দায় থেকেও লেখককে লিখতে হয়: খসরু পারভেজ
আশির দশকের অন্যতম প্রধান কবি খসরু পারভেজ। তাঁর সময়ে তিনি স্বতন্ত্র ও নিজস্বতায় অন্যন্য। অসত্য, অসার, অপ্রেম, অমানবিকতার বিরুদ্ধে কবিতায় তিনি সোচ্চার। খসরু পারভেজের জন্ম ১৯৬২ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি যশোর জেলার শেখপুরা গ্রামে। পিতা মৃত খন্দকার মকবুল আহমেদ। মাতা মৃত লুৎফুন্নেছা লতা। বাংলা ভাষা-সাহিত্যে পড়াশোনা করেছেন। একসময় সংবাদপত্রের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। দেশের বৃহত্তম রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকের চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের পর বর্তমানে প্রকাশনা সংস্থার সঙ্গে সম্পৃক্ত। প্রতিষ্ঠা করেছেন মধুসূদন স্মারক সংস্থা ‘মধুসূদন একাডেমী’ ও কবি সংগঠন ‘পোয়েট ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ’।
কবিতা চর্চার পাশাপাশি গান লেখেন। গদ্যচর্চা ও গবেষণাধর্মী কাজে নিবেদিত। মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তকে নিয়ে গবেষণাকর্মে বিশেষ কৃতিত্ব অর্জন করেছেন। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ: পালক খসা বলাকার আর্তনাদ (১৯৮৩), নিহত বিভীষিকা নিরুদ্দেশে (১৯৮৬), মুক্তিযুদ্ধে কুকুরগুলো (১৯৯৪), ভালোবাসা এসো ভূগোলময় (১৯৯৭), পুড়ে যায় রৌদ্রগ্রাম (১৯৯৯, কলকাতা), ধর্ষণমঙ্গল কাব্য (২০০১), রূপের লিরিক (২০০৫), প্রেমের কবিতা (২০০৫), জেগে ওঠো প্রত্নবেলা (২০০৭), জিন্নাহর টুপি (২০১৮), হৃদপুরাণ (২০১৯), খসরু পারভেজের নির্বাচিত কবিতা (২০১৯, কলকাতা), যশোর রোডে দাঁড়িয়ে (২০২১), সুবর্ণগ্রামে লকডাউন (২০২১), সক্রেটিসের সাথে (২০২২), কুড়িয়ে পাওয়া কবিতা (২০২৩), শ্রেষ্ঠ কবিতা (২০২৩), হিন্দুবাদী কবিতা অথবা একবিংশ শতকের প্রার্থনা (২০২৩), আমার হাইকু (২০২৪), যশোরের যীশু (২০২৪)।
গদ্য ও গবেষণা গ্রন্থ: মাইকেল পরিচিতি (১৯৯৫), কবিতার ছন্দ (২০০২), আমাদের শিল্পী এস এম সুলতান (২০০২), সাধিতে মনের সাধ (২০০৫), আমাদের বাউল কবি লালন শাহ (২০০৯), মাইকেল মধুসূদন দত্ত (২০১০), এস এম সুলতান (২০১১), মধুসূদন: বিচিত্র অনুষঙ্গ (২০১৩), মধুসূদনচর্চা: নির্বাচিত প্রবন্ধ (২০২৪), আমার রবীন্দ্রনাথ: ভ্রান্তির ছলনে (২০২৪)। অনুবাদগ্রন্থ: মধুসূদনের চিঠি (২০০৭)। তাঁর সম্পাদনাগ্রন্থ: সাগরদাঁড়ী ও মধুসূদন (১৯৮৩), মুখোমুখি সুলতান (২০০৫), ফুটি যেন স্মৃতিজলে (মধুমেলা স্মারক গ্রন্থ ২০০৬), মধুসূদন: কবি ও কবিতা (২০০৯), মধুসূদন: নিবেদিত পঙক্তিমালা (২০১৫), আরো এক বিপন্ন বিস্ময় (২০২১), বাঙালির বিস্ময়: মেঘনাদবধ কাব্য (২০২২)। এছাড়া সম্পাদনা করেছেন দুই ডজনের বেশি মধুসূদন বিষয়ক সাময়িকী ও স্মরণিকা। মধুসূদন স্মরণ বার্ষিকী ‘মধুকর’ সম্পাদনার সঙ্গে যুক্ত। ছোটকাগজ ‘অববাহিকা’ ও ‘ভাঁটফুল’র সম্পাদক তিনি।
কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত বিষয়ে গবেষণামূলক গ্রন্থ রচনায় কৃতিত্বের জন্য তৎকালীন অর্থমূল্যে বাংলাদেশের শীর্ষ পুরস্কার ‘আইএফআইসি ব্যাংক সাহিত্য পুরস্কার-২০১৩’ ও ‘মহাকবি মধুসূদন পদক-২০১৪’ অর্জন করেছেন। গান রচনায় সাফল্যের জন্য পেয়েছেন ‘মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান পদক-২০০৮’। এ ছাড়া সার্বিক সাহিত্যে অবদানের জন্য প্রাপ্ত পুরস্কার ও সম্মাননার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘সুকান্ত পদক-১৯৮৯’, ‘মনোজ বসু স্মৃতি পুরস্কার-১৯৯৭’, ‘বিবেকানন্দ পদক-২০০৩’, ‘কণ্ঠশীলন সম্মাননা পদক-২০০৫’, ‘মাইকেল মধুসূদন সাহিত্য পদক-২০০৯’, ‘স্বরগম সংগীত একাডেমী গুণীজন সম্মাননা-২০১২’, ‘জীবনানন্দ স্মৃতি সম্মাননা-২০১২, ‘ফেডারেশন হল সোসাইটি সম্মাননা-২০১৩ (ভারত)’, ‘বিপ্রতীপ ছোটকাগজ সম্বর্ধনা-২০১৪’, ‘কপোতাক্ষ সাহিত্য পরিষদ সম্মাননা পদক-২০১৬’, ‘কাদামাটি সাহিত্য পদক-২০১৮’, ‘অমিয় চক্রবর্তী পুরস্কার-২০১৮ (ভারত)’, ‘নজরুল স্মারক সম্মাননা-২০২২ (ভারত)’, ‘আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র স্মৃতি পদক-২০২২’, ‘গগন হরকরা কবিতা পুরস্কার-২০২৪’।
গুণী এই কবি-গবেষক ও সম্পাদক খসরু পারভেজ কথা বলেছেন জাগো নিউজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন কবি ও গবেষক বঙ্গ রাখাল—
জাগো নিউজ: আপনার লেখাপড়া বা বেড়ে ওঠা কোথায়?
খসরু পারভেজ: আমার গ্রামের পাশেই মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্মভূমি সাগরদাঁড়ী গ্রাম। আমার গ্রাম শেখপুরা একসময় সাগরদাঁড়ীর অন্তর্ভুক্ত ছিল। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা সাগরদাঁড়ীতেই। উচ্চমাধ্যমিক কেশবপুর কলেজ। যশোর মাইকেল মধুসূদন কলেজ থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক (সম্মান)। পরবর্তীতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা সাহিত্যে স্নাতকোত্তর। মূলত আমার বেড়ে ওঠা যশোরের সাগরদাঁড়ীতেই।
জাগো নিউজ: আপনার লেখালেখির বিষয়ে জানতে চাই—
খসরু পারভেজ: কবিতা লিখি। নিজেকে কবি পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। আমার কবিতার যাঁরা পাঠক, তাঁরা স্বীকার করবেন আমার সময়ে আমি সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র ধারায় কবিতা লিখেছি। আমার কবিতায় যে শব্দের খেলা, শব্দবন্ধ তৈরির যে চমৎকারিত্ব রয়েছে, তা আমার সময়ে কেউ করেননি। সব সময় ছন্দে না লিখলেও ছন্দসচেতন থাকার চেষ্টা করি। গদ্য লিখি। আমার গদ্যেরও আলাদা স্বর রয়েছে। গবেষণাধর্মী কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত রাখতে পারলে ভালো লাগে।
জাগো নিউজ: আপনি ছোট কাগজ সম্পাদনা করেন। সাহিত্যের সম্প্রসারণে ছোট কাগজ কতটা ভূমিকা রাখে বলে মনে করেন?
খসরু পারভেজ: যখন অনার্সের ছাত্র; তখন থেকেই লিটল ম্যাগাজিন সম্পাদনা করি। ‘অববাহিকা’ বের করতাম। পরে ‘ভাঁটফুল’। সাহিত্যের সম্প্রসারণে ছোট কাগজের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। ছোট কাগজ থেকেই মূলত সিরিয়াস সাহিত্যের কাজটি হয়। প্রকৃত প্রতিভাবান লেখক উঠে আসে লিটল ম্যাগাজিন থেকে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমাদের দেশে লিটল ম্যাগাজিনের সঠিক চরিত্র আজও দাঁড়াতে পারেনি। প্রতিষ্ঠান বিরোধী যে চরিত্র তা অধিকাংশ লিটল ম্যাগাজিনের নেই। প্রকৃত অর্থে ম্যাগাজিন প্রকাশিত হচ্ছে অনেক কিন্তু লিটল ম্যাগাজিনের সংখ্যা কম।
- আরও পড়ুন
- মামুন রশীদ: দুর্বার এক আলোকচ্ছটা
জাগো নিউজ: আপনি তো মাইকেল মধুসূদনকে নিয়ে অনেক কাজ করেছেন। তাঁকে নিয়ে এত কাজ করার কারণ কী বলে মনে করেন? আর কী কী কাজ করেছেন মাইকেলকে নিয়ে, তা জানাবেন?
খসরু পারভেজ: মধুসূদন দত্তের জন্মভূমি সাগরদাঁড়ী আমার বিচরণভূমি। মধুসূদন শৈশবে ফারসি শিখতে আসতেন আমার পূর্বপুরুষ মৌলভি খন্দকার মখমল আহমদের কাছে। স্বাভাবিক কারণে মধুসূদনের প্রতি আমার আগ্রহ সেই কৈশোর থেকেই। পরে যখন মধুসূদন পাঠ করেছি, মনে হয়েছে এ এক বিস্ময়। মধুসূদনের দেশপ্রেম, বাঙালি জাতীয়তাবোধ, অসাম্প্রদায়িক চেতনাবোধ আমাকে বিপুলভাবে অনুপ্রাণিত করে। সেই অনুপ্রেরণা থেকেই তাঁকে নিয়ে লেখালেখি। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার অনুরোধে মধুসূদনকে নিয়ে লিখতেই হয়। মধুসূদনের জন্মদিন উপলক্ষে স্মরণিকা-সাময়িকী প্রকাশিত হয়। সেগুলোতেও লিখতে হয়। এসব কারণে মধুসূদন বিষয়ক লেখালেখি একটু বেশি।
মধুসূদনের চিঠিপত্রগুলোর অনুবাদ নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে ‘মধুসূদনের চিঠি’। তবে মধুসূদনকে নিয়ে আমার দুটি পুরস্কার বিজয়ী বই ‘মধুসূদন: বিচিত্র অনুষঙ্গ’। মধুসূদন জীবনী ‘মাইকেল পরিচিতি’; ‘সাধিতে মনের সাধ’; ‘মাইকেল মধুসূদন দত্ত’। মধুসূদনের সময় থেকে নব্বই দশক পর্যন্ত যেসব কবি মধুসূদনকে নিয়ে কবিতা লিখেছেন; সেসব কবিতা নিয়ে একটি সংকলন সম্পাদনা করেছি ‘মধুসূদন: নিবেদিত পঙক্তিমালা’ শিরোনামে। মেঘনাদবধ কাব্যের মূল্যায়ন নিয়ে একটি সংকলন সম্পাদনা করেছি ‘বাঙালির বিস্ময়: মেঘনাদবধ কাব্য’ নামে। আরেকটি সম্পাদিত বই আছে ‘মধুসূদন: কবি ও কবিতা’। মধুসূদন অভিধানের কাজটি করবো। আর বাংলাদেশে সঠিক মধুসূদন রচনাবলি নেই; যা আমি প্রায়শই বলে থাকি। রচনাবলি সম্পাদনার কাজটি শুরু করেছি।
জাগো নিউজ: লেখক মূলত কার জন্য লেখেন?
খসরু পারভেজ: কঠিন প্রশ্ন। লেখক প্রথমত নিজের জন্য লেখেন, নিজের আনন্দের জন্য লেখেন। তারপরও সমাজের প্রতি, তাঁর সময়ের প্রতি তাঁর একটি দায় থাকে। এই দায় থেকেও লেখককে লিখতে হয়। লেখক শুধু নিজের জন্য লিখবেন, এই সমাজ, সমকালীন অসংগতি, অসুন্দর, নিপীড়ন তাঁকে নাড়া দেবে না, এটা কী করে সম্ভব? যুদ্ধ চলছে। চারপাশে লাশের স্তূপ। নারী ও শিশুর জীবন বেশি বিপন্ন; এমন একটা পরিস্থিতিতে একজন কবি শুধু প্রেমের কবিতা লিখে যাবেন, এটা কারও কাম্য হতে পারে না।
জাগো নিউজ: ‘সুলতানের মুখোমুখি’ বইটি সম্পর্কে জানতে চাই—
খসরু পারভেজ: বিশ্বখ্যাত চিত্রশিল্পী এস এম সুলতান আমাদের বৃহত্তর যশোরের সন্তান। তাঁর নড়াইলে কয়েকবার গিয়েছি। একবার আমাদের কেশবপুর থেকে একটি হনুমান ধরে নিয়ে গেলেন তাঁর চিড়িয়াখানার জন্য। তিনি সাগরদাঁড়ীতে মধুসূদনের জন্মবার্ষিকী অনুষ্ঠানে সাগরদাঁড়ীও এসেছেন। একটা পরিচয় গড়ে উঠেছিল তাঁর সাথে। আমার দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘নিহত বিভীষিকা নিরুদ্দেশে’র প্রচ্ছদ করেছিলেন তিনি। সাধারণত কারও প্রচ্ছদ করতেন না। আমার সৌভাগ্য যে, আমাকে না বলেননি। ১৯৮৮ সালের কথা। তখন ‘অববাহিকা’ করতাম। তো ‘অববাহিকা’র জন্য শিল্পীর একটি দীর্ঘ সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছিলাম। টেপরেকর্ডার নিয়ে আমার সঙ্গে ছিলেন গল্পকার আবুল হুসাইন জাহাঙ্গীর এবং সাংবাদিক মোতাহার হোসাইন। ১৯৮৯ সালের একটি সংখ্যায় গৃহীত সাক্ষাৎকারের কিছু অংশ ছাপা হয়েছিল। ঘোষণা ছিল পরের সংখ্যায় বাকি অংশ ছাপা হবে। অববাহিকা আর বের হয়নি। দীর্ঘদিন এটা পড়ে ছিল। সুলতান ভাইয়ের মৃত্যুর পর কায়সুল হক ভাইয়ের সঙ্গে কথা হলে তিনি আগ্রহ প্রকাশ করলে ‘পাক্ষিক শৈলী’তে সম্পূর্ণ সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়। এর আগে পত্রিকায় প্রকাশিত শিল্পীর আরও কয়েকটি সাক্ষাৎকার আমার সংগ্রহে ছিল। তখন ভাবি, সবগুলো সাক্ষাৎকার এক জায়গায় করে একটি বই করা যেতে পারে। এ ব্যাপারে আমাকে সহযোগিতা করেন অধ্যাপক শরীফ আতিকুজ্জামান। তিনিও নড়াইলের সন্তান। তাঁর গৃহীত তিনটি সাক্ষাৎকার মিলে তিনি একটি করে আমাকে পাঠিয়ে দেন। নুরুল আলম আতিকের ‘নৃ’তে প্রকাশিত শাহাদুজ্জামানের একটি দীর্ঘ সাক্ষাৎকার ছিল। সেটিও অন্তর্ভুক্ত হলো। হয়ে গেল একটি বই। ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ থেকে এর দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে।
জাগো নিউজ: আপনি না লিখলে সাহিত্যের কী ক্ষতি হতো বলে মনে করেন?
খসরু পারভেজ: দেশে এত লেখক। আমার মতো একজন ক্ষুদ্র লেখক লেখালেখি না করলে সাহিত্যের ক্ষতি হতো—এই ভাবনাটাই হাস্যকর।
জাগো নিউজ: অনেকগুলো জীবনী লিখেছেন? কার কার জীবনী লিখেছেন? জীবনী লেখার প্রয়োজনীয়তা কেন অনুভব করলেন?
খসরু পারভেজ: ছয়টি জীবনীগ্রন্থ আছে। তিনটি মধুসূদনকে নিয়ে লেখা। একটি মহাত্মা লালন ফকিরকে নিয়ে। অন্য দুটি এস এম সুলতানকে নিয়ে। মনীষীদের জীবন থেকেই পাঠক, বিশেষ করে শিক্ষার্থীরা তাদের জীবন গঠনে অনুপ্রাণিত হতে পারে। এই চিন্তা থেকে জীবনীগ্রন্থ লেখা। প্রশ্ন উঠতে পারে, মধুসূদনকে নিয়ে তিনটি জীবনীর কী উপযোগিতা রয়েছে? তিনটি বই তিনটি আঙ্গিকে লেখা। একটি মধুসূদনের পরিচিতিমূলক। যে বইটি ‘মাইকেল পরিচিতি’। যার পঞ্চম সংস্করণ এর মধ্যেই প্রকাশিত হয়েছে। পাঁচটি সংস্করণে ছাপা হয়েছে বারো হাজার কপি। মধুসূদনের জীবন ও সাহিত্য অধ্যায় লিখেছিলাম ‘মধুসূদন রচনাবলি’র ভূমিকার জন্য। পরে রচনাবলিটা আর প্রকাশিত হয়নি। সেই দীর্ঘ ভূমিকাই একটা বই হয়ে গেল। আরেকটি কথাপ্রকাশের জীবনী সিরিজের জন্য অনুরদ্ধ হয়ে লেখা। সুলতান বিষয়ক দুটি বই ‘আমাদের শিল্পী এস এম সুলতান’ গ্রন্থ কানন এবং ‘এস এম সুলতান’ কথা প্রকাশের অনুরোধে লেখা। লালন ফকিরের ওপর ‘আমাদের বাউল কবি লালন শাহ্’ বইটি প্রকাশ করেছে বাংলা প্রকাশ।
জাগো নিউজ: কবিতা কেন লেখেন?
খসরু পারভেজ: কবিতা না লিখে পারি না, তাই কবিতা লিখি। আমার অনুভূতি, ক্ষোভ, প্রতিবাদ প্রকাশের যোগ্যতম মাধ্যম কবিতা। কবিতা ছাড়া শিল্পের অন্য মাধ্যম প্রতীকের মধ্য দিয়ে, অনুভূতিকে রূপকের মধ্য দিয়ে প্রকাশের সুযোগ নেই।
জাগো নিউজ: সম্প্রতি আপনার একটি বই প্রকাশিত হয়েছে। ‘হিন্দুবাদী কবিতা অথবা একবিংশ শতকের প্রার্থনা’ বইটি লেখার কারণ কী?
খসরু পারভেজ: আমাদের দেশে মাঝে মাঝে যে কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটে। যা সত্যিই দুঃখজনক। বিভিন্ন অজুহাতে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা হয়। একটি সম্প্রদায় আর একটি সম্প্রদায়ের কখনো অমঙ্গল কামনা করতে পারে না। দেশের পরিবেশকে অস্থিতিশীল করে তোলার জন্য একটি শ্রেণির প্রপাগাণ্ডা এসব। ইচ্ছা করে পূজামণ্ডপে কোরআন শরীফ রেখে তার অবমাননা সনাতন ধর্ম অবলম্বী কেউ করবে না। সে জানে এটি করলে তারা নিজেরাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। একটি গোষ্ঠী এসব কাজে লিপ্ত থেকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার জন্য চক্রান্তে লিপ্ত। এটা না বুঝে এক শ্রেণির ধর্মান্ধ মানুষ সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা চালায়। ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দেয়। লুটপাট করে। সংক্রামক ব্যাধির মতো এটা ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। মসজিদে বসে ইমামরাও উস্কানি দিতে থাকে। ২০২১ ও ২০২২ সালে বিভিন্ন অঞ্চলে এসব ঘটনা ঘটে। বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলের গলায় জুতার মালা পরিয়ে স্কুলে ঘোরানো হয়। এসব ঘটনা আমাকে প্রচণ্ড নাড়া দেয়। যুগ যুগ ধরে আমরা হিন্দু-মুসলমানরা একসঙ্গে মিলেমিশে আছি। এটা অনেকের সহ্য হয় না। সকালে ঘুম থেকে উঠেই হিন্দু ভাইদের সঙ্গে দেখা হয়। স্কুল, কলেজে যখন পড়েছি; তখন কত হিন্দু বন্ধু-বান্ধব। আজানের ধ্বনির পাশাপাশি ওদের ঢাক-ঢোল, উলুধ্বনি আমাদের কানে ভেসে আসে। এসব বিষয়-আশয় নিয়ে একটা দীর্ঘ কবিতা লিখি। এটা একটি স্যাটায়ারধর্মী লেখা। ‘হিন্দুবাদী কবিতা’ রূপক অর্থে। একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে আমার মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে প্রার্থনা করেছি, যাতে আমি সাচ্চা মুসলমান হতে পারি। অনেকটা শামসুর রাহমানের ‘মোনাজাতের খসড়া’র মতো। যদিও কবিতায় আমি উল্লেখ করেছি এটা শামসুর রাহমানের ‘মোনাজাতের খসড়া’ নয়। যা হোক, আমি কেন ওদের মতো হতে পারছি না, যারা ঘর পোড়ায়, মন্দিরে লুটপাট করে, প্রতিমা ভাঙে! কবিতায় এটাই আমার আক্ষেপ। রোড অ্যাক্সিডেন্টে মারাত্মক অসুস্থাবস্থায় হাসপাতালে আমি ভর্তি হলে আমাকে রক্ত দিয়ে বাঁচিয়েছিল একজন হিন্দু দোকানদার। তাহলে কি আমি মুসলমান আছি! আমার ভেতরে তো হিন্দুর রক্ত! স্রষ্টার কাছে প্রশ্ন, আমার মুসলমানিত্বের কী হবে? আমি লুটেরা হতে চেয়েছি, যথার্থ সাম্প্রদায়িক হতে চেয়েছি। এই স্যাটায়ারটা অনেকে বোঝেনি। কবিতাটি ২০২২ সালের জুলাইতে ফেসবুকে পোস্ট দিই। ফেসবুক পোস্ট দেওয়ার একঘণ্টার মধ্যে এটি যশোরের একটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মানববন্ধনে পঠিত হয়। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ইংরেজিতে অনূদিত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে। ছয়শত শেয়ার হয়। গালিগালাজও কম খেতে হয়নি। আমার পরিচিতজনরাও আমাকে গালি দিতে কসুর করেনি। যা হোক, এটা একটা ইশতেহার। অনেকে প্রশ্ন করেন—এটা কি কবিতা? আমি স্বীকার করি, প্রকৃতপক্ষে শিল্পের নিরিখে হয়তো কবিতা নয়। কবিতা সব সময় শিল্পের দায় মেনে নেবে, এটাও তো নয়! আমার ‘ধর্ষণমঙ্গল কাব্য’ নিয়ে এমন প্রশ্ন উঠেছিল। যা হোক, কবিতাটি ফেসবুকে বাদানুবাদ হতে থাকলে কিছু প্রগতিশীল বন্ধু এটাকে বই আকারে প্রকাশের অনুরোধ জানান। অতঃপর বই হয়। বইতে প্রকাশের সময় কবিতাটি আরও বড় হয়, সংযোজন হয় অনেক পঙক্তি। এ সময়ে এ ধরনের কবিতা আরও ছিল, সেগুলোও এই গ্রন্থে সংযোজিত হয়। এদেশে যে হিন্দুদের ওপর নির্যাতন ঘটে তা নয়, ভারতেও মুসলমানরা অত্যাচারিত; সেটাও লিখেছি। দেশভাগের কান্না, সীমান্ত হত্যা, সংঘালঘু নির্যাতন, মসজিদ ভেঙে মন্দির নির্মাণ, উগ্র হিন্দুত্বের বিরুদ্ধেও আমার কবিতা আছে এই বইতে। সেটা অনেকেই দেখে না। আমি হিন্দুদের পক্ষে কেন লিখলাম! এটাই অপরাধ। এই তো সেদিনও একজন কবিবন্ধু বললেন, ‘এতটা হিন্দুদের প্রশ্রয় দেওয়া ঠিক হয়নি’।
জাগো নিউজ: সাহিত্যচর্চায় অবদানের জন্য নানা স্বীকৃতি রয়েছে। এটাকে আপনি কীভাবে দেখেন?
খসরু পারভেজ: স্বীকৃতি পেলে ভালো লাগে। মনে হয় কিছু কাজ করতে পেরেছি। ছোট কাগজের বন্ধুরা বাজারি লেখক বলেন, তখন খারাপ লাগে। প্রশ্ন জাগে, তাঁরাও কি বাজারী নয়? স্টলে বসে ম্যাগাজিন বিক্রি করেন কেন? প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার কথা বলেন, অথচ দৈনিক পত্রিকার সাহিত্য পাতার সম্পাদকের কাছে ম্যাগাজিন পাঠান আলোচনার জন্য। আবার কিছু ছোট কাগজ তো পুরস্কার, সম্মাননা এগুলো দিচ্ছে। সম্প্রতি দেখলাম, শিল্পকলা একাডেমি থেকে কয়েকটি লিটল ম্যাগাজিনকে পুরস্কৃত করা হলো। তাঁরা এটি নিচ্ছেন, অথচ এরাই পুরস্কারের বিরুদ্ধে কথা বলেন। প্রসঙ্গ অন্য দিকে যাচ্ছে বোধ হয়, যা হোক স্বীকৃতি মানে তো পুরস্কার। কিন্তু পুরস্কারের ব্যাপারটা এখন লজ্জার হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেননা, পুরস্কার টাকায়, স্বার্থে কেনা-বেচা হয়। আমি এ ব্যাপারে খুব সতর্ক থাকার চেষ্টা করি। যেগুলো পেয়েছি, কোনো প্রকার তদ্বির ছাড়াই, যাচাই-বাছাই করে নিয়েছি। কবি ফারুক নওয়াজকে আমরা মধুসূদন একাডেমি পুরস্কার দিয়েছিলাম শিশুসাহিত্যে অবদানের জন্য। পরে তিনি আমাকে ‘কবি কাদের নওয়াজ পুরস্কার’ দিতে চেয়েছিলেন, আমি বিনয়ের সঙ্গে আমার অসম্মতি জ্ঞাপন করেছিলাম। কেননা আমি মধুসূদন একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক। লোকে বলবে ভাগাভাগি হয়েছে। আইএফআইসি ব্যাংক সাহিত্য পুরস্কার, মহাকবি মধুসূদন পদক পেয়েছি বই জমা দিয়ে। আপনারা জানেন, এই দুটি পুরস্কারের জন্য দেশের খ্যাতিমান লেখকরাও বই জমা দেন। সেখান থেকে নিরপেক্ষ বিচারে যখন পুরস্কার পেয়েছি, তখন নিজের প্রতি আস্থা বেড়েছে। দায়ও বেড়েছে ভালো কাজ করার।
জাগো নিউজ: আপনি তো অনেক গান রচনা করেছেন। গানের সাথে কবিতার মিল বা অমিল সম্পর্কে জানতে চাই—
খসরু পারভেজ: জ্বি, আমি বাংলাদেশ বেতারের গীতিকার। ছাত্রজীবন থেকেই গান লিখি। গান লেখায় কৃতিত্বের জন্য প্রথমবারের মতো প্রবর্তিত ‘মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান পদক’ আমাকে দেওয়া হয়। একসময় কবিতাই ছিল গান। মাইকেল মধুসূদন দত্ত প্রথম কবিতা থেকে গানকে আলাদা করেন। তাই কবিতা আর গানের মধ্যে পার্থক্য তো রয়েছেই। তবে ভালো গানের কথা ভালো কবিতা, অর্থাৎ গানের কবিতা। কথাটা এভাবে বলা যায়, একটি উৎকৃষ্ট গানের কথা উৎকৃষ্ট কবিতা, কিন্তু একটি উৎকৃষ্ট কবিতা হলেই যে ভালো গান হবে তা কিন্তু নয়। গানের কথায় কাব্যিকতা থাকতেই হবে। গানের কবিতায় ছন্দকে মান্য করতে হয়; কিন্তু ছন্দকে মান্য না করে কবিতা লেখা যায়। কবিতায় ভাষার ব্যবহারে শব্দ নিয়ে খেলার যে সুযোগ আছে, গানের কথায়ও সে সুযোগ আছে। তবে গানের কথায় জটিল শব্দ, কঠিন আবহ পরিহার করতে হয়, তা না হলে সেটা শোতাপ্রিয় গান হয়ে ওঠে না। গানের কথা যত সহজ ও সাবলীল হবে, সে গানটি শ্রোতার কাছে বেশি প্রিয় হয়ে উঠবে।
জাগো নিউজ: এ বয়সে এসে প্রকাশনা ব্যবসায় আসার কারণ কী? আমাদের দেশের প্রকাশনা ব্যবসা সম্পর্কে জানতে চাই—
খসরু পারভেজ: নিজের ও নিজের একান্ত বন্ধু-বান্ধবের বই প্রকাশ করার জন্য প্রকাশনা করেছি। বিশেষত কবিতার বই কবিদের নিজেদের টাকা দিয়েই সাধারণত প্রকাশ করতে হয়। বিনা টাকায় করলেও দশ কপি বই পাওয়া যায়, প্রকাশকের কাছ থেকে। তাতে কাজ হয় না। কিছু বই কিনতেই হয়। বই কিনতে গিয়ে টাকা দিয়ে বই পাইনি; এমন ঘটনা ঘটেছে আমার ক্ষেত্রেও। নিজের বই নিজে করার জন্য এই প্রকাশনা। প্রকাশনায় এসে বুঝেছি, কাজটি সহজ নয়। বিশেষত বিপণন। ছোট-খাটো প্রকাশকদের টিকে থাকা খুব কঠিন। যারা টিকে আছেন লেখকের টাকায় বই ছেপে, সেখান থেকে টাকা বাঁচিয়ে। আর বড় প্রকাশকদের কথা তো আলাদা। তাঁদের ইনভেস্ট বেশি। তাঁদের আবার কারও কারও পাঠ্যপুস্তক বা নোট বই ছাপার কারবার রয়েছে, তাঁরাই টিকে আছে, থাকবে।
জাগো নিউজ: সাম্প্রতিক কবিতা নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী? কলকাতার কবিতা এবং বাংলাদেশের কবিতার মধ্যে মৌলিক পার্থক্য কী বলে মনে করেন?
খসরু পারভেজ: অজস্র কবিতা লেখা হচ্ছে প্রতিদিন। হৃদয়ে দাগ কাটার মতো কবিতা কই? পরীক্ষা-নিরীক্ষার নামে উদ্ভট, অর্থহীন পঙক্তি লেখা হচ্ছে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই। ভালো লিখছেন কেউ কেউ। আসলে ভালো শব্দটা আপেক্ষিক। আমার কাছে যেটা ভালো, অন্যের কাছে সেটা ভালো না-ও লাগতে পারে। যিনি লিখছেন, তিনি নিজেই হয়তো জানেন না ভালোত্বের সংজ্ঞা। কিছু কবি যাঁরা আমার বিবেচনায় ভালো লিখছেন; তাঁরা একই কবিতা, একই স্টাইলে, একই ধরনের কবিতা লিখে চলেছেন, বৈচিত্র্য নেই। যা পরিবর্তন হয় না, তা ক্ষয় হয়। অধিকাংশই ক্ষয়িষ্ণু কবি। এই নেতিকে এড়িয়ে কোনো কোনো কবির কবিতা নাড়া দিয়ে যায় বৈকি! আমি আশাবাদী, আমাদের তরুণদের হাতে বাংলা কবিতা নতুন বাঁক নেবে। বাংলাদেশ হোক আর পশ্চিমবঙ্গের কবিতা হোক, আমাদের ভাষা এক। আমরা একই ভাষায় কবিতা লিখছি। তবে স্থান, কাল, পাত্র বিশেষে কবিতার চরিত্র বদলায় বৈকি! কবি জীবনানন্দ দাশ এতখানি প্রভাব বিস্তার করেছেন বাংলা কবিতায়, যার আবহ থেকে আমরা এখনো মুক্ত হতে পারিনি। কলকাতার কবিরা সচেতনভাবে জীবনানন্দ দাশকে এড়িয়ে কবিতা লিখছেন, আর আমাদের বাংলাদেশের কবিরা জীবনানন্দ দাশ থেকে, এমনকি ত্রিশের অন্য কবিদের থেকে এখনো পরিপূর্ণভাবে মুক্ত হতে পারেননি। এটা আমার ধারণা। কলকাতার তুলনায় আমাদের অপ্রাপ্তি বেশি। আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি বেশি কণ্টকাকীর্ণ। তাই আমাদের কবিতায় প্রতিবাদের সুরটি বেশি অনুরণিত।
জাগো নিউজ: কবিতা-প্রবন্ধ-অনুবাদ-জীবনী-সম্পাদনা কিংবা সংগঠন করে চলেছেন একই সাথে এত শক্তি কোথায় পান? এত কাজ একসাথে করতে গিয়ে কি আপনার কোনো কাজ; কোনোটির চেয়ে খারাপ হয়েছে বলে মনে হয়?
খসরু পারভেজ: সত্য বলতে কি আমি একজন অলস মানুষ। একজন লেখককে যেভাবে সিরিয়াসলি কাজ করা উচিত, সেভাবে করতে পারিনি। হচ্ছে না, হবে না—এই করতে করতে যেটুকু হয়েছে, সেটুকু অনেক বলে মনে হচ্ছে আপনার কাছে। তবু যেটুকু করেছি শক্তি ছিল বলেই পেরেছি। কাজ করার শক্তি ভেতর থেকে আসে। ভেতরে শক্তির তাড়া ছিল বলেই কিছু কাজ করতে পেরেছি ব্যাংকের চাকরির মতো এত কঠিন পেশার মধ্য থেকেও। সাহিত্য তো নেশা। একবার নেশা রক্তে মিশে গেলে উপায় নেই। সে আপনাকে তাড়া করে ফিরবেই। একসঙ্গে এতগুলো কাজ করতে এসে সংগঠনের চেয়ে সাহিত্যকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। মনে হয়েছে সংগঠন লেখার ক্ষতি করে। সংগঠন না করলে কবিতায় বোধহয় আরও ভালো করতে পারতাম।
জাগো নিউজ: নিজের লেখক জীবনী নিয়ে মূল্যায়ন করতে বললে কী বলবেন!
খসরু পারভেজ: নিজের মূল্যায়ন নিজে করা সহজ নয়। বাংলা সাহিত্য আধুনিকতার প্রবর্তক মাইকেল মধুসূদন আমাদের চর্চা, চেতনা থেকে হারিয়ে যেতে বসেছিলেন, মধুসূদন সম্পর্কে লেখালেখি করে, মধুসূদন একাডেমি প্রতিষ্ঠা করে লেখক-গবেষকদের মধুসূদনচর্চায় আগ্রহী করে তুলতে পেরেছি; এটা অনেকেই বলেন। নিজে বলতে পারি, এদেশে সঠিক মধুসূদনকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। সাহিত্য নিয়ে অনেক কিছু করার ছিল করতে পারিনি। কবিতা নিয়ে কাজ করার অনেক পরিকল্পনা ছিল, সময় দিতে পারিনি, এজন্য অতৃপ্তি আছে।
এসইউ/জিকেএস