ডিজিটাল আইন নিয়ে যা বললেন সাংবাদিক নেতারা
প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮ এর ৮ ধারা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন দেশের প্রথিতযশা জেষ্ঠ্য সাংবাদিক নেতারা। এই আইনের আওতায় যেসব ধারায় সাংবাদিকতা বাধাপ্রাপ্ত হয় সেগুলো দূর করার দাবি জানিয়েছেন তারা।
মঙ্গলবার জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ২৪তম বৈঠকে এ দাবি জানান। বৈঠকে সংসদে উত্থাপিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮ নিয়ে আলোচনা হয়। বিতর্কিত এই আইনের ৩২ ধারা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে।
সাংবাদিক বা যে কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য কাঠামোতে বার বার অনুপ্রবেশ করলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৫ কোটি টাকা অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। এজন্য অ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্স, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও সম্পাদক পরিষদের সঙ্গে বৈঠক করে কমিটি। বৈঠকে সম্পাদক পরিষদ একটি লিখিত প্রস্তাবও দেয়।
বৈঠক শেষে সম্পাদক পরিষদের সভাপতি ও সমকালের সম্পাদক গোলাম সারওয়ার বৈঠক অত্যন্ত ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে জানিয়ে বলেন, আমরা ডিজিটাল আইন নিয়ে কনসার্ন ব্যক্ত করেছি। এই আইনের সে সমস্ত ধারায় সাংবাদিকার অবাধ বিচরণের ক্ষেত্রে বাধা আছে সেসব দূর করতে। মন্ত্রী এসব গুরুত্ব দিয়ে শুনেছেন। এটি অবশ্যই দূর করতে হবে নতুবা আমরা সাংবাদিকরা বাধাগ্রস্ত হব।
এই আইন চূড়ান্ত হওয়ার আগে আরেকবার বসা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা নিশ্চিত হতে চাই সেখানে যেন কোনো বিতর্কিত ধারা না থাকে। বৈঠকে ৮টি ধারা নিয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম বলেন, যে সমস্ত ধারাতে বিন্দুমাত্র স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রতিরোধক কিছু থাকে সমস্ত ধারাই আমরা তুলে ধরেছি।
তিনি বলেন, আমাদের সাংবাদিকদের যে ধরনের দুচিন্তা ছিল সে ব্যাপারে উনারা খুবই সহানুভূতিশীলভাবে গ্রহণ করছেন। আমরা আশা করছি আইনের কতগুলো আমূল পরিবর্তন আসবে। আইনমন্ত্রী আমাদের বলেছেন, এটি ফাইনাল ফর্মে দেয়ার পর আমাদের সঙ্গে আরেকবার বসবেন। এটি অত্যন্ত ইতোবাচক প্রস্তাব।
তিনি বলেন, এই ডিজিটাল আইন নিয়ে আমরা যে দুচিন্তায় ছিলাম সেগুলো ভালোভাবে তুলে ধরতে পেরেছি। বিএফইউজের সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল বলেন, এই প্রস্তাবিত আইন নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উদ্বেগগুলো বৈঠকে তুলে ধরেছি। আমরা বলেছি যাতে এমন কোনো আইন না হয় যেন সাধারণ মানুষের মতো প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব হয়। এমন কোনো ধারা যাতে না থাকে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সংকুচিত হয়।
তিনি বলেন, এই আইনে এমন ধারা থাকা উচিত সাংবাদিকদের বিচারের ক্ষেত্রে যাতে প্রেস কাউন্সিলের নজরে আনা হয়। প্রেস কাউন্সিলই সিদ্ধান্ত নেবে তারা সাংবাদিকতা করেছে না অপসাংবাদিকতা করেছে।
বিশেষ আমন্ত্রণে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার বলেন, আমাদের বৈঠক অত্যন্ত ফলপ্রসূ হয়েছে। সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে যে কয়টি ধারা সম্পর্কে বলা হয়েছে সেগুলোর সঙ্গে আমাদেরও একই মত। একটা কথা স্পষ্ট করতে চাই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮ ডিজিটাল অপরাধ দমন করার জন্য, সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে কোনো প্রতিবন্ধকতা তৈরি অথবা স্বাধীনতা খর্ব করা বা সংবিধানের কোনো ধারাকে লঙ্ঘন করার কোনো ইচ্ছা নিয়ে এই আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে না।
প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কয়েকটি বিতর্কিত ধারা সম্পর্কে আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল হক বলেন, সাংবাদিকতা ব্যাহত করা আমাদের উদ্দেশ্য না। সাংবাদিকদের টার্গেট করে কোনো আইন করাও আমাদের উদ্দেশ্য না। সংবিধানে বাক স্বাধীনতার কথা বলা আছে। সংবিধানের উল্লেখ্যযোগ্য দিক প্রেসের স্বাধীনতার কথাও বলা আছে। তাই সংবিধানের বিপরীতে বা সাংঘর্ষিক কোনো আইন করতেই পারি না।
এছাড়া অ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্স এর প্রেসিডেন্ট সালমান এফ রহমান, ভাইস প্রেসিডেন্ট মোজাম্মেল হক বাবু, সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন।
কমিটির সভাপতি ইমরান আহমদের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, শওকত হাচানুর রহমান (রিমন), কাজী ফিরোজ রশীদ, হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া এবং বিশেষ আমন্ত্রণে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার এবং আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বৈঠকে অংশ নেন।
এইচএস/এমআরএম/এমএস