ফাত্তাহ তানভীর রানার গল্প: সান্তনির কপাট
বাড়ই, সান্তনি, আনিলা, কাঞ্চন ও তাদের সম্প্রদায়ের অন্যরা জলে ভাসতে ভাসতে লালাপুর গ্রামে স্থিত হয়েছে। তবে কতদিনের জন্য তা কেউ জানে না। তাদের নিয়মিত জীবনাচারে লালাপুর গ্রামের কেউ ব্যাঘাত ঘটায় না।
গুড় নদীর তীরে ধলা মেম্বারের পতিত খাস জমিতে তারা আশ্রয় পেল। সব মিলিয়ে গ্রামের সাধারণ মানুষের সাথে সান্তনির সময় বেশ ভালো কাটছে।
অনেক পরিবারের ভেতরে বাড়ই পরিবার তাদের সম্প্রদায়ভুক্ত। সান্তনির স্বামী সাধারণত রাতে অনেক দেরী করে বাড়ি ফেরে। সংসার, সন্তানদের দেখা-শোনা সান্তনিকেই করতে হয়।
বাড়ই সংসারের খবরাদি রাখতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না। যাত্রা আর গাঁজাজুড়েই তার সব আগ্রহ। এই দুই আড্ডার স্থল খুঁজে পেতে তার বেগ পেতে হয় না। দূরত্ব যতটা হোক না কেন, রাত কারো পর কি?
বাড়ই ঘরে এলে সান্তনি দুয়ার সরিয়ে দেয়। মাতাল বাড়ই ঘরে এসে বেঘোরে ঘুমায়। আজ রাতে সান্তনি ঘরের দরজা খুলে দিলো। এ সময়ে সাধারণত তার স্বামী ঘরে আসে না। সান্তনি জানে স্বামী বাড়ই ঘরে আসবে আরও পরে।
সে তখন পিয়ারের জন্য অপেক্ষা করছিল। পিয়ারের সঙ্গে সান্তনির সদ্ভাব নতুন নয়। লালাপুর আসার পর থেকেই। এমনিভাবে চাটাইয়ের তৈরি কপাট সে আগেও খুলেছে। কেউ টের পেয়েছে, কেউবা পায়নি। টের পেলেই সান্তনির কী আসে-যায়!
একদিন রাতে মাতাল বাড়ই হঠাৎ নির্দিষ্ট সময়ের আগেই ঘরে এসে হাজির। ঘরে ঢুকে অন্য মানুষের অস্তিত্ব পেয়ে চেঁচিয়ে বলে উঠলো, ‘ঘরে কে রে হারামি? আজ তোকে দেখে লোব!’ বলেই লাকড়ি হাতে পিয়ারকে মারতে উদ্যত হলো।
সান্তনি পেছন থেকে বাড়ইকে টেনে ধরে বললো, ‘টংকা দিছে। তোর এক পুড়িয়া হব্বে, আমারও হইবেক।’
‘উ মেম্বারের পুত? কিরে সান্তনি!’ ‘হ, ঘরের জায়গা দিছে।’ ‘মেম্বার আদমি ভালা। পুত ভি হামার মতোন হারামি আছে!’
পিয়ার বেরিয়ে যেতেই সান্তনি কলপাড়ে ছুটলো। আর বাড়ই আরেক পুড়িয়ার খোঁজে বেরিয়ে পড়লো।
আজ এক পুড়িয়া কয়েক বন্ধু ভাগ করে খেয়েছে। নেশা ভালো হয়নি! দরকার হলে দরিয়াপুর গিয়ে সে আজ এক বোতল বাংলা মেরে দেবে।
সান্তনি কপাট সড়িয়ে দিলো। আজ রাতে বাড়ই হয়তো ফিরবে না।
এসইউ/জিকেএস