চাঁদপুরে পাঠানো রবীন্দ্রনাথের পাঁচটি চিঠির সন্ধান
চাঁদপুরে পাঠানো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পাঁচটি চিঠির সন্ধান পাওয়া গেছে। চাঁদপুরের ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক গবেষণা-কাজের অংশ হিসেবে চিঠিগুলোর সন্ধান পেয়েছেন লেখক ও গবেষক মুহাম্মদ ফরিদ হাসান। গবেষণায় পৃষ্ঠপোষকতা করেছে চাঁদপুর পৌরসভা। সহযোগিতা করেছে সেন্টার ফর হিস্ট্রি অ্যান্ড কালচারাল রিসার্চ।
জানা যায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯২৬ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি চাঁদপুরের নিরোদপার্কে বক্তৃতা করেন। বহুকাল থেকেই কবির সঙ্গে চাঁদপুরের মানুষের সুসম্পর্ক ছিল। এই সমৃদ্ধ ইতিহাস নিয়ে ২০২১ সালে চাঁদপুর পৌরসভা থেকে প্রকাশিত হয় ‘রবীন্দ্রনাথ ও চাঁদপুরের মানুষেরা’ বইটি। চাঁদপুর পৌরসভার অর্থায়নে চাঁদপুরের লুপ্ত ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক গবেষণা-কাজের অংশ হিসেবে ২০২২ সালের শেষের দিকে ‘রবীন্দ্রনাথ ও চাঁদপুর’ বিষয়ে নতুন করে গবেষণা কাজ শুরু হয়।
গবেষক মুহাম্মদ ফরিদ হাসান বলেন, ‘চাঁদপুর বিষয়ক গবেষণা কাজের জন্য সম্প্রতি ভারতের ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব ইন্ডিয়ায় গিয়েছি। সেখানে কালীমোহন ঘোষকে লেখা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি চিঠিসূত্রে জানতে পারি, কবি চাঁদপুরের বাবুরহাট হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সারদাচরণ দত্তকে (১৮৬৯-১৯৬৫) একাধিক চিঠি লিখেছেন।’
আরও পড়ুন: ঢাকায় চীনা সংস্কৃতি কেন্দ্র প্রয়োজন
ফরিদ হাসান বলেন, ‘তখন থেকেই চিঠিগুলোর সন্ধানে নেমে পড়ি। ‘রবীন্দ্র-চিঠিপত্র’র উনিশ খণ্ডে চিঠিগুলো সংকলিত হয়নি। পরে জানতে পারি, রবীন্দ্রনাথের মহাপ্রয়াণের পর সারদাচরণকে লেখা চিঠিগুলো ১৯৪২ সালের দেশ পত্রিকায় প্রকাশ হয়। পরে ভারত থেকে ১৯৪২ সালের দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত চিঠিগুলো সংগ্রহ করতে সক্ষম হই। চিঠিগুলো রবীন্দ্রনাথ ও চাঁদপুরের সম্পর্ককে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবে। চিঠিগুলো এখনো গ্রন্থভুক্ত হয়নি।’
গবেষক জানান, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সারদাচরণ দত্তকে আন্তরিকভাবে গ্রহণ করেছিলেন। তাঁকে লেখা কবির চিঠিসংখ্যা ৫টি। কবি তাঁকে প্রথম চিঠি লিখেন ১৯১০ সালের ২২ আগস্ট। এ চিঠির একস্থানে কবি লিখেছেন, ‘কালীমোহনের কাছে অনেকবার আপনার কথা শুনিয়াছি—আপনি আমার অপরিচিত নহেন—আশা করিতেছি কোনো না কোনো সুযোগে আপনার সহিত সাক্ষাৎ হইয়া এই পরিচয় সম্পূর্ণ হইতে পারিবে।’
রবীন্দ্রনাথ দ্বিতীয় পত্রটি পাঠান একই বছরের ৮ অক্টোবর বোলপুর থেকে। তৃতীয়টি পাঠান ১৪ নভেম্বর শিলাইদা থেকে। এ চিঠি থেকে জানা যায়, সারদাচরণ দত্ত তাঁর মায়ের কল্যাণ কামনায় শান্তিনিকেতনের আশ্রমের জন্য পাঁচ টাকা পাঠিয়েছেন। কবি এই অর্থ সানন্দে গ্রহণ করেন। চতুর্থ চিঠি পাঠিয়েছেন ১৯১১ সালের ৭ জানুয়ারি। কবি তখন কুষ্টিয়ায় ছিলেন। পঞ্চতম চিঠি পাঠান ১৯১৮ সালের ৯ ডিসেম্বর শান্তিনিকেতন থেকে। চিঠি থেকে জানা যায়, সারদাচরণের পাঠানো বই পেয়ে কবি খুশি হয়েছেন। সারদাচরণ শিশুদের জন্য একটি কাগজ প্রকাশের প্রস্তাব করেন।
আরও পড়ুন: ‘হঠাৎ দেখা’ অ্যালবামের মোড়ক উন্মোচন
মুহাম্মদ ফরিদ হাসান জানান, শিগগির ‘রবীন্দ্রনাথ ও চাঁদপুরের মানুষেরা’ বইটির দ্বিতীয় মুদ্রণ প্রকাশ হবে। সেখানে পাঁচটি চিঠিই সংকলিত হবে। এছাড়া আরও একটি চিঠিও পাওয়া গেছে। তিনি এ গবেষণায় অর্থায়ন করার জন্য চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র মো. জিল্লুর রহমান জুয়েলকে ধন্যবাদ জানান।
চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র মো. জিল্লুর রহমান জুয়েল বলেন, ‘চাঁদপুরে পাঠানো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পাঁচটি চিঠির সন্ধান পাওয়া অত্যন্ত আনন্দের খবর। চিঠিগুলো চাঁদপুরের সমৃদ্ধ ইতিহাসের ধারক হয়ে থাকবে। চাঁদপুর পৌরসভা এ জেলার লুপ্ত ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি বিষয়ে কাজ করছে। আমি দায়িত্বগ্রহণের পর ১২৫ বছরের ইতিহাসে চাঁদপুর পৌরসভা থেকে প্রথমবারের মতো ৩টি বই প্রকাশ হয়। তিনটি বই-ই চাঁদপুরের ইতিহাস ও সংস্কৃতিকে ধারণ করে আছে।’
তিনি বলেন, ‘ইতিহাস-ঐতিহ্য-সংস্কৃতি যে কোনো জাতির মূল্যবান সম্পদ। চাঁদপুর পৌরসভার পক্ষ থেকে এ ধরনের গবেষণা আগামীতেও অব্যাহত থাকবে। আমি গবেষক মুহাম্মদ ফরিদ হাসানসহ তাঁর টিমকে ধন্যবাদ জানাই।’
আরও পড়ুন: ডা. স্বপ্নীলের ১০ম বইয়ের মোড়ক উন্মোচন
চাঁদপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, ‘চাঁদপুর বহুকাল থেকে সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চায় সমৃদ্ধ। বঙ্গবন্ধু, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, মহাত্মা গান্ধী, চিত্তরঞ্জন দাশ, সুভাষ বসুসহ বহু মানুষ চাঁদপুরে এসেছেন। চাঁদপুরে প্রেরিত রবীন্দ্রনাথের লেখা পাঁচটি চিঠির সন্ধান প্রাপ্তির সংবাদে আমি আনন্দিত। চাঁদপুরের এমন আরও অনেক গৌরবময় ঘটনা রয়েছে। সেগুলো উদ্ধারেও কাজ করতে হবে।’
তিনি পৌর মেয়র মো. জিল্লুর রহমান জুয়েল, গবেষক মুহাম্মদ ফরিদ হাসানসহ সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানান।
এসইউ/জিকেএস