সাংবাদিক প্রণব সাহার সম্পাদনায় ‘বঙ্গবন্ধু শতবর্ষে শতস্মৃতি’
সাংবাদিক প্রণব সাহার সম্পাদনায় বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ১০০ জন সাধারণ-অসাধারণ ব্যক্তির স্মৃতিকথা ‘বঙ্গবন্ধু শতবর্ষে শতস্মৃতি’ বইটি প্রকাশিত হতে যাচ্ছে। আগামী ৬ আগস্ট বইটি প্রকাশ করবে শ্রাবণ প্রকাশনী।
প্রণব সাহা ‘কিভাবে এই বই’ শিরোনামে লিখেছেন, ‘জাতির পিতার শতবর্ষ পালন। সারাদেশ জুড়ে নানা আয়োজন। ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ। সরকারিভাবে জাতীয় কমিটি হয়ে গেল। কিন্তু টেলিভশন স্টেশন, তাও আবার ২৪ ঘণ্টার নিউজ চ্যানেল, আমরা কি করবো? বিভাগীয় প্রধানদের মিটিংয়ে এই প্রশ্ন তুললেন ডিবিসি নিউজের প্রধান সম্পাদক মঞ্জুরুল ইসলাম। একে একে নানা প্রস্তাব এলো। আমি বললাম সাধারণ মানুষের যে নেতা, যিনি বঙ্গবন্ধু, তার সাথে লাখো মানুষের আছে নানান স্মৃতি। শুধু যারা আওয়ামী লীগের নেতা তা নয়, একেবারে সাধারণ মানুষের সাথে মিশতেন শেখ মুজিবুর রহমান। সেইসব স্মৃতি যদি আমরা ধারণ করে প্রচার করতে পারি, তাহলে একটা অনন্য কাজ হবে। একটা ডকুমেন্টেশনও হবে। প্রস্তাবটা সমর্থন করলেন মঞ্জুরুল ইসলাম। কাজ শুরু হলো।
পরিকল্পনাটা উচ্চাভিলাষী ছিল। কারণ এসব জোগাড় করা এবং বছরব্যাপী তা প্রচার করা চাট্টিখানি কথা নয়। যা হোক ডিবিসি নিউজের টিম ঝাঁপিয়ে পড়ল। প্রথমে আমরা ভেবেছিলাম এটা হবে বঙ্গবন্ধুর সাথে ‘শেষ স্মৃতি, মধুর স্মৃতি’, কিন্তু পরে শুধু মধুর স্মৃতিটাই প্রচার হয়েছে ডিবিসি নিউজে। সারা বাংলাদেশের ডিবিসি নিউজের প্রতিনিধিরা সেই স্মৃতি সংগ্রহ করেছেন। ঢাকার রিপোর্টাররা সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। সব মিলিয়ে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে তা চলেছে। টেলিভিশনের পর্দায় দেখে অনেকেই নিজে থেকে ফোন করে বঙ্গবন্ধুর সাথে তার স্মৃতি প্রচার করতে চেয়েছেন। আমরা বড় নেতাদের বাইরে প্রান্তিক মানুষের স্মৃতিও প্রচার করেছি। তাতে দেখা গেছে জাতির পিতা সাধারণ মানুষের সাথে যেমন আন্তরিকতার সাথে মিশতেন, তেমনি সেইসব স্মৃতি এখন অনেকের জন্যই জীবনের বড় সম্পদ হয়ে রয়েছে। এইসব স্মৃতিগুলো যখন প্রচার হচ্ছিল, তখনই ভেবেছিলাম এগুলো নিয়ে একটা বই করবো। কারণ এই স্মৃতিগুলো পড়লে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে একটা অন্যরকম ধারণা হবে। একজন বড়মাপের রাজনীতিক যিনি একটা দেশ দিয়েছেন, একটি জাতিকে সংগঠিত করেছেন, তার সহজ-সরলভাবে মানুষের সাথে মিশবার অসাধারণ দক্ষতা যে কোনো রাজনীতিকের জন্য অবশ্যই অনুসরণীয়। আর কেমন করে একজন রাজনীতিক যুগের পর যুগ মানুষের হৃদয়ে স্থায়ী আসন গড়তে পারে, তার একটা বড় প্রামাণ্যকরণ হবে বইটি।
নিজের ভাবনা প্রকাশ করার সাথে সাথে ডিবিসি নিউজের প্রধান নির্বাহী মঞ্জুরুল ইসলাম তাৎক্ষণিকভাবে তাতে সায় দিয়েছিলেন বলেই বইটি সম্পাদনায় সাহস পেয়েছি। আর ভিডিও সম্পাদনার সময় ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জেনে স্মৃতিগুলো সংরক্ষণ করেছিল আফজাল হোসেন মাসুম। আর পরিকল্পনায় শুরু থেকে যুক্ত হয়ে পাণ্ডুলিপি তৈরির দুরূহ কাজে সাহায্য করেছে আকরামুল ইসলাম শিপলু। বই প্রকাশের জন্য সাহায্য চাইতেই এককথায় রাজি হয়েছিলেন শ্রাবণ প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী রবীন আহসান। বলা মাত্রই বইটির ভূমিকা লিখে শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার ঋণে আবদ্ধ করেছেন ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন। এদের সকলের কাছে অসীম কৃতজ্ঞতা। বইটিতে যাদের স্মৃতিচারণ আছে, তাদের পরিবারের কাছেও এ এক অনন্য সংগ্রহ হবে বলেই আশা করছি। কাছে থেকে দেখা মানুষের বর্ণনা থেকে, ভবিষ্যৎ প্রজন্মও জাতির পিতার একটি নিজস্ব প্রতিকৃতি আঁকতে পারবে বলেও বিশ্বাস করি।’
বইটির ভূমিকায় ‘বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি জীবন্ত হোক পাঠকের কাছে’ শিরোনামে মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন লিখেছেন, ‘ইতিহাসের মহনায়ক বাঙালি ও বাংলার হৃদয়ের ধন, নয়নের মণি, মনের মুকুরে নিত্য বিরাজমান চিরভাস্বর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী উদযাপনে বছরব্যাপী অনুষ্ঠানমালা সমাপ্তির পথে। এর মধ্যে অনেক প্রকাশনা, প্রামাণ্য দলিল, ভিডিও এবং অন্যান্য মাধ্যমে আমরা বঙ্গবন্ধুর অবিসংবাদিত নেতৃত্ব, মোহনীয় ব্যক্তিত্ব সাংগঠনিক ক্ষমতা, নিরলস ভয়ডরহীন প্রচেষ্টায় দেশ স্বাধীন করে কল্যাণ রাষ্ট্র সোনার বাংলা গঠনে হাজারো ঘটনা জানতে পারি।
ডিবিসি নিউজের সম্পাদক শ্রী প্রণব সাহা ‘বঙ্গবন্ধু শতবর্ষে শতস্মৃতি’ নামে একটি ব্যতিক্রমধর্মী বইতে জাতির পিতার জানা-অজানা একশত টুকরো ঘটনাকে একসাথে করেছেন বিভিন্ন মানুষের জবানিতে। এই কাজ করে তিনি আমাদের কৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ করেছেন। প্রণব একজন ইতিহাস আশ্রয়ী, সত্য অনুসন্ধানী এবং বস্তুনিষ্ঠ বিশ্লেষক। তার সম্পাদনায়, সাধারণ মানুষের কথায় জাতির পিতার স্মৃতি পাঠকের সামনে জীবন্ত হয়ে উঠবে। সম্পাদককে অভিনন্দন।
ইতোমধ্যে দু’এক জায়গায় প্রকাশ করে বঙ্গবন্ধুর সাথে আমার প্রথম দর্শনের ঘটনাটিকেও পাঠকদের নজরে আনা প্রাসঙ্গিক মনে করছি। ১৯৭৩ সালের আগস্টে আমি যেদিন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে উপসচিব নথি-২ হিসেবে কাজে যোগ দিলাম, সেদিন বিকেল ৩টায় পুরাতন গণভবনের দোতলায় দুরু দুরু বক্ষে কদমবুচি করে প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানের সামনে হাজির হই। অনেক হালকা ও ভারী কথার পর শেষে তিনি বললেন, ‘দেখরে ফরাস আমি কিন্তু গরীব দেশে দরিদ্র মানুষের চাষাভূষা শ্রমজীবী খেটে খাওয়া মানুষের প্রধানমন্ত্রী। তোর মাধ্যমে আমার কাছে ঘামের গন্ধওয়ালা, ময়লা কাপড়ে, ঘাবড়ে যাওয়া যারা গণভবনে আসবে তারাই আমার প্রকৃত বন্ধু। তাদের কাজ করে দিস বাবা।’ জাতির পিতাকে এই সকল জীর্ণ-শীর্ণ খেটে খাওয়া মানুষদের মাঝেই থাকতে দেখেছি। উপরতলার ড্রয়িংরুমে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে দেখিনি।
শ্রী প্রণব সাহার বইটি পাঠক সমাজে সমাদৃত হউক।’
এসইউ/জিকেএস