ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধন না হলে কঠোর আন্দোলন
জাতীয় সংসদে পাস হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিভিন্ন ধারা স্বাধীন সাংবাদিকতাকে বাধাগ্রস্ত করবে দাবি করে সাংবাদিক নেতারা জানিয়েছেন, আইনটি সংশোধন না হলে তারা কঠোর আন্দোলনে যাবেন।
রোববার সচিবালয়ে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু; ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এবং প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠকে সাংবাদিক নেতারা এ কথা জানান।
বৈঠকে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে), ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে), ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) নেতারা অংশ নেন।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে সাংবাদিক নেতাদের আপত্তি আগামী বা এর পরের মন্ত্রিসভা বৈঠকে আলোচনার জন্য উঠছে বলে জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী।
বৈঠকের পর বিএফইউজের সভাপতি মোল্লা জালাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা পরিষ্কার বলেছি যেহেতু আইনটি পাস হয়েছে। এই আইন নিয়ে পেশাদার সাংবাদিকরা কোনো কোনো কারণে শঙ্কিত, সম্পাদক পরিষদ কোনো কোনো কারণে শঙ্কিত। দুই ধরনের বিষয় আছে। আমরা শুধু মাত্র পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিকরা যাতে কোনো প্রতিবন্ধকতার শিকার না হয় সেই জায়গায় নিশ্চয়তা চাচ্ছি। এর বাইরে আমাদের অন্য কোনো ডিমান্ড নেই।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বলেছি আমাদের ওই জায়গা যদি নিশ্চিত না হয় তবে আমরা কঠোর থেকে কঠোরতর আন্দোলন করবো, অবস্থান গ্রহণ করবো।’
আইনের কোন কোন ধারায় আপনাদের আপত্তি- জানতে চাইলে মোল্লা জালাল বলেন, ‘আইনের ধারা উপধারা ব্যাখ্যা করে নয়। যারা আইনটি প্রণয়ন করেছেন তাদের বলেছি আপনারাই খুঁজে খুজে বের করুন, আমাদের সেন্টিমেন্টটা হচ্ছে এই। আমাদের সেন্টিমেন্টের আমাদের অবস্থানের বিপক্ষে আপনারা যা কিছু লিখেছেন সেটা সংশোধন করেন।’
ডিআরইউ’র সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, বলেন ‘ডিজিটাল নিরপত্তা আইনের কিছু কিছু ধারা আছে যেটা সত্যিকার অর্থে গণমাধ্যম ও গণমাধ্যম কর্মী হিসেবে সাংবাদিকদের জন্য আতঙ্কের ও উদ্বেগের। আমরা সেটি বিবৃতিতে বলেছিলাম, আজকে সেটা আনুষ্ঠানিকভাবে বৈঠকে বলেছি। কোথায় কোথায় আপত্তি, সেই আপত্তিগুলো কীভাবে দূর করা যায় সেটির একটি সুনির্দিষ্ট একটি সুপারিশও আমরা দিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সার্বিকভাবে এই আইনের বিরোধিতা করছি না। আমরা চাই এই আইন দ্বারা যাতে গণমাধ্যম এবং সংবাদকর্মীরা কোনোভাবেই প্রতিবন্ধকতার শিকার না হন। সেজন্য আমরা বলেছি সাংবাদিকদের একটি সুরক্ষা দিতে হবে।’
‘এই আইনের অধীনে যদি কোনো সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল অপরাধের অভিযোগ উত্থাপিত হয়, সেই অভিযোগের ফৌজদারি অপরাধের বিচারের আগে একটি কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সেটি প্রেস কাউন্সিল হতে পারে, সম্প্রচার কমিশন হতে পারে- অনুমোদনের পরেই যাতে অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়। এটাই হচ্ছে আমাদের সুরক্ষার প্রধান বক্তব্য’ বলেন ডিআরইউ সভাপতি।
তথ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে সন্তুষ্ট কি না- জানতে চাইলে সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘তার (তথ্যমন্ত্রীর) তিন সহকর্মী ছিলেন, তিনি বলেছেন মন্ত্রিসভা বৈঠকে (আপত্তিগুলো) তুলবেন, সেটি আমরা দেখতে চাই। আর যদি এটি এই প্রক্রিয়াগুলোর মধ্য দিয়ে না হয়, তবে আমরা আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য যে কর্মসূচি রয়েছে, সেগুলো আগামীতে পালন করবো।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ৩২ ও ৪৩ ধারা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছি। ৪৩ ধারা হলো আমাদের প্রাইম কনসার্ন। সেটাতে বলা হয়েছে পুলিশের একজন কর্মকর্তা সন্দেহ হলে ডিজিটাল ডিভাইস জব্দ করতে পারবে। আমাকে আটক করতে পারবে।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সংসদে পাস হওয়ার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে বৈঠকে একটি পর্যালোচনা হয়েছে। সেখানে আমরাই সাংবাদিক বন্ধুদের ও নেতৃবৃন্দকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম এ ব্যাপারে তাদের পরামর্শ গ্রহণ ও মতামত দেয়ার জন্য। মতামতে তারা কিছু কিছু ধারার বিষয়ে উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছেন, আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন- গণমাধ্যম ও গণমাধ্যমের কর্মীরা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। তাদের কাজের ক্ষেত্রের উপর হস্তক্ষেপ হতে পারে। সেই বিষয়গুলো আমরা ধৈর্য সহকারে শুনেছি।’
হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘যেহেতু আইনটি পাস হয়েছে, আমরা পুরো বিষয়টিকে; পরামর্শ উৎকণ্ঠা আশঙ্কাগুলো আমরা লিপিবদ্ধ করেছি। আগামী বা এর পরের মন্ত্রিসভা বৈঠকে আমরা নিয়ে যাব। মন্ত্রিসভার দিক-নির্দেশনার ভিত্তিতে পরবর্তী আলোচনার সূত্রপাত করব আমরা। সুতরাং আলোচনাটা অব্যাহত আছে।’
‘আমরা এখনও মনে করি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন যেটা তৈরি করা হয়েছে, ডিজিটাল যন্ত্রপাতি দিয়ে যারা ডিজিটাল অপরাধ করছে তাদের মোকাবেলা করার জন্য। গণমাধ্যম বা গণমাধ্যমের কর্মীদের বিরুদ্ধে আইনটি করা হয়নি’ বলেন জাসদ একাংশের সভাপতি ইনু।
তিনি বলেন, ‘তারপরও যদি আইনে গণমাধ্যম কর্মীদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে তবে সেই বিষয়টি দেখা জরুরি। কারণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেন। গণমাধ্যমের সুরক্ষায় বিশ্বাস করেন। একই সঙ্গে ডিজিটাল অপরধীদের মোকাবেলা করে নিরাপদ ডিজিটাল সমাজ তৈরি করতে উনি দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এই দুটোর অঙ্গীকারকে মাথায় রেখে আমরা গণমাধ্যমের সুরক্ষার বিষয়টি আবার নতুন করে পর্যালোচনা করব।’
বৈঠকে বিএফইউজের মহাসচিব শাবান মাহমুদ, ডিইউজের সভাপতি আবু জাফর সূর্য ও সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী, ডিআরইউ’র কার্যনির্বাহী কমিটির অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
আরএমএম/এসএইচএস/জেআইএম