সাইফুল ইসলামের কবিতা: কেবলি মনে পড়ে
দুপুরে ভাত খেতে বসলে কেবলি মনে হয়,
আমি প্রকৃত অর্থেই মফস্বলের ছেলে।
মফস্বলের ছেলেদের খাওয়ার স্টাইলটা ভিন্ন।
নগরের অভিজাত শ্রেণির রেস্টুরেন্ট আমাদের অতটা স্পর্শ করতে পারে না।
চামচ দিয়ে নেড়ে-চেড়ে খাবার মুখে তুলে নিতে-নিতে
মনে পড়ে যায় ফেলে আসা শৈশবের কথা।
কী ছিল আমাদের খাবারের মেন্যুতে?
আলু, ডাল-ভাত কম দামি সিলভার কাপ মাছ কিংবা তেলাপিয়া ছাড়া?
এসব খেতে-খেতে এত বিরক্ত হতাম যে,
মনে হতো ঈশ্বরের কাছে চলে যাই, তাঁর কাছে চলে গেলে
পেয়ে যাব বেহেশতের সব সুস্বাদু খাবার।
মাংস, পোলাও এসব তো শুধু ঈদেই রান্না হতো
সঙ্গে থাকতো বাজারের সবচেয়ে কম দামি সেমাই।
ভাতের বাহিরে গিয়ে আমরা খেতাম
মুড়ি-মিঠাই, খই, চিড়া, নারিকেল, ছাতু, নাড়ু
সেসব একদিন ছিল বটে।
মফস্বল আমাকে যতটা পরম মমতায় আপন করে নেয়;
নগর কি ততটা পারে?
সেই ছেলেবেলার দিনগুলো মনে পড়ে যায়
একটা ডিম তিনজনের ভাগ করে খাওয়া।
মাধ্যমিক স্কু্লে
দুপুরের টিফিনে কতদিন না খেয়ে পার করে দেওয়া
একটা কাঁধব্যাগের জন্য হাহাকার
পুরাতন স্কুল ড্রেস
হায় আমাদের পড়াশোনা
নিজের সাথে নিজের সংগ্রাম
অর্থ আমার কাছে তাই মূল্যবান হয়ে ওঠে
হ্যালির ধূমকেতুর মতো।
এখন তো গ্রামও বদলে গেছে
আমার কেবলি মনে পড়ে
সন্ধ্যায় হারিকেন কিংবা চেরাগ জ্বালিয়ে পড়তে বসার দিনগুলোর কথা
মনে পড়ে হাতপাখার বাতাস।
অন্য বাড়ির টিউবওয়েল থেকে মাগরিবের আজানের সময়
কলসি ভরে পানি নিয়ে আসার দিনগুলোর কথা;
আর চোখের সামনে ভেসে ওঠে একটা পাকা ধানক্ষেত;
আমি মাথায় গামছা বেঁধে ধান কাটছি,
শরীর থেকে বেয়ে-বেয়ে পড়ছে ঘাম।
জেএস/এসইউ/জিকেএস