ভিডিও EN
  1. Home/
  2. সাহিত্য

হাশিম কিয়ামের কবিতা: বহুমুখী বোধের সমাহার

আবু আফজাল সালেহ | প্রকাশিত: ০৮:০৮ এএম, ১৯ জুন ২০২৩

আমার টেবিলে উঁকি দিচ্ছে একটি কবিতার বই। অনেকদিন থেকেই উঁকি দিচ্ছে কবি হাশিম কিয়ামের ‘ব্যথার আকাশে ছেঁড়া মেঘের কোলাজ’। পড়ার শুরুতেই বোঝা যায়, কবিতায় নতুন কিছু পাচ্ছি। সত্যিই তাই। কাব্যগ্রন্থটির কবিতাগুলো সুন্দর, আনন্দদায়ক। সবচেয়ে ভালো লেগেছে, কবিতাগুলোর সুন্দর উপস্থাপনা। কবিতাগুলো পজিটিভ সেন্সগুলোকে জাগিয়ে দেয়—পুরাতন বার্তা নতুন ভঙ্গিতে।

কবিতার নামেও অভিনত্ব এনেছেন কবি হাশিম কিয়াম। সকালের সলতে, কচিমুঠ, বাজেয়াপ্ত হৃদয়, মমিঘুম, একফোঁটা তরল পাথর, পলিচাষি, নতুন কথার বীজ, নাতিশীতোষ্ণ স্বপ্ন, চুলের সাঁকো ইত্যাদি কবিতা শিরোনামীয় শব্দশ্রেণি দেখলেই তার প্রমাণ পাওয়া যায়। এসব কবিতায় অনেক প্রতীকী শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। চিত্র ও চিত্রকল্প নির্মাণে নতুনত্ব এসেছে। কবিতার প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে এক বা একাধিক বার্তা দেওয়া। হাশিম কিয়ামের প্রায় কবিতায়ই ইতিবাচক ও আশাবাদী হওয়ার বিভিন্ন বার্তা দেয়।

আরও পড়ুন: শিলারি: হাওরপাড়ের জীবন্ত আখ্যান 

‘স্মৃতির চেয়ে দীর্ঘ পথ’, ‘অমরত্বের আগুন’, ‘করাতের সিঁড়ি’, ‘আলোর নদী’, ‘কমলা রঙের বৃষ্টি’, ‘ইতর গন্ধ (একফোঁটা তরল গন্ধ)’, ‘সজনে ফুল মেখে (পর্যটক)’, ‘কানকা ভাঙা রুপালি ইলিশ (অভিমানী মৌনতার কাঁটা)’, ‘পিচের জঙে আগুন’, ‘ঘুমকাতর সাহস (নতুন কথার বীজ)’, ‘পলিচাষি উগড়ে দেয় ঘোলাজল (পলিচাষি)’, ‘মুক্তোয় সাজা রাত (নাতিশীতোষ্ণ স্বপ্ন)’, ‘রক্তমাখা মরুভূমি হাসে (বাজেয়াপ্ত হৃদয়)’, ‘গেঁদাফুলের মতো চোখ খোলো (কচি মুঠ)’ ইত্যাদির মতো শব্দ বা শব্দশ্রেণি নতুন রুচির স্বাদ দিতে সক্ষম।

‘চাঁদের ধবধবে স্তন (একফোঁটা তরল পাথর)’, ‘চাঁদের নাভিপদ্মে (মনের গহিনে ছায়া)’, ‘নিমফুলের আগুনে পুড়ে গেছে (কবরফাটা গোঙানির শব্দ)’, ‘বাবলা ফুলের রেণু মেখে লাল-সবুজ মমতায়/ধুলোমানুষ পাহারা দেয় এক দুপুরের রোদ (ধুলোমানুষ)’ ইত্যাদি শব্দশ্রেণিতে নতুন নতুন চিত্র অঙ্কিত হয়েছে। ক্ষেত্রমতে, চেতনার বৃদ্ধি বা ব্রেইনস্টর্মিং করে অপূর্ব চিত্রকল্প নির্মিত হয়েছে। প্রাগৈতিহাসিক আমলের অনেক অনুষঙ্গ বা ইতিহাস-ঐতিহ্য এসেছে—ফসিল, ‘চার হাজার বছরের পুরনো কঙ্কাল (বিস্মৃত একটি নাম)’ ইত্যাদি ভাষাশ্রেণি তারই প্রমাণ দেয়। ফবিস্ট (রং), ফিউচারিস্ট (গতি), একপ্রেশনিস্ট (আশাবাদ), ইমাজিস্ট (চিত্রকল্পবাদ) প্রভৃতি বৈশিষ্ট্য হাশিম কিয়ামের কবিতায় দেখা যায়। নন্দনতত্ত্বের বিভিন্ন রূপ ধরা দিয়েছে কবিতার পরতে পরতে।

আরও পড়ুন: জীবনানন্দের কবিতায় উপমা এবং বনলতা সেন 

চার ফর্মার বইটিতে কবিতা আছে ৫৬টি। সিলেটের বুনন প্রকাশনী থেকে কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশিত। রাজিব দত্তের প্রচ্ছদ করা পৃষ্ঠার বইটির গায়ের মূল্য ২০০ টাকা। আলোচিত কাব্যগ্রন্থে অমিল মুক্তক ছন্দে কবিতার সমাহার। কবিতাগুলো পড়লে মনে হবে আশেপাশের অনেক কিছুই। কিন্তু নতুনের স্বাদ দেবে। এ বৈশিষ্ট্য কবির প্রধান সার্থকতা বলে মনে করি। কবিতাগুলো পড়লে কবিমানস যথেষ্ট পরিপূর্ণ বলে মনে হয়। কিছু ক্ষেত্র ব্যতীত, কবিতার উপমা, চিত্রকল্প বা অলংকার ইত্যাদি প্রয়োগে যথার্থতা ( অ্যাক্যুরেসি) বলে দেয় কবির কল্পনাশক্তির ডানা অনেক দূর পর্যন্ত বিস্তৃত।

ইতিহাস-ঐতিহ্যের উপাদানের প্রয়োগেও কবি সিদ্ধহস্ত। এখানেও কবি মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়েছেন আলোচিত পঞ্চম কাব্যগ্রন্থে। কবিরা আশাবাদী। হাশিম কিয়ামও আশাবাদীর দলে। হতাশা ও নৈরাজ্যবাদ ছেড়ে নতুন এক পৃথিবী দেখার তীব্র আকাঙ্ক্ষা তার। নমুনাস্বরূপ কয়েকটি কবিতাংশ দিয়েই শেষ করি: ‘পারমানবিক চুল্লির নিশ্বাসে (প্রিন্টে নিশ্বাসে লেখা হয়েছে) পৃথিবী হবে কবিতাময়’ অথবা ‘লাবণ্য ফালাফালা করে, আগুনের পাখা মেলে/উড়ে যাবে আরেক আনকোরা পৃথিবীর খোঁজে (দুধদাঁত)’। কবির আশা পূর্ণ হোক। আমি বইটির বহুল পাঠ ও প্রচার কামনা করছি।

আরও পড়ুন: আবু আফজাল সালেহের শিল্পপ্রকরণ 

কাব্যগ্রন্থ: ব্যথার আকাশে ছেঁড়া মেঘের কোলাজ
কবির নাম: হাশিম কিয়াম
প্রচ্ছদ: রাজিব দত্ত
প্রকাশনী: বুনন প্রকাশনী (সিলেট)
মূল্য: ২০০ টাকা।

এসইউ/জিকেএস

আরও পড়ুন