ভিডিও EN
  1. Home/
  2. সাহিত্য

রবীন্দ্রনাথের রাজনৈতিক দর্শনের সীমানা

সিদ্ধার্থ শংকর জোয়ার্দ্দার | প্রকাশিত: ০৩:০৩ পিএম, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২২

রবীন্দ্রনাথের জাতীয়তাবাদী চিন্তার সামগ্রিক চিত্র উদ্ঘাটন করতে বিচ্ছিন্নভাবে তাঁকে বুঝলে চলবে না। তাঁর চিন্তা যে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠেছে তাকে ধাপে ধাপে অনুসরণ না করলে এক ধরনের ‘স্পষ্ট ভুল’ হবে যেটাকে গিলবার্ট রাইলের ভাষায় বলা হয় ক্যাটাগরিক্যাল মিস্টেক। অনেকেই সেটা করেছেন, এমনকি রবীন্দ্র জীবদ্দশায়ও; সে কথায় আসছি একটু পরে। অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী লিখছেন, “রবীন্দ্রনাথ জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে বলেছেন। কিন্তু সেটা একটা বিশেষ ধরনের জাতীয়তাবাদ; সেটির চরিত্র পুঁজিবাদী, আচরণ সাম্রাজ্যবাদী। আরেক প্রকার জাতীয়তাবাদ আছে; সেটি আত্মপরিচয়ের ও আত্মরক্ষার, এই জাতীয়তাবাদ কেবল রাজনৈতিক নয়, অর্থনৈতিকও। রবীন্দ্রনাথ সারাজীবন এর পক্ষে কাজ করেছেন। বাঙালির জাতীয় সত্তার বিকাশ; জাতীয় পরিচয় সুসংহতকরণ এবং অর্থনৈতিক স্বাবলম্বন অর্জনের ক্ষেত্রে তার ভূমিকা তুলনাবিহীন” (রবীন্দ্রনাথ কেন জরুরি, যুগান্তর, ৭ আগস্ট ২০২০)। আসলে জাতীয়তাবাদ ও আন্তর্জাতিকতাবাদ নিয়ে তাঁর অবস্থানের মাঝে বিশেষ কোন অস্পষ্টতা নেই। কারণ একজন ইউটিলিটারিয়ান প্যাসিফিস্ট হিসেবে তিনি সকল মানবজাতি নিয়ে চিন্তা করেছেন যেখানে ক্ষুদ্র দৈশিক সীমানা খুব বেশি গুরুত্ব পায়নি। তাঁর নিজের কথায় পরিষ্কার হবে এটা উপলব্ধি করলে, “I have no hesitation in saying that those who are gifted with the moral power of love and vision of spiritual unity, who have the least feeling of enmity against aliens, and the sympathetic insight to place themselves in the position of others will be the fittest to take their permanent place in the age that is lying before us, and those who are constantly developing their instinct of fight and intolerance of aliens will be eliminated”. (Nationalism in India)।

এক সময়ের বিশ্বভারতীর উপাচার্য পবিত্র সরকার লিখেছেন, ‘জাতীয়াবাদ’ শব্দটা ভয়ানক গোলমেলে। কারণ বিশেষ কোন সংজ্ঞার ভেতরে এর মর্মার্থ পাওয়া যায় না। এক এক পরিস্থিতিতে এর ব্যবহার হয়ে থাকে ভিন্ন প্রেক্ষাপটে। যেমন সামন্তবাদের একটা চেহারা, উপনিবেশবাদের অন্যটা। অস্ট্রেলিয়া ও আমেরিকাতে উপনিবেশের যে প্রকৃতি ভারতবর্ষ ও চীনে তার চেহারা আলাদা। এজন্য অধ্যাপক সরকার মনে করেন, এক এক দেশের ব্র্যান্ড অনুযায়ী জাতীয়তাবাদের চেহারাও অন্য রকম হয়ে ওঠে। (Pabitra Sarkar, Tagore’s idea of Nationalism, May 9, 2022)।

তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথের বিরুদ্ধে এক ধরনের আক্রমণ এসেছে যে তিনি জাতীয়তাবাদের বিরোধিতা করেছেন ইংরেজ শাসনের স্বপক্ষ গ্রহণ করার জন্য। আবার এর বিপরীতটা কম না। এ ব্যাপারে তিনি নিজেও সজাগ ছিলেন। তিনি নিজে একটা পরিস্থিতি বর্ণনা করছেন এভাবে, “আমার সঙ্গে এই ছোটো-ইংরেজের যে-একটা বিরোধ ঘটিয়াছিল সে কথা বলি। বিনা বিচারে শত শত লোককে বন্দী করার বিরুদ্ধে কিছুদিন আগে একখানি ছোট চিঠি লিখিয়াছিলাম। ইহাতে ভারতজীবী কোনো ইংরেজি কাগজ আমাকে মিথ্যুক ও extremist বলিয়াছিল। ইহারা ভারত শাসনের তকমাহীন সচিব, সুতরাং আমাদিগকে সত্য করিয়া জানা ইহাদের পক্ষে অনাবশ্যক, অতএব আমি ইহাদিগকে ক্ষমা করিব। এমন-কি, আমাদের দেশের লোক, যারা বলেন আমার পদ্যেও অর্থ নাই, গদ্যেও বস্তু নাই, তাঁদের মধ্যেও যে দুই-একজন ঘটনাক্রমে আমার লেখা পড়িয়াছেন তাঁহাদিগকে অন্তত এ কথাটুকু কবুল করিতেই হইবে যে, স্বদেশী উত্তেজনার দিন হইতে আজ পর্যন্ত আমি অতিশয়-পন্থার বিরুদ্ধে লিখিয়া আসিতেছি”। (কালান্তর, ছোট ও বড়, রচনাবলী, ১২, ৫৯৩)। ইঙ্গিতটি নিশ্চয়ই সুস্পষ্ট। স্বদেশী আন্দোলনের জন্য যারা অস্ত্র হাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন কিংবা তথাকথিত স্বরাজের পক্ষে সোনার পাথর বাটির খোঁজ করেছেন তাঁদের পক্ষে তিনি নেই। তবে তাঁর স্বরাজ আলাদা। সেটা ভীষণ দার্শনিক বোধে উদ্দীপ্ত সর্বজনীন মানবতাবাদ যার একদিকে আছে ভারতবর্ষের চিরকালীন আধাত্মচেতনা; অন্যদিকে উদার মানবতার মুক্ত বাতায়ন। শুনি তাঁর কথা, “India has never had a real sense of nationalism. Even though from childhood I had been taught that the idolatry of Nation is almost better than reverence for God and humanity, I believe I have outgrown that teaching, and it is my conviction that my countrymen will gain truly their India by fighting against that education which teaches them that a country is greater than the ideals of humanity”. (Nationalism).

কিন্তু আগেই বললাম, রবীন্দ্রনাথকে বুঝতে ‘সময়’টা খুব জরুরি অর্থাৎ রবীন্দ্রচেতনার বিকাশ যে সময়ের হাত ধরে উপরে উঠেছে তার কাল-পার্বিক উত্তরণ লক্ষ্য করার মতো বিষয়। কারণ উনবিংশ শতকের শেষপাদে যে রবীন্দ্রনাথ ছিলেন ভারতের একটা প্রাদেশিক জমিদারী ভূমি ব্যবস্থাপক, তিনি বিশ শতকের মাঝামাঝি এসে বিশ্বযাত্রীর পথে উদার একজন মানবতাবাদী। একজন ভারতীয় নাগরিক থেকে বিশ্বনাগরিক। এর মাঝে কেটে গেছে অন্তত পাঁচ দশকের ইংরেজ শাসন ও বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তীতে পরিবর্তিত গ্লোবাল এক্সটানালিজম। খুব সঙ্গত কারণে অনেকেই তাঁর অবস্থানকে ‘এন্টিনমিক্যাল প্যারাডক্স’ হিসেবে ভেবে বসেন। একটা কথা স্বীকার করতেই হবে, রবীন্দ্রনাথের জাতীয়তাবাদ বিরোধিতা কিন্তু সর্বাংশে অ্যান্টি-প্যাট্রেটিজম নয়। এর একটা সুন্দর ব্যাখ্যা আমরা পাই এস গোপালকৃষ্ণানের সাথে আশিস নন্দীর এক সাক্ষাৎকারে। অধ্যাপক আশিস বলছেন, ‘‘আমি তাঁর স্বদেশপ্রেম ও জাতীয়তাবাদী চিন্তার মাঝে একটা পার্থক্য টানতে চাই। রবীন্দ্রনাথ ছিলেন একজন দেশপ্রেমিক। দেশপ্রেমিক মানে যিনি নিজের দেশকে ভালোবাসেন। এটা এক ধরনের সীমানাকেন্দ্রিক ব্যাপার। এ বিষয়টা শুধু মানুষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। মনুষ্য প্রজাতি ব্যাতিত অন্যান্য প্রাণীর মধ্যেও এটা দেখা যায়। কুকুর বিড়ালের ভেতরও এমন অনুভূতি আছে। অনেক সময় সংবাদ আদান প্রদানে পাখির ব্যবহারও দেখা যায়। এক সময় এই পদ্ধতির চল ছিল। এটাকে বলা হয় আঞ্চলিকতা। দেশপ্রেম হচ্ছে এই ধরনের একটা আঞ্চলিকতা। একটা মানুষ যেখানে জন্মেছে, বেড়ে উঠেছে, যাকে ঘিরে তৈরি হয়েছে স্মৃতি সেই মাতৃভূমির প্রতি তার থাকে একটা আবেগ। জাতীয়তাবাদ সেখানে অন্যকিছু। জাতীয়তাবাদ কোন আবেগের সাথে জড়িত বিষয় নয়। এটা একটা মতাদর্শ। একটা জাতি ধারণার সাথে এটা সংযুক্ত।

রবীন্দ্রনাথের বিশ্বাস ছিল ভারতবর্ষ গঠিত হয়েছে সম্প্রদায়কেন্দ্রিকতার উপর ভিত্তি করে, কোন জাতি ধারণার ওপর নয়। কাজেই ভারতবর্ষে কোন জাতি গঠন করার মানে হচ্ছে সুইজারল্যান্ডে নৌবাহিনী গঠনের মতো ব্যাপার। কারণ জাতি বা জাতীয়তাবাদ হচ্ছে দেশের সকল মানুষের একটা অভিন্ন জাতি হিসেবে গণ্য করা”। (সাক্ষাৎকার)।

ভারতীয় জাতীয়তাবাদ ও তৎপরবর্তী রাজনৈতিক পারিপার্শ্বিকতা নিয়ে রবীন্দ্রনাথের অবস্থান বেশ সুস্পষ্ট। কারণ তাঁর কৈশোর থেকে শুরু হয়ে বয়ঃপ্রাপ্তির প্রায় প্রতিটা ধাপ ভারতীয় রাজনীতিতে ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট অতি ঘটনাবহুল। দু’দুটো বিশ্বযুদ্ধের অভিজ্ঞতা তিনি অর্জন করেছিলেন। তা ছাড়া আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, ইংরেজদের ভারত শাসনের শেষ পঞ্চাশ বছরের সাক্ষী ছিলেন তিনি, যার প্রতিটা মুহূর্ত ছিল উত্তেজনায় পরিপূর্ণ। অনেকে মনে করেন, রবীন্দ্রনাথ কাব্যজগতে যেমন শ্রেষ্ঠ; তেমনই রাজনৈতিক ভুবনেও প্রচণ্ড সচেতন একজন অ-রাজনৈতিক ব্যক্তি। তাঁর বিস্তর লেখা ভারতীয় ইতিহাস, সংস্কৃতি ও উন্নয়নকে ঘিরে এগিয়েছে। তাঁর চিন্তার পরিণতির সাথে সাথে তিনি শুধু ভারতবর্ষ নয় সমগ্র বিশ্ব নিয়ে ভেবেছেন, লিখেছেন এবং মতামত রেখেছেন। এমনকি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরপরই প্রতীচ্য দেশে বক্তৃতা দিয়েছেন জাতীয়তাবাদের ওপর। এ ক্ষেত্রে ১৯১৭ সালে প্রকাশিত Nationalism বইটা সবার কাছে অতি পরিচিত।

রবীন্দ্রনাথের রাজনৈতিক মতামত নিয়ে আলোচনার আগে একটু ইতিহাস ঘাটতে চাই। ১৯২৯ সালে ড. শচীন সেন নামে এক প্রসিদ্ধ সাংবাদিক The Political Thought of Tagore নামে একটা বই লেখেন। রবীন্দ্রনাথের জীবদ্দশায় তাঁর রাজনৈতিক দর্শনের ওপর লেখা বইয়ের প্রতি খুব সঙ্গতকারণেই তাঁর বিশেষ আগ্রহ জন্মে। অতি মনোযোগের সাথে তিনি বইটা পড়েন এবং বাংলা ১৩৩৬ বঙ্গাব্দে ‘রবীন্দ্রনাথের রাজনৈতিক মত’ শিরোনামে প্রবাসীতে একটা লেখা ছাপেন। এটা পরবর্তীতে কালান্তরে অন্তর্ভুক্ত হয়। তিনি লিখছেন, “বইখানি আমাকে পড়তে হল। কেননা, আমার রাষ্ট্রনৈতিক মত কোনো পাঠকের কাছে কিরকম প্রতীত হয়েছে তা জানবার কৌতূহল সামলাতে পারি নি”। (কালান্তর, রবীন্দ্র-রচনাবলী, পৃ ৭০০)। কিন্তু “বইখানি পড়ে আমি নিজের মতের ঠিক চেহারাটা পেলুম না। মন বাধা পেল”। (৭০১)। শচীন সেন অবশ্য পরবর্তী সংস্করণে রবীন্দ্রনাথের এই কথার জন্য খুশি হয়েছেন এবং লিখেছেন, “The book received wide appreciation and the poet himself wrote a long appreciative review of it in the Bengali monthly Prabasi”। (The Political Thought of Tagore, Preface)। তবে শচীন সেন রবীন্দ্র জীবদ্দশায় এই বইয়ের দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশ করেননি, করেছেন কবি মারা গেলে ১৯৪৬ সালে। আমরা দেখবো রবীন্দ্রনাথের রাজনৈতিক চিন্তা সম্পর্কে শচীন সেন কী লিখেছিলেন। তৎপরবর্তীতে রবীন্দ্রনাথ সেটা পড়ার পর কী প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন বা তিনি নিজে তাঁর রাজনৈতিক চিন্তা সম্পর্কে কী জানিয়েছেন।

শচীন লিখছেন, রবীন্দ্রনাথের জন্ম ভারতীয় ইতিহাসের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়ে। মাত্র কয়েক বছর আগে ইংরেজদের বিরুদ্ধে সিপাহী বিদ্রোহ হয়ে গেল। এসময় ভারতবর্ষে ইংরেজদের শাসন ও শিক্ষা বলতে গেলে গেঁড়ে বসেছে; অন্যদিকে রাজা রামমোহনের উদারনৈতিক চিন্তা এই স্রোতধারার সাথে মিশে তৈরি হয়েছে এক নতুন সমাজবোধ। কিন্তু এর বিপরীতে, শ্রেণি শাসনের গভীরে যে জাতি বৈরি সমাজকে গভীর পঙ্কে ভাসিয়েছে সেটা কিছুতেই ভুলবার নয়। এর প্রেক্ষিতে শাসক ও সাধারণের মাঝে তৈরি হয়েছে ব্যাপক ফাটল। ভারতবর্ষে ইংরেজ শাসনের বিভিন্ন ধাপে লক্ষ্য করা গেছে ইংরেজদের প্রতি সাধারণ মানুষের ব্যাপক ক্ষোভ ও অনীহা। ‘স্বাদেশিকতা’ রবীন্দ্রস্মৃতি কথায় এভাবে প্রকাশ পেয়েছে, বাহির হইতে দেখিলে আমাদের পরিবারে অনেক বিদেশী প্রথার চলন ছিল কিন্তু আমাদের পরিবারের হৃদয়ের মধ্যে একটা স্বদেশাভিমান স্থির দিপ্তিতে জাগিতেছিল। স্বদেশের প্রতি পিতৃদেবের যে একটি আন্তরিক শ্রদ্ধা তাঁহার জীবনের সকল প্রকার বিপ্লবের মধ্যেও অক্ষুণ্ণ ছিল, তাহাই আমাদের পরিবারস্থ সকলের মধ্যে একটি প্রবল স্বদেশপ্রেম সঞ্চার করিয়া রাখিয়াছিল। বস্তুত, সে সময়টা স্বদেশপ্রেমের সময় নয়। তখন শিক্ষিত লোকে দেশের ভাষা এবং দেশের ভাব উভয়কেই দূরে ঠেকাইয়া রাখিয়াছিলেন। আমাদের বাড়িতে দাদারা চিরকাল মাতৃভাষার চর্চা করিয়া আসিয়াছেন। আমার পিতাকে তাঁহার কোনো নূতন আত্মীয় ইংরেজিতে পত্র লিখিয়াছিলেন, সে-পত্র লেখকের নিকটে তখনই ফিরিয়া আসিয়াছিল। (জীবনস্মৃতি)।

এটা অস্বীকারের উপায় নেই, ভারতে ব্রিটিশ শাসনের অতি ভয়াবহতায় মানুষ ক্লান্ত ও পরিশ্রান্ত হয়ে পড়ে, বিশেষ করে ১৮৩৩ সালে নতুন এক আইনের মধ্য দিয়ে শাসনযন্ত্র পাকাপোক্ত করে তোলার আয়োজন করা হয়। এর প্রেক্ষিতে ভারতে ইংরেজ শাসন অবাধ ও নিরাপদ করে তোলার প্রয়াস পায়। কিন্তু এটা ঠিক ইংরেজদের বিরুদ্ধে সাধারণের বিক্ষোভ ভারতীয়দের প্রতি অত্যাচার ও নির্দয়তার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। শচিন সেন লেখেন, “এবং সত্যিকার অর্থে ভারতবর্ষে ইংরেজ শাসকরা হয়ে ওঠেন দাম্ভিক, হৃদয়হীন এবং এতোটাই সাঙ্ঘাতিক যে ১৮৮৫ সালে যে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস গঠিত হয় সেটা কোনভাবেই সম্ভব হতো না যদি কিনা এর প্রধান হিসেবে একজন ইংরেজকে না নেয়া হতো”। মিস্টার এলেন অক্টোভিয়ান হিউম নামে অবসরে যাওয়া একজন ইংরেজ জনপ্রশাসক কংগ্রেসের প্রধান উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করেন। এর পরে দ্বায়িত্ব নেন লর্ড ডুফেরিন। ডুফেরিন ছিলেন ভাইসরয়। মনে রাখা দরকার, ১৮৫২ সালে ব্রিটিশ ইন্ডিয়া অ্যাসোসিয়েশনের সম্মানিত সদস্য হন প্রিন্স দ্বারকানাথ। এই অ্যাসোসিয়েশান অবশ্য ব্রিটিশ পার্লামেন্টে একটা পিটিশন পাঠায় যে, ভারতীয়রা প্রত্যকে ক্ষেত্রে ব্রিটিশ শাসক কর্তৃক বঞ্চিত হচ্ছেন। অন্যদিকে ব্রিটিশ শাসকেরা অব্যাহতভাবে বলে চলছে ভারতে তাদের শাসন শুধুমাত্র এখানকার জীবনমান উন্নত করার জন্যই। উদারনৈতিক বলে কথিত বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী উইলিয়াম গ্লাডিস্টন বলেছিলেন, “Our title to be in India depends on a first condition, namely, that our being there is profitable to the Indian people, and on a second condition, that we can make Indian themselves both see and understand it to be profitable”. (সেন, পৃ ৪)।

চলবে...

এসইউ/জিকেএস

আরও পড়ুন