সানাউল্লাহ সাগরের পাঁচটি কবিতা
কারিগর
বুঝেছি তারপর
না জানার মতো দূরত্বে
সরে গেছো মেলা;
নিন্দার অন্ধরে বেসুরো আছি
ভয়ে
ভয়ে
স্ব-মোহনে এখন—
বলো তো রোজমাতাল আমি
যদি হতে পারতাম
তোমার গন্ধে মাতাল;
তুমুল এক বরফ
ক্ষিধে ও ক্ষত থেকে নদী নদী পরে—
না জাগার মতোই ঢুকে যেতাম
স্ব-মিলের তোরঙ্গে।
অথচ তারপর
নদী ও তুমি
হয়ে গেছো মাতাল তুমুল।
আলাদা করে চিনতে পারি না আর
আমিও যেতে পারি না দূর!
**
পৌষের রাখাল
বিশেষ বিশেষ মুহূর্তে
মনে হয় হেসে ফেলি
হঠাৎ কেঁদেও ফেলতে ইচ্ছে হয়
জোরে একটা নিঃশ্বাস নিয়ে চুপ হয়ে যাই
পৌষের রোদ মুখে নিয়ে হইহই করে
এগিয়ে যাই
মনে মনে
ভাবতে থাকি রোদ বিচ্ছিন্নতা;
কখনো বদলে যায় নিরবতার রং
কচি সন্ধ্যার মুখে পরি'র কবুতর খেলে
মুহূর্ত অনেক
হিসেব থাকে না কোনো...
মায়ের কাছে চিঠি লিখি—
মাগো আমি রোজ বিক্রি হচ্ছি
মাগো আমি মাথা থেকে ছিলা’র সুবাস হারাচ্ছি
মাগো আমি আর ফিরবো না...
একটি বিশেষ মুহূর্ত
নিদ্রিত গানের মতো হেঁটে হেঁটে তব্দা খেয়ে যায়
মুঠো থেকে ছড়িয়ে পড়ে কাগজের পিঁপড়া
অনেক মুহূর্ত;
কোনো হিসেব থাকে না
চিতই পিঠার ভাপে উড়ানো হেঁসেলের
হদিস থাকে না
শিশির ঠোঁটে শহরে আসা যুবকের...
**
গর্ত
সাহসের অভাবে
নিজে নিজে খুন হই।
ফুল কিনে জোয়ারে
ভাটায় গজিয়ে উঠি মৃত্যুর গায়ে—
অবসর এলেও
আবার ফিনফিনে
ঘেউ ওঠে ছুরির ঘোরে;
দাঁতে-দাঁত—মাঠের কর্ষণ ছিঁড়ে
কলমির ফেউয়ে...
রক্ত, পিতাহীন বৃক্ষের দরদে
ফুটে আছি গোলায়;
কলাইয়ের কানে মুখ রেখে
ছুটি হই—
সাহসী নই কোনো
তবুও কিনছি ঢেউ...
**
ফেক আইডি
কার শরীরে জড়িয়ে পড়েছে আলোহীন ছায়া;
এতিম বরফের পাশে
আমিও উপবাসী—
কূলে কূলে সাঁতরে সমুদ্রের কি আর চেনা যায়!
যদিও চোখের অতলে ডুবিয়েছি
ছেঁড়া আসবাব।
মিহি স্পর্শে ভয়রঙা অন্ধকার—তুমিও জেগে আছো!
কী বিনিময় আছে এসবের?
লালশব্দে মুছে দিলাম।
পেছনের আয়না—এবার ইচ্ছেমতো ঘুড়ি ভাসাও;
ঘড়ির কাঁটা গুনে অতি সাবধানে আসছে ভোর
বৈভব দাঁড়িয়ে আছে মিত্রে!
শেষ রাতে অ্যাম্বুলেন্স বাজিয়ে
কার অসুখের কথা জানিয়ে গেল...
প্রিয়তমা তুমি ভালো আছো তো?
**
রেডিও
তুমি তো রেডিও দুঃখের গীতবিতান
লাজুক সম্ভ্রমে জেগেই থাকো পুষ্পিত পিরামিডে—
বর্ণগুহায় মৈত্রীয় আখ্যান ভুলে
শিথানের কথকচাবিতে;
দুঃখ তো মাসতুতো বোন—স্বপ্নে আসা পরি—
অথবা সকালের সংবাদপাঠিকা।
দুঃখেরা স্বপ্নে উড়ে
ময়ূর সঙ্গম বাজায় প্রীতির অভ্যন্তরে—
তুমি তো রেডিও বেজে চলো সুখে-অসুখে...
এসইউ/জিকেএস