ফখরুল হাসানের একগুচ্ছ প্রেমের কবিতা
নদীর দেশ ও প্রশস্ত বুক
স্বর্ণালির জন্য নৌকা ও নদীর দেশ হচ্ছে প্রশস্ত বুক
বুকের গহীন নদীতে চলাফেরা করে নৌকা নিয়ে।
নিঃশব্দ কিন্তু প্রবল বেগে।
সূর্য পশ্চিম আকাশে ডুবে গেলে নৌকা ও নদী শান্ত
তখন কুপিবাতি ডাঙায় জ্বেলে দেয় কাঁপা কাঁপা হাতে
উথাল-পাথাল ভালোবাসার নিবিড় আবেগঘন মুহূর্তে,
পরস্পরের সংলাপে চলতো সম্পর্কের সমীকরণ।
সম্মুখে ভাবের দেওয়াল তৈরি করে নিশ্চুপ হয়ে যেত!
বাউণ্ডুলে প্রেমিক এটাকে প্রেমযুদ্ধের কৌশল ভাবতো।
দুই হাজার, ডিসেম্বরের দুই তারিখ হঠাৎ মৃত্যু হয়
নদীর দেশের বাউণ্ডুলে প্রেমিক ও প্রশস্ত বুকের।
খুন নাকি স্বাভাবিক মৃত্যু? স্বভাবতই কৌতূহল জাগে
সাধারণ গ্রামবাসী খুনের ব্যাপারে তথ্য আজও জানে না
অবশেষে নদীর প্রশস্ত বুকে পাওয়া যায় একটি চিরকুট।
****
জল-পানি
প্রতিমার প্রতিকৃতি শৈশবে মনে দোলা দিয়েছিল
যৌবনে শারদীয় ফুল কাছাকাছি এলো নদী রূপে
তৃষ্ণায় কাতর যুবকের চোখে জল-পানির ব্যবধান!
তবুও ধ্যানমগ্ন হয়ে নদীটির নাম ধরে মন্ত্র জপে যুবক।
জল-পানির ব্যবধান ভুলে, শারদীয় ফুল খুঁজে পায়
বিশ্বাস, আলয়। জল-পানি মিলেমিশে একাকার
তারপর জীবন্ত প্রতিমা, ঢাকের তালে তালে প্রেম
নৃত্যতে হয় মশগুল। জল-পানি উৎসবে মাতে
আলো ঝলমলে শারদীয় সন্ধ্যায়, দেবীর দর্শনে
হই-হট্টগোল বাঁধিয়ে দিতো গ্রামের নওজোয়ানরা।
শারদীয় ফুল শুধু ছুঁয়ে দিতো ভক্ত পূজারির মন!
আশাহত হয়ে স্বপ্ন ভাঙে গ্রামের শতশত যুবকের
শারদীয় ফুল ছুঁতে অসংখ্য রাত কেটেছে তপস্যায়
মনবৃক্ষে প্রেমাঞ্জলি, শোনাতে হয়েছে ভজনগীত।
এখনো মনে দোলা দেয় যৌবনের জীবন্ত প্রতিমা!
দেবী এখন... হয়তো গভীর ঘুমে, নয়তো কলমে।
****
স্বর্ণালি তবুও হলো না
বিভিন্ন উপায়ে বিভিন্ন রূপে প্রেম ছিনিয়ে নিতে
কখনো প্রত্যক্ষভাবে লোকালয়ে জড়িয়ে ধরে
কখনো পরোক্ষভাবে ইশারায় কামনার ইঙ্গিত!
প্রেমের ঝড়-তুফান হয়ে দুমড়েমুচড়ে দিতে।
প্লাবনের মতো প্রকাশ্য প্রেমের ভয়ানক ক্রীড়া।
কখনো ফসল-পোড়ানো অনাবৃষ্টির মতো নিঃশব্দে
মহামারির মতো অদৃশ্যভাবে শরীরে শরীর লেপ্টে
কখনো তৈলাক্ত দেহ রাতচোরের বেশে চুপিচুপি
শস্ত্রসজ্জিত নিষ্ঠুর ডাকাতের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে।
প্রেম ছিনিয়ে নিতে।
স্বর্ণালি, তবুও হলো না ঐকান্তিক বাসনা পূর্ণ!
প্রস্থানপূর্বে জাগতিক-প্রেমের সমস্ত দেনা-পাওনা
দায়-দায়িত্ব চুকিয়ে নেওয়া হলো না।
এসইউ/জিকেএস