মাঈন উদ্দিন আহমেদের চারটি কবিতা
আমার জ্বর হলে
আমার জ্বর হলে—
প্রথমেই মনে পড়ে আমার বোনের কথা।
ছোটবেলায় আমার জ্বরের দিনে
আপু আমাকে কোলে নিয়ে ঘুরে বেড়াতেন
বাড়ির উঠোন থেকে গ্রামের নরম নরম পথে।
সাথে এক প্যাকেট সল্টেজ বিস্কুট।
এখন আমার জ্বর হলে—
চোখের সামনে কেমন স্পষ্ট ভাসতে থাকে
আপুর কোল, সল্টেজ বিস্কুট, গ্রামের নরম পথ
আর উদ্বিগ্ন আমার মায়ের একজোড়া ভেজা ভেজা চোখ!
****
তুমি যেন মেসোপটেমিয়া
আমি কি তোমার মতো আর
পাবো কোনো নারী পৃথিবীতে
যত মুখ দেখি আশেপাশে—
তোমার ছায়া তার বিপরীতে।
তোমার মুখের যত রেখা
তাম্রশাসন হয়ে ভাসে—
অনিয়মে নুয়ে পড়া দেশ
আমার বুকের চারিপাশে।
বৃষ্টির তালে তালে বাজে
চেনা এক গান রেডিওতে
তোমার স্বরের মতোই লাগে—
সব সুর হিম হওয়া শীতে।
তুমিও তো জানো সেইসব
আমার সকল কথা, গান
চলে গেলে কেউ অবশেষে—
লাগে যেন জীবন বিরান।
একটা সময় ছিল যখন—
আমাদের কথা হতো রোজ
মুখ আর চোখে চোখে যত
ঘাসফুল নিতো তার খোঁজ।
সব কথা হয়ে গেলে শেষ
কথা আর থাকে নাকি বাকি?
নীরবতার ভান করে শুধু
নিজেকে নিজেই দেই ফাঁকি!
তবুও তো কত কথা থাকে
আঁকাবাঁকা রেলপথ ঘিরে
না বলা দ্রোহের চাপা স্বর
ভেসে ওঠে চেনা নদী তীরে।
একটা নদীর বুকে ঢেউ—
তার পাশে কাঁপে মোর হিয়া
তোমাকে রহস্য মানি আজও
তুমি যেন মেসোপটেমিয়া!
****
খবর দিও খবর নিও
তোমার খবর দিও—দখিনা হাওয়ার গায়
আমি ছাড়া কেমনে তোমার সমস্ত দিন যায়?
আমার খবর নিও—রাত্রি গভীর হলে
কেমন করে বেঁচে আছি আত্ম রোষানলে!
তোমার খবর দিও—জোয়ার-ভাটার জলে
আমায় ছাড়াই সুখে আছো! কেমন কৌশলে?
আমার খবর নিও—ঝুম বৃষ্টির কালে
কেমন করে জড়িয়ে নিতে একটু আড়ালে।
খবর দিও খবর নিও—ইচ্ছে যদি হয়
তুমি বিহীন আমার জীবন বড়ই সংশয়!
****
একা হয়ে যাও
সবকিছু ছেড়ে দিয়ে তুমি বরং একা হয়ে যাও।
ভুলে যাও কেউ একজন তোমাকে ভালোবাসতো কোনো এককালে।
তার ঘামে ভেজা ওড়নার মায়া ছিঁড়ে ফেলে
হাওয়ায় মিলিয়ে দাও চোখ বন্ধ করে।
সবকিছু ভুলে বরং নিঃসঙ্গ হও নক্ষত্র ও আমার মতো।
জেনে রেখো, কেউই আসলে থাকে না আপন আজীবন।
চলতে চলতে নদীও বাঁক নেয়,
শাখা-উপশাখা কত কী হয়!
পাড় ভেঙে সবুজ ঘাসের নির্মম স্বপ্নভঙ্গ।
এসব কথা বরং ভুলেই যাও।
ভুলে যাও কেউ একজন তোমার বিষণ্ণতার কালে
গালে চুমো খেতো সিনেমাটিক পন্থায়।
গালের সে দাগ মুছে ফেল এখনই।
অতি সহজেই সে দাগ মুছে যাবে জানি
কিন্তু মনে লেগে থাকা স্মৃতির গাঢ় কারুকাজ?
আসলে মানুষ চাইলেও
কোনোদিনই পারে না পুরোপুরি একা হতে।
জমজমাট নিঃসঙ্গতার আড়ালেও
সঙ্গ দেয় বিশেষ কেউ।
এসইউ/জিকেএস