সৌমেন্দ্র গোস্বামীর চারটি কবিতা
একটি বার্তা পাঠাব বলে
তোমাকে একটি বার্তা পাঠাব বলে
বহুবার মুখোমুখি হয়েছি পরীক্ষার
উত্তোলন করেছি বন্ধকি জমির দলিল
পরিশোধ করেছি গৃহনির্মাণ ঋণ।
বার্তা পাঠাব বলে ঘরের মেঝে ফুঁড়ে
বসিয়েছি বর্ণিল টাইলস
মাটির টবে ফুটিয়েছি জীবন্ত ফুল
রঙের বর্ণচ্ছটায় আলোকিত করেছি আসবাবপত্র।
একটি বার্তা পাঠাতে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে
মিছিলে মিটিংয়ে আমার এখন অবাধ যাতায়াত
সুচেতনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে
মাথা পেতে গ্রহণ করেছি অভিশাপ!
এভাবে একটি বার্তা পাঠাতে গিয়ে
আঙুল হতে দিনের পর দিন
ফিরিয়ে নিয়েছি আগুনকাঠি
গুছিয়ে চলেছি নিজেই নিজের নিজেকে।
****
জলফড়িং
দিতে পারো কেউ,
আমাকে একটা জলফড়িং?
যৌগিক চোখ, স্বচ্ছ পাখা
আর অপ্রকাশিত ঠোঁটে উড়তে উড়তে
যে ছুঁয়ে দেবে সুখ খাওয়া—
আমার শাশ্বত সব দিন
মুহূর্তেই জ্বলে উঠবে ফানুস জীবন
শিহরিত হবে ঘুমন্ত হৃদয়
শিরা-উপশিরা জুড়ে জাগরিত হবে
সঞ্জীবনী সুধার তৃষ্ণা
অপ্রাপ্তির আর্তনাদে, কাঁদতে ভোলা
চোখ ঝরাবে অশ্রু
মুছে যাবে জীবনের সব ভুল,
সব অপ্রয়োজনীয় স্মৃতি।
দিতে পারো কেউ,
আমাকে একটা জলফড়িং?
****
অসফলতা
রূপকের খেলায় বদলে যাওয়া
কবিতার শরীরের মতোন,
গোপন আশার কথাটিও রয়ে যাবে গোপনে।
ফড়িংয়ের পায়ে কোনোদিন শিকল পরায়নি কেউ,
উড়তে উড়তেই ছিঁড়ে গেছে তার ক্লান্তির ক্লাস্টার।
****
কবির জীবন
সোনালি দিন হয়তো ফিরবে না আর,
রাত ফুরোবে কেবল সূর্যের প্রতীক্ষায়!
ফরমালিনে অভ্যস্ত মাছিগুলোও গন্ধ শুঁকে
বই বাজারে ঢুকে পড়বে
অজস্র অকবিতা ছাপা হবে কবিতার নামে
কাগজে, কলমে।
ঘুড়ি প্রতিযোগিতার স্টাইলে চলবে বইয়ের বিজ্ঞাপন
সোশ্যাল মিডিয়াজুড়ে
লেখকে লেখকে কটূক্তি, প্রশস্তিতে
ভরে যাবে কমেন্ট সেকশন
শুধু জীবনানন্দরা থাকবেন অনাদরে, অনাগ্রহে।
বোদ্ধা ধ্বজাধারী কেউ কেউ করবেন প্রতিবাদ
সুবিধে নিয়ে কেউ বা করবেন প্রশস্তি;
শব্দ ব্যবসায়ীদের কেউ পাতবেন ফাঁদ
কেউ না থাকা এ শহরে
তরুণদের কাছে টানে যে ক’জন
তাঁরা আমার কাছে পূজনীয়, নমস্য।
তারপরও বদল হবে না কিছুর
এভাবেই চলেছে এতদিন, ভবিষ্যতেও চলবে
শুধু থমকে যাবে না জীবনান্দদের কলম,
জীবনানন্দরা আগেও থামেনি, তাঁরা থামবে না কোনোদিন
যাপন করবে কবির জীবন।
এসইউ/জিকেএস