দুঃখের অঙ্গশোভা ও অন্যান্য
কেটে যায় সব আঁধার
তুমি আছ বাহুর বন্ধনে, হৃদয় স্পন্দনে
তুমি আছ সর্বব্যাপী আনন্দ-উল্লাসে
তুমি আছ সব সফলতার গণ্ডি পেরিয়ে আরও সম্ভাবনার দিকে
তুমি আছ শ্রমে-ঘামে নিরন্তর সংগ্রামে।
তুমি আছ চাঁদ আর সূর্যালোকে
তুমি সর্বজয়ী, আছ সকল দুঃখ-কষ্ট অবসানে
তুমি আছ দর্পণে, কারণ আমি কাঁদলে তুমিও কাঁদো
তুমি আছ শব্দের মিছিলে-মিছিলে।
তুমি আছ সুরভিত দেবী ছন্দে, বজ্রাসনে
তুমি আছ মায়াবী হরিণীর চোখের তৃষ্ণায়
তুমি আছ মুক্তির স্বপ্নে সম্মুখ সমরে
তোমার পথের দিকে তাকালে কেটে যায় সব আঁধার।
দুঃখের অঙ্গশোভা
এসো, যুগল দুঃখগুলো অষ্টধাতুর জলে ধুয়ে দিই
তারপর এর ওপর ছিটিয়ে দিই কর্পূর
সুগন্ধ নিয়ে দুঃখগুলো সতেজ হলে
বিছিয়ে দেব নতুনভাবে সময়ের উঠোনজুড়ে
সকাল-দুপুর-সন্ধ্যা গড়িয়ে মধ্যরাতে
চাঁদের আলোয়
নিশ্চয় এক দিন ওরা হেসে উঠবে।
গ্রাম থেকে নগর-মহানগরে
ছড়িয়ে আছে দুঃখের অশ্রুবিন্দু
বলা ভালো, আমার স্বদেশের মানচিত্রজুড়ে
স্বপ্ন-সম্ভাবনার পালকগুলো ভিজিয়ে
ভালোবাসার ঘৃতাঞ্জলিতে
ওড়াই আবার সজীব করে।
দেখো, আমাদের দুঃখগুলো
কতটা নিঃস্বার্থ কিংবা নির্মোহ
এতকিছুর পরও ওরাই করে
গোলাপের সোহাগ স্তম্ভিত
আমরা পরস্পরের বুকে বুক রেখে
ব্যথার সমুদ্রে সাঁতার কেটে জেনেছি
দুঃখের সঙ্গে দুঃখ মিশিয়ে নেবানো উনুন জ্বলে
এ-ই কি দুঃখের অঙ্গশোভা নয়?
এসো, যুগল দুঃখগুলো অষ্টধাতুর জলে ধুয়ে দিই
সব দুঃখের সংজ্ঞা হয় না
সব দুঃখ যায় না করা প্রকাশও
দুঃখকে কখনো কখনো বাজাতে দিতে হয়
তার নিপুণ খোল-করতাল
স্বপ্নের পালঙ্কে দুঃখগুলো
আপাতত ঘুমিয়ে থাকুক।
অন্ধ ভালোবাসার গন্ধ নিয়ে
দুঃখ ওড়াক তার গাণ্ডীব
জীবনে সুখ-দুঃখ সবই আপেক্ষিক
তবে প্রথম দুঃখ নাকি খুব কষ্টের
যতই ভালোবাসবে দুঃখ ততই আঁকড়ে ধরবে
আমাদের তো কাউকে দুঃখ দেবার কথা নয়
এসো, যুগল দুঃখগুলো অষ্টধাতুর জলে ধুয়ে দিই
দুঃখগুলোয় কর্পূর ছিটাই।
তোমাতে বিলীন
কী বিস্ময়করভাবে তোমার আনন্দের ভেতর
অনর্গল কথা বলছে আর্তনাদ
কখনও কখনও আর্তনাদের ভেতরে
অপার শান্তির ছায়াও দেখেছি
আবার এও দেখেছি, এই শান্তির ভেতরেই
বইছে সমুদ্রের সাঁইসাঁই ঝড়
আহারে, আহা; মানুষের জীবন-খতিয়ানে কত আঁকিবুঁকি!
তুমি নিশ্চয় জানো সিসিফাসের সেই গল্পটা
গ্রিক পুরাণের গল্প, যা হোমারের অডিসিতে আছে
সিসিফাস বেচারা একটা খাঁড়া পাথর পাহাড়ের
ওপরে ঠেলে তোলে, আর পাথরটা গড়িয়ে নিচে পড়ে
আবার পাথরটাকে ঠেলে ওপরে তোলে
যতবার তোলে, ততবার পড়ে, কিন্তু সে বিরতি দেয় না
তার অবিরাম এই একটা কাজ
পাথর ঠেলে পাহাড়ের চূড়ায় তোলা
আর সেটা গড়িয়ে নিচে পড়লে আবার ঠেলতে থাকা।
কোনো কোনো দুঃখ অন্ধকার ঘুচিয়ে আলোর প্লাবন ঘটায়
অন্তর্লোকের আগুন ছড়ায় অনন্ত দিগন্তব্যাপী
অনন্ত কণ্ঠে শুনি তোমার উদার আকাশের জয়গান
তুমি তো নিষ্ফলা নও, জীবনের সবকিছু দৃশ্যমান হয় না
অতি ক্ষুদ্র দীন আমি শুধু এটুকু জানি
নিজেকে নিঃশেষ করে অনেককে অশেষ করেছো
ওগো ত্যাগের সৌরভধারী, তোমার অনন্ত কল্লোলে
দুঃখ চাষিদের দুঃখ তোমাতেই হোক বিলীন।
এইচআর/জিকেএস