ভিডিও EN
  1. Home/
  2. সাহিত্য

আয়েশা সিদ্দিকার গল্প: উঁকি

সাহিত্য ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৮:২৭ এএম, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩

বাড়ির পূর্বপাশের বড় পুকুর পাড়ের ঘাটে বিকেলবেলা কয়েকজন একসঙ্গে বসে গল্প করছি। কেউ চাচির বয়সী আবার কেউ ছোট বোন। কেউ সিঁড়িতে বসে আছে আবার কেউ বেঞ্চিতে। সে কত রকম গল্প। কার আগে দাঁত পড়েছে। কে দাঁত পড়ার সময় কীভাবে কান্না করেছে। কে স্কুলে ম্যাথে ফেল করেছে আবার কে ইংরেজিতে মাত্র পাঁচ পেয়েছে। তাই টিচাররা পরের ক্লাসে উঠায়নি। কেউ কেউ নতুন সাঁতার শিখেছে। তা নিয়ে কত উল্লাস। এসব নানাবিধ গল্প হচ্ছিলো।

ঘাট থেকে কিছুটা দূরে পুকুর পাড়েই বড় একটা আকাশমনি গাছ। গাছে হলুদ রঙের ফুল। ফুলগুলো আমাকে আকর্ষিত করছে। ফুল দেখতে বার বার গাছের দিকে তাকাই। গাছের আশেপাশে পুকুরের পুরো কিনারায় ছিল অনেক পাটিবেত গাছ। হঠাৎ গাছের দিকে নজর পড়েছে আমার। পাটিবেতের ফাঁকে দুটো চোখ আমার চোখে পড়লো। আকাশমনি গাছে হেলান দিয়ে এদিকে তাকিয়ে আছে একজন। লুকিয়ে আমার দিকেই তাকিয়ে আছে। অন্যরা নিজেদের মতো গল্পে ব্যস্ত। অন্য কেউ দেখতে পাচ্ছে না।

আমার পরিচিত চোখ। এ চোখ আমি রান্নাঘরের জানালা দিয়েও বাইরের দিকে দেখেছিলাম আগে একবার। বড্ড মায়ায় ভরা চোখ। আমাকে আটকে রাখছে যেন। চোখের দিকে তাকিয়ে আর কারোর কথা শুনতে পাচ্ছি না। অথচ এক পলক চোখে চোখ পড়ার পরই সে পালিয়ে যেতে লাগলো। আমি বুঝতে চেষ্টা করলাম, আমি যাকে ভাবছি সে নাকি। আমি সামনে এগিয়ে গাছের দিকে গিয়ে দেখলাম, আমার ধারণাই ঠিক। পালানোর সময় পেছন থেকে দেখলাম। সে আর কেউ নয়, অনিক।

আমি অনেক আগে থেকেই পছন্দ করি তাকে। তবে এটা জানি না, সে আমাকে পছন্দ করে কি না। তার আচরণে আমার মনে হতো সে আমাকে অপছন্দ করে। কিন্তু আমার দিকে তাকিয়ে ছিল কেন ওভাবে! এবার নিয়ে দুবার এভাবে লুকিয়ে দেখতে নোটিশ করেছি। তবে কি সেও আমাকে পছন্দ করে! তাকে এভাবে দেখে বেশ খুশি খুশি লাগছে। ভাবতে ভাবতে হাতের সঙ্গে লেগে কিছু একটা কাঁপছে, এমনটা মনে হলো। আমি ঘুম ঘুম চোখে ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখি অনিক ফোন দিচ্ছে। আমি চোখ মুছতে মুছতে সদ্য ঘুম ভাঙা একটু অগোছালো মোটা স্বরে বললাম, ‘আজ কী হয়েছে জানো?’
‘কী হয়েছে?’
‘দেখি পুকুর পাড়ে উঁকি দিয়ে আমায় দেখছিলে। এটা করেছো কখনো?’
অনিক উত্তর দিলো, ‘দেখো স্বপ্ন তোমাকে আমার ভালোবাসার গভীরতা বোঝাতে চায়, তবুও তুমি বোঝ না। সম্পর্কে এত নানাবিধ প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও আমি তোমাকেই চাই। দূরে থেকেও সবার আড়ালে থেকে আমি দেখি তোমাকে। তোমার স্বপ্ন এটাই বুঝিয়েছে তোমাকে। শুধু তোমারই মনে হয় আমি পালিয়ে যাই।’
অনিকের উত্তর আমাকে অবাক করলো আর মুগ্ধও করলো। আমি হেসে বললাম, ‘আমার জীবনের সব প্রতিবন্ধকতার সমাধান তো তুমি। দেখো স্বপ্নেও তুমি। তারপর ঘুম ভাঙার পরেও তুমি। তোমার দিকে তাকালেই তো মনে হয় সব সমস্যা সমাধান। আর তুমি চলে যাবে এরকমটা তো বলি ভয় লাগে তাই। তোমায় হারানোর ভয় আমাকে বড্ড পেইন দেয়।’
ওপাশ থেকে অনিক বললো, ‘আমি হারিয়ে যাবোটা কোথায়? গত তিন বছরে তোমার অ্যাবসেন্সেও তো কাউকে ভালো লাগলো না।’
আমি বললাম, ‘ভয় পেতে তো দোষ নেই অনিক। হারানোর ভয়ে ভালোবাসা বাড়ে। আগলে রাখার ইচ্ছেও প্রবল হয়।’
অনিক বললো, ‘হয়েছে এবার উঠে ফ্রেশ হও।’
‘আচ্ছা টা টা, রাখছি।’

তারপর হঠাৎ ভ্যানের ট্রিং ট্রিং শব্দ কানে আসছে। সবজির ভ্যান হতে পারে। রাস্তার পাশে দোতলায় বাসা। ঘুম চোখে ফোনটা অন করতেই দেখি স্ক্রিনে অনিকের ছবিটা ভেসে উঠলো। ছবি দেখতে দেখতেই কখন জানি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম রাতে।

সকাল থেকেই ভেতরে একটা স্বস্তির অনুভূতি হচ্ছে। মনে হচ্ছে, আমি খুব খুশি আজ। অনেকদিন পরে অনিককে বাস্তবের মতো দেখলাম। ফোনেও কথা হলো। আসলে পুরোটাই স্বপ্ন ছিল। স্বপ্নেই অনিককে জানালাম, তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখার কথা। তবুও বাস্তবের মতোই সুন্দর, জীবন্ত অনুভূতি হচ্ছে। মনে হচ্ছিলো এটুকু দেখা আর কথা বলার জন্যই হয়তো থেমে থাকে আমার জীবন, অপেক্ষায় থাকি আমি। নিজেকে হালকা লাগছে খুব। সব আগের মতো মনে হচ্ছে। অথচ অনিকের সঙ্গে দেখা হয় না প্রায় তিন বছর হয়ে গেল।

আমাদের সম্পর্কের সমাপ্তি সেই তিন বছর আগেই। তবুও এ নীরব অপেক্ষা শুধু এটুকু স্বপ্ন দেখার জন্য। এ প্রত্যাশা নিয়েই ঘুমোতে যাই প্রতি রাতে। ভাবতে ভাবতে ফোনের কোণায় তাকিয়ে দেখি আটটা বিশ বেজে গেছে। সাড়ে আটটায় ক্লাস। উঠে পাঁচ মিনিটে রেডি হয়ে ক্লাসে গেলাম। বাসা থেকে পাঁচ মিনিট লাগে ক্লাসে যেতে। যতই ক্লাসে মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টা করি না কেন, চোখে সেই উঁকি দেওয়া চোখ দুটো ভাসছে। কানে বাজছে ‘দূরে থেকেও সবার আড়ালে থেকে আমি দেখি তোমাকে।’

এসইউ/জিকেএস

আরও পড়ুন