ব্যক্তিস্বার্থে কেউ কেউ গণমাধ্যমকে ব্যবহার করেন : শাহরিয়ার আলম
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেছেন, ব্যক্তিস্বার্থে মালিকদের কেউ কেউ গণমাধ্যমকে ব্যবহার করেন। আমাকেও অনেকে ইনফ্লুয়েন্স করার চেষ্টা করে বলেছে, আপনি রাজনীতি করেন, একটি নিউজ চ্যানেল খোলেন। কিন্তু আমি সেটি করিনি। আমি শিশুদের মেধা মননের বিকাশের জন্য একটি চ্যানেলের অনুমতি পেয়েছি। সেটাও কোনো রকমের তদবির ছাড়া।
বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে রাজশাহী বিভাগ সাংবাদিক সমিতি, ঢাকার (আরডিজেএডি) অভিষেক ও পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, রাজনীতিবিদদের অনলাইন পত্রিকা করার অসুস্থ প্রতিযোগিতা রাজনীতির জন্য খারাপ।
তিনি বলেন, স্থানীয়ভাবে দেখি যে সবারই একটা করে পত্রিকা আছে। খোঁজ নিয়ে দেখবেন বাংলাদেশের রাজনীতিবিদদের প্রায় সবারই একটা করে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে পত্রিকা আছে। অন্ততপক্ষে অনলাইন আছে। কারণ এটা করতে বেশি কিছু লাগে না। অমুক তমুককে বলে করা যায়। আমার মনে হয় এটা অসুস্থ প্রতিযোগিতা। এটা রাজনীতির জন্য যেমন খারাপ তেমনি সাংবাদিকতার জন্যও খারাপ। ধরে নিলাম রাজনীতিবাদরা বুঝতে পারছে না যে এটা খারাপ। সাংবাদিকরা যদি বুঝে থাকে তাহলে তাদেরই উচিত এটা থেকে বিরত থাকা। কারণ ওখানে আপনার চাকরি, ইনক্রিমেন্ট, বেতন নির্ভর করছে; সেখানে যে প্রতিদ্বন্দ্বী কয়েকজন রাজনীতিবিদ আছে তার ওপর। আপনি যদি শুধু আপনার নিয়োগকর্তার স্বার্থের কথাই বলেন আর বাকি সবার সমালোচনা করেন তাহলে আপনার চাকরি আর বেতন নিরাপদ থাকবে। এটা কোনো পেশার মানদণ্ড হতে পারে না।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, যে কথাগুলো আমরা আজ থেকে ১০ বছর আগেও ভাবতাম না, সেগুলো কিন্তু এখন প্রতিনিয়ত দরজায় কড়া নাড়ছে। আমরা দেখছি বেশকিছু মিডিয়া হাউজ সাংবাদিকদের বেতন সময়মতো দিতে পারছে না। একটি রাষ্ট্র যখন নিম্নআয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয় এবং উন্নত দেশ হওয়ার পথে এগিয়ে যায় সে দেশে শুধু রফতানিমুখী পণ্যের বাজারের কর্মপরিবেশ আইএলওর মানদণ্ডে হবে তা কিন্তু নয়। সাংবাদিকতার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মী ভাইবোনদের জন্য একই মানদণ্ড থাকতে হবে। বাংলাদেশে সব শ্রমজীবী মানুষকে এসব মানদণ্ডের ভেতরে নিয়ে আসতে হবে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, আমরা দেখেছি মিডিয়াকে যার যার নিজস্ব ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে ব্যবহার করা হয়।
বাংলাদেশের মিডিয়া বিশ্বের যেকোনো দেশের চেয়ে বেশি স্বাধীন দাবি করে শাহরিয়ার আলম বলেন, অনেকেই মনে করেন এসব বিষয়ে কথা বলা মানে মত প্রকাশে হস্তক্ষেপ করা। এটি যারা বলেন তারা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বলেন। আমাদেরও যখন অতীতে বিদেশের দু-একটি জায়গা থেকে বলা হয়েছে, আমরা কিন্তু চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছি যে না আপনাদের চেয়েও আমাদের দেশের মিডিয়া অনেক বেশি স্বাধীন। যেভাবে সরকারের সমালোচনা করা হয় সে জায়গায় কোনো দেশের কেউ বলতে পারবে না বাংলাদেশের মিডিয়ায় সরকারের হস্তক্ষেপ আছে।
পরিবেশ বিপর্যয় উত্তরবঙ্গ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে দাবি করে তিনি বলেন, উত্তরবঙ্গের একটি আলাদা চরিত্র আছে। পরিবেশ বিপর্যয়ে উত্তরবঙ্গ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমি কয়েক দিন ধরে ফেসবুকে একটি সেনসেটিভ ইনফরমেশন দিচ্ছি। পরিবেশ মন্ত্রণালয় বাংলাদেশের সব শহর এবং ঢাকার তিনটি শহরতলি - নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুরের বাতাসের মান কেমন এটা সরকার পরিবেশ অধিদফতরকে দায়িত্ব দিয়েছে বিদেশি একটি সংস্থার সহায়তায় প্রতিদিন একটি রেটিং বের করার। কয়েক দিন আগে আমরা দিল্লিতে দেখলাম আমাদের ছেলেরা প্র্যাকটিস করতে পারছে না মুখে মাস্ক পরেছে। সেখানে অক্সিজেন বার খোলা হয়েছে টাকার বিনিময়ে। সেই দিল্লির এবং সমকক্ষ বেইজিংয়ের থেকে ঢাকার গড় মাত্রা ৫০ পয়েন্ট বেশি। গত ১০ দিনে আমি রাজশাহী রংপুরের মাত্রা দেখেছি ১৫০-২০০ এর কাছাকাছি, যা দিল্লির থেকেও বেশি। আমরা কিন্তু এই জিনিসগুলো আমলে নিচ্ছি না। শুধু কারখানার বর্জ্য, নদীদূষণ এগুলো নিয়ে নয়, সামগ্রিকভাবে পরিবেশ নিয়ে গুরুত্ব সহকারে কাজ করা দরকার বলে জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি খায়রুজ্জামান কামাল। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন।
অনুষ্ঠানে সংগঠনের সদস্যদের জন্য ফ্রি ব্লাড গ্রুপিং ও ডায়াবেটিস পরীক্ষার ব্যবস্থা করে সামাজিক সংগঠন উৎসর্গ ফাউন্ডেশন।
জেপি/এনএফ/জেআইএম