শাহানাজ শিউলীর গল্প: ঠিকানাহীন পথ
‘মাগো’ বলে চিৎকার করে মাটিতে বসে পড়লো ফারিয়া।
আজ সকালে ফারিয়া একটু অন্যরকম সেজেছিল। ফিরোজা রঙের শাড়ির সাথে ব্লাউজ, পেটিকোট, জুতা ম্যাচিং করে পরেছিল। ঠোঁটে মেজেন্ডা কালারের লিপিস্টিক। কপালে ফিরোজা রঙের টিপ, খোপায় ছিল লাল গোলাপ। সারা শরীরে মিষ্টি পারফিউমের সুগন্ধি। ছোট ছোট সিল্কি চুলগুলো ঝালমল করছিল কাঁধের ওপর। কী অপূর্বই না লাগছিল ফারিয়াকে।
ফারিয়া আজ সাজ্জাদকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিল। তাই অফিস থেকে একটু আগে ছুটি নিয়ে বাজারে গেল। সাজ্জাদের জন্য ফিরোজা কালারের একটা পাঞ্জাবি এবং সোনালি কালারের একটা হাতঘড়ি ও একটা ফুলের তোড়া কিনলো। ভেবেছিল সাজ্জাদকে নিয়ে আজ রেস্টুরেন্টে খাবে। তাই বাড়িতে কোনো রান্না করলো না।
ভালোবেসে বিয়ে করেছিল সাজ্জাদকে। আজ ওদের তৃতীয় বিবাহবার্ষিকী। যদিও এ নিয়ে সাজ্জাদের কোনো মাথা ব্যথা নেই। বিয়ের মাত্র তিন বছরে সাজ্জাদের এত পরিবর্তন ফারিয়াকে রীতিমতো ভাবিয়ে তোলে। মুক্তমনের সাজ্জাদকে এখন বড্ড অচেনা মনে হয়। তবুও নিজের পক্ষ থেকে এতটুকু ঘাটতি রাখেনি। সংসারের যাবতীয় কাজ এবং চাকরি নিজের হাতেই সামলায়।
ফারিয়া মিষ্টি একটা হাসিতে ফুলের তোড়া এগিয়ে দিয়ে বললো, ‘হ্যাপি অ্যানিভার্সারি’। হাতটা ধরে ঘড়িটা পরাতে গেলে হাতটা টান দিয়ে নিজের কাছে নিলো সাজ্জাদ। ফারিয়া বললো, ‘ঘড়িটা কি তোমার পছন্দ হয়নি? এই দেখো, আমার শাড়ির সাথে ম্যাচিং করে তোমার জন্য পাঞ্জাবি কিনেছি। তাড়াতাড়ি পরে নাও।’ সাজ্জাদ সেদিকে তাকিয়েও দেখলো না।
সাজ্জাদকে আজকাল বড় অচেনা মনে হয়। কথায় কথায় ঝগড়া করে। ফারিয়া একটু সাজুগুজু করলে সাজ্জাদের চোখে রক্ত উঠে যায়। চাকরি করা একদমই সহ্য করতে পারে না। অথচ বিয়ের আগে এক উন্মুক্ত আকাশের স্বপ্ন দেখাতো। স্বাধীনতার কথা বলতো। মুক্তমনের মানুষ ভেবেই সাজ্জাদের প্রেমে পড়েছিল ফারিয়া। অথচ সেই সাজ্জাদ আর এই সাজ্জাদের মধ্যে এখন আকাশ-পাতাল পার্থক্য।
তাহলে কি ফারিয়া ভুল লোককে ভালোবেসেছিল? ভাবতে থাকে ফারিয়া। আবার সাজ্জাদকে বলে, ‘কী হলো? তৈরি হয়ে নাও। আমরা রেস্টুরেন্টে খেতে যাবো।’
সাজ্জাদ কোনো উত্তর দিলো না। চোখ দুটি গোল গোল করে আপাদমস্তক একবার দেখলো। ফারিয়ার সাজসজ্জা দেখে চোখ আরও রক্তাক্ত হয়ে উঠলো। ভয়ংকর চেহারা নিয়ে ফারিয়ার দিকে আস্তে আস্তে এগিয়ে আসতে লাগলো। ফারিয়া ভয়ে তোতলাতে তোতলাতে বললো, ‘কী হয়েছে তোমার? তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন? আমার কি কোনো অপরাধ হয়েছে?’
কোনো জবাব না দিয়ে সাজ্জাদ ফারিয়ার হাত থেকে পাঞ্জাবি ও ঘড়িটা কেড়ে নিয়ে মাটিতে ফেলে দিলো। ফারিয়া ঠেকাতে গেলে গায়ের সব শক্তি দিয়ে একটা ঘুষি মারলো। ঘুষিটি ফারিয়ার চোখে লাগলো। চোখ দিয়ে দরদর করে রক্ত ঝরতে লাগলো।
ফারিয়া আর কিছুই দেখতে পেল না। এক নিকষ আঁধার চোখ দুটোর সাথে জীবনটাকেও ঢেকে দিলো। সাজ্জাদ শুধু ফারিয়াকে এতটুকুই বললো, ‘আমি যেন এসে তোমাকে না দেখি।’
ফারিয়া জানে না এখন সে কোথায় যাবে? কোথায় থাকবে? মা-বাবার কাছে কোন মুখ নিয়ে ফিরে যাবে? তাদের অমতেই বিয়ে করেছিল। তাছাড়া সে যাবে কী করে? চোখে তো কিছুই দেখতে পাচ্ছে না।
কোনো কিছুতেই ভ্রূক্ষেপ না করে দ্রুত প্রস্থান করলো সাজ্জাদ।
এসইউ/জিকেএস