শান্তা আফরিনের তিনটি কবিতা
মেঘ
তাহার অনেক মেঘ ছিল,
অনেক অনেক মেঘ ছিল
আকাশ সম ভালোবাসার
সফেদ সাদা মেঘ ছিল,
কখনো কালো, কখনো ধূসর
রঙিন রঙের মেঘ ছিল...
তপ্ত গগন, উষ্ণ রৌদ্র বেলায়
মেঘের ডাকে সে বৃষ্টি নামায়।
তাহার অনেক মেঘ ছিল
হাড় কাঁপানো শীতের বেলায়
সে ভেসে রয় মেঘের ভেলায়।
চাঁদের দেশে আলোর বেশে
মেঘের বুকে মুখ লুকায়।
নদীর ঢেউয়ে সকাল-সন্ধ্যে
ছলাৎ ছলাৎ সুর জাগায়।
তাহার অনেক মেঘ ছিল
মন খারাপের আকাশজুড়ে
সফেদ সাদা মেঘ ছিল।
****
ফেরিওয়ালা
কেন এমন শিশির ঝরা ভোর,
এমন কেন এই উদাস সকাল,
জানালায় চিকচিকে জল
দূর দৃষ্টিকোণ।
কেন এমন খালি খালি সব
ছুঁতে চেয়েও যায় না ধরা,
তাই কি আজ নীল আকাশ
বিষাদ কালো মেঘে ভরা!
কেন এত ধীর নদীর স্রোত
কোথায় আজ ডাহুক পাখির দল
প্রজাপতির পাখা আজ ক্লান্ত অনেক বুঝি
কেন লাগে সুরহারা আজ সবই।
কেন আজ সুবাস বিহীন ফুল
কোথায় আজ রংধনুদের রং,
যেন সব ধূসর চরাচর,
নিকষ কালোয় মাখা।
আমি তবু হাটছি পথে একা,
ভাবছি যারে, খুঁজতে তারে
যদি হয় এক পলকে দেখা,
তাই হয়েছি এই আমি আজ
খোঁজের ফেরিওয়ালা।
****
কেবল একবার
তুমি আমার জীবনে এসেছিলে বিকেলের নরম রোদ হয়ে,
আমি ফিরে তাকাইনি একদম।
এসেছিলে মোহাবিষ্ট গানের সুর হয়ে
আমি শুনিনি যদিও।
তারপর তুমি হলে গোধূলির রাঙা আকাশ
আমি চোখ মেলিনি তখনও।
তারপর তুমি এলে কবিতা হয়ে,
আমি পড়িনি তবুও।
এরপর এলে সমুদ্রের স্রোতের মতো
আমি ভাসাইনি নিজেকে
এরপর হলে দমকা হাওয়া,
আমি এড়িয়ে গেলাম সন্তর্পণে।
তবু হাল না ছাড়া নাবিকের মতো,
তুমি এবার এলে মেঘ হয়ে,
হঠাৎ গভীরভাবে হলো শুভদৃষ্টি
এরপর ভিজিয়ে দিলে আমায় বৃষ্টি হয়ে।
বাঁধনহারা আমি আর পারিনি নিজেকে ধরে রাখতে,
কী করবো বলো, আমি যে বৃষ্টি বড় ভালোবাসি।
এরপর রাঙিয়ে দিলে রংধনুর সাত রঙে।
হঠাৎ সূর্যের আবির্ভাবে প্রস্থান তোমার।
বলেছিলে এভাবেই তাকিয়ে থেকো
ওই লাজুক কাজল চোখে...
দেখা দেবো বারবার বৃষ্টিভেজা প্রহরে,
রাঙিয়ে দেবো ঠিক এভাবে রংধনু হয়ে।
সেই থেকে আমি আজও চেয়ে আছি, কাজল চোখে
সেই প্রতীক্ষায়, শুধু একবার চেয়ে দেখবো বলে।
এসইউ/জিকেএস