ কাজের নিরাপত্তা নিয়ে বিশ্ব মিডিয়াগুলো সরব ছিল প্রায় সারা বছর। নিউইয়র্ক টাইমসের রিপোর্টার টম মার্শাল ‘বাংলাদেশ ফ্যাক্টরি সেফটি অ্যান্ড দ্য ট্রাইয়ংগল শার্টউইস্ট ফয়ার’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন করেন ৮ এপ্রিল। স্টিভেন গ্রিন এবং জুলফিকার আলী মানিক ২৫ এপ্রিল একই পত্রিকায় লিখেছেন ‘স্টেলমেন্ট ওভার গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি সেফটি ইন বাংলাদেশ’।
প্রশ্নবিদ্ধ ৫ জানুয়ারির নির্বাচন :
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের দিন আল জাজিরা রিপোর্ট করে, ‘ডেথ রিপোর্ট ইন বাংলাদেশ পোল ব্যালন্স’শিরোনামে। আলজাজিরার এই প্রতিবেদনে একশটি ভোট কেন্দ্রের সহিংসতার খবর দেয়। সাথে সাথে যে কেন্দ্রগুলোতে একজন ভোটারও আসেননি সেই কেন্দ্রগুলোর সচিত্র খবর প্রকাশ করে। ৭ জানুয়ারি আল জাজিরা আবার রিপোর্ট করে, ‘বাংলাদেশ রুলিং পার্টি উইন দ্যা ইলেকশন’।
২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি সিএনএন রিপোর্ট করে, ‘হোয়াট নেক্সট ফর বাংলাদেশ’ শিরোনামে। এখানে মূলত তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতি বাতিলের কুফল নিয়ে আলোচনা করা হয়। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড.ইমতিয়াজের মতামত নেয়া হয়। তিনি বলেন, ‘যাই হোক নির্বাচন হয়ে গেছে, এখন সামনে তাকাতে হবে’। ১৫৩ আসনের আগাম জয়ের বিষয়ে বলা হয়; ক্ষমতাসীন পার্টি এই আসন বিজয়ের পর সরকার গঠনের নিশ্চয়তা নিয়েই আজ বিস্ময়কর নির্বাচন করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ ।
এছাড়া আন্তর্জাতিক এই গণমাধ্যমগুলো সংবাদ করে বাংলাদেশে টানা ১২ ঘণ্টা বিদ্যুৎহীনতা নিয়ে, খালেদার দুর্নীতির মামলায় আপিলের খারিজ, নারী ও শিশু নির্যাতন। র্যা বের মানবাধিকার লঙ্ঘন, শাসকদলের দুর্নীতির প্রশ্রয় এবং ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল তথা টিআইবির প্রতিবেদন, স্লো রেমিটেন্স আর্নিং, গার্মেন্ট শিল্পের মন্দাভাব সমাজের অপরাধ প্রবণতা, বন্ধ মিডিয়াঃ দৈনিক আমার দেশ, চ্যানেল ওয়ান, ইসলামিক টিভি, দিগন্ত টেলিভিশন নিয়ে আলজাজিরা ইনসাইড স্টোরি রিপোর্ট করে।
বাংলাদেশ সরকারের গণমাধ্যম বিষয়ে নতুন নীতিমালার যথেষ্ট সমালোচনা করে অনেক রিপোর্ট করে, যার হেডিং ছিল ক্র্যাকডাউন আতঙ্কে বাংলাদেশের গণমাধ্যম কর্মীরা। রিপোর্টটি ছিল আল জাজিরা টিভি চ্যানেলের। তবে কোন ব্যক্তিকে নিয়ে রিপোর্ট করার ক্ষেত্রে এগিয়ে ছিল দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে নিয়ে করা ইনসাইড স্টোরিতে দীর্ঘ সময় ব্যাপী রিপোর্টটি। পুরাতন রিপোর্টটি শুধু চলতি বছরেই ইয়ার রিক্যাপ দেখায় আটবার ।
উপরে উল্লেখ করা সব ঘটনাকে ছাপিয়ে যায় বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবুনাল। এই ওয়ারক্রাইম ট্রাইব্যুনাল ছিল মুহূর্তে মুহূর্তে আতঙ্ক আর চমকে ভরা। গণমাধ্যমগুলো দেখলেই বুঝা যায়, এ বিষয়ে তাদের চুলচেরা বিশ্লেষণ ছিল। বাংলাদেশের প্রতি তাদের নজরও ছিল তীক্ষ্ণ।
ওয়ার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালে সাঈদী :
নিউইয়র্ক টাইমস ১৫ মে ‘আনসলভড এট্রোসিটিস ইন বাংলাদেশ : রিয়েল ফ্যাক্টর অব ওয়ার ক্রাইম’ নামে রিপোর্টটি আলজাজিরা ইনসাইড স্টোরি থেকে নেয়া। উপস্থাপক ছিলেন জেন ডুট্টন তার সাথে ফোনে যোগ দেন প্রখ্যাত সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান, আন্তর্জাতিক আপরাধ বিশেষজ্ঞ আইনজীবী টবি কিডম্যান, মুক্তিযুদ্ধ সংগ্রাহক মফিদুল হক। রিপোর্টটি সারা দুনিয়াকে নাড়িয়ে দেয়।
২৪ জুন আলজাজিরা আরেকটি প্রতিবেদন করে যার শিরোনাম ছিল ‘বাংলাদেশ কোর্ট টু রুল অন জামায়াত লিডার’ এখানে মাওলানা নিজামীর মামলার সঙ্গতি অসঙ্গতি তুলে ধরা ছাড়াও প্রতিবেদক গুরত্ব দিয়ে তুলে আনেন মাওলানা সাঈদীর রায়ের পর যে প্রায় দুই শত মানুষ নিহত ও সহস্রাধিক আহত হবার কথা।
এখানে সাঈদীকে ধর্মীয় নেতা হিসেবে উল্লেখ না করে বলা হয়, ফেমাস লিডার মটিভেশনাল স্পিকার। দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে নিয়ে রিপোর্ট করে পৃথিবীর সব বিখ্যাত গণমাধ্যম। পুরাতন চ্যানেল হিসেবে পরিচিত বিবিসি বাংলাদেশ নিয়ে যে প্রতিবেনটি করেছে তা নিতান্তই সাধারণ মানের বলা যায়। জানুয়ারির ১৩ তারিখ বিবিসি যে প্রতিবেদন করে তাতে সবার জীবন বৃত্তান্ত প্রকাশ করে এবং অভিযুক্তদের অপরাধী হিসেবে সাব্যস্ত করে। অথচ তখনও তা সবার ক্ষেত্রে প্রমাণিত হয়নি।
ব্রিটিশ সাময়িকী ইকোনোমিস্ট ২৬ নভেম্বর ‘পলিটিকস অ্যান্ড দ্য ফাস্ট ইন বাংলাদেশ. এ সিরিজ ট্রায়াল এ্যাজ ওয়ার ক্রাইম’ শিরেনামে রিপোর্ট করে। এখানে ট্রাইব্যুনালের ব্যাপারে বলা হয়, বাংলাদেশের শাসক দলের ইচ্ছার আলোকেই চলে এই ট্রাইব্যুনাল। এখানে স্কাইপ আলোচনার কিছু বিবরণ তুলে ধরা হয়।