নবম ওয়েজ বোর্ড : নোয়াবের বিবৃতিতে সাংবাদিক সমাজ উদ্বিগ্ন
নবম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ড নিয়ে সংবাদপত্র মালিকদের সংগঠন নোয়াবের বিবৃতি সাংবাদিক সমাজ মর্মাহত হয়েছে জানিয়ে তা প্রত্যাখ্যান করেছে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)।
মঙ্গলবার এক যুক্ত বিবৃতিতে বিএফইউজে সভাপতি মোল্লা জালাল, মহাসচিব শাবান মাহমুদ এবং ডিইউজের সভাপতি আবু জাফর সূর্য ও সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুবী এই মত প্রকাশ করেন।
নোয়াবের বক্তব্য মালিক ও গণমাধ্যমকর্মীদের মধ্যে বৈরী সম্পর্ক সৃষ্টি করার পাশাপাশি বিবৃতির যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে সা্ংবাদিকদের দুই সংগঠন।
বিবৃতিতে বলা হয়, গত ১৩ জুন দেশের বিভিন্ন জাতীয় সংবাদপত্রে প্রকাশিত নিউজ পেপার ওনারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (নোয়াব) নবম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ড নিয়ে সুপারিশ সাংবাদিক সমাজকে দারুণভাবে মর্মাহত ও উদ্বিগ্ন করেছে। সহকর্মী ও সহযোগীদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে মালিকপক্ষের এ ধরনের ধারণা পোষণ করে দেওয়া বিবৃতি বিএফইউজে-বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) কাছে অগ্রহণযোগ্য, অবাস্তব, প্রকৃত ঘটনাকে আড়াল করার অপপ্রয়াস ও নৈতিকতা বিবর্জিত বলে বিবেচিত হয়েছে।
বিবৃতিতে সাংবাদিক নেতারা বলেন, মালিকপক্ষের প্রতিষ্ঠানকে নিজের প্রতিষ্ঠান মনে করে সবসময় কাজ করে থাকেন সাংবাদিক-শ্রমিক-কর্মচারীরা। সেখানে নবম মজুরি বোর্ড ঘোষণার চূড়ান্ত সময়ে গণমাধ্যমকর্মীদের রুটি-রুজি ও মর্যাদার জায়গাটিকে মালিকপক্ষ যেভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে, তা সংবাদপত্র শিল্পের জন্য নতুন সঙ্কট তৈরি করবে। মালিকের সঙ্গে শ্রমিক তথা গণমাধ্যমকর্মীদের দূরত্ব ও বৈরী সম্পর্ক সৃষ্টি করবে। যার প্রভাব পুরো শিল্পকেই ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
নোয়াবের এই বিবৃতি গণমাধ্যমকর্মীদের বঞ্চিত করে সংবাদপত্র মালিকদের অধিক সুবিধা লাভের আশায়, উল্লেখ করে বিএফইউজে ও ডিইউজে নেতারা বলেন, সংবাদপত্রকে শিল্প হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার পর নোয়াবের সদস্যরা শিল্প মালিক হিসেবে সরকারের কাছ থেকে কি কি সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করেছেন তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।
গণমাধ্যমকর্মী আর সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের চাকরির ধরণ এক রকম নয় দাবি করে তারা বলেন, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সপ্তাহে দুইদিন ছুটি থাকলেও গণমাধ্যমকর্মীরা তা পান না। এমনকি সংবাদপত্রের জন্য নির্ধারিত ছুটির দিনেও তাদেরকে দায়িত্ব পালন করতে হয়। বিনিময়ে প্রাপ্য তেমন নেই বললেই চলে। সাংবাদিকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করলেও তাদের সমস্যা-সঙ্কটে ন্যায্য পাওনাটুকু থেকেও বঞ্চিত হন। অসংখ্য সংবাদপত্রে নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র, বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট, গ্রুপ ইন্স্যুরেন্সসহ শ্রম আইন ও মজুরি বোর্ড অনুযায়ী অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে না।
বিএফইউজে ও ডিইউজে নেতারা বলেন, একজন সাংবাদিককে নানাভাবে প্রশিক্ষিত এবং বহুমুখী দায়িত্ব পালন করতে হয়। সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতা অন্য কোনো শিল্প ও পেশার মতো নয়। সেটা মালিকরা নিজেরাও জানেন। যে কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠান রুগ্ন হয় তার অব্যবস্থাপনা, অদক্ষতা এবং স্বেচ্ছাচারিতার কারণে। এর দায়-দায়িত্ব সরকার বা সংশ্লিষ্ট শ্রমিক-কর্মচারী নয়, পরিচালকদের উপরই বর্তায়। সেটি আমলে না নিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের বেতন-ভাতা ও সুবিধাদি নিয়ে প্রশ্ন তোলা গর্হিত কাজ। মনে রাখতে হবে সাংবাদিক-শ্রমিক-কর্মচারীরা বিপণন কর্মী নন। সুতরাং কোনো প্রতিষ্ঠানের লাভ লোকসানের সঙ্গে গণমাধ্যমকর্মী তথা সাংবাদিক-শ্রমিক-কর্মচারীদের কোনো সম্পর্ক নেই।
সংবাদপত্র শিল্পের উৎকর্ষ ও সাংবাদিক শ্রমিক-কর্মচারীদের যথাযথ কল্যাণে নোয়াব বা মালিকপক্ষ সরকারের কাছ থেকে আরো সুযোগ-সুবিধা পেলে বিএফইউজে ও ডিইউজের কোনো আপত্তি নেই। তবে মজুরি বোর্ড ঘোষণার সূত্র ধরে সাংবাদিক-শ্রমিক-কর্মচারী ছাঁটাই করা হলে বা তাদেরকে ন্যায্য সুবিধা বঞ্চিতকরা হলে অবশ্যই তা মেনে নেওয়া হবে না। প্রয়োজনে গণমাধ্যমকর্মী তথা সাংবাদিক-শ্রমিক-কর্মচারীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবে বলেও নেতারা হুঁশিয়ার করেন।
এমইউ/জেএইচ/এমএস