সবাই একুশে বইমেলার জন্য অপেক্ষা করে থাকে : মোস্তফা কামাল
কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক মোস্তফা কামাল ২৫ বছর ধরে বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করছেন। তাঁর রয়েছে একাধিক জনপ্রিয় উপন্যাস এবং রম্য রচনা ও প্রবন্ধ গ্রন্থ। সবমিলিয়ে এ পর্যন্ত তাঁর গ্রন্থ সংখ্যা ৮৫। অমর একুশের বইমেলাকে সামনে রেখে লেখালেখির রজতজয়ন্তীতে উপনীত মোস্তফা কামালের সঙ্গে কথা বলেছেন লেখক, অধ্যাপক ড. মিল্টন বিশ্বাস। জাগো নিউজের পাঠকের জন্য সাক্ষাৎকারটি এখানে প্রকাশ করা হলো।
জাগো নিউজ: ২৫ বছর ধরে লিখছেন। লেখক হওয়ার ইতিহাসটি সংক্ষেপে বলুন। কেন লেখক হলেন?
মোস্তফা কামাল: লেখক সাংবাদিক হওয়ার বাসনাটা কিশোর বয়স থেকেই। এ বিষয়ে কেউ যে আমাকে উৎসাহ জুগিয়েছে কিংবা আগ্রহ সৃষ্টিতে কোনো ভূমিকা রেখেছে তা কিন্তু নয়। আমি ছোটবেলা থেকেই প্রতিবাদী স্বভাবের। অন্যায় অত্যাচার অনিয়ম একদম সহ্য করতে পারি না। ভেতর থেকেই প্রতিবাদটি সঞ্চারিত হয়।
আমাদের আন্ধার মানিক গ্রামটি হিজলা উপজেলা লাগোয়া একটি উন্নত গ্রাম। সঙ্গত কারণেই হিজলা উপজেলার সঙ্গে আমাদের যোগাযোগটা বেশি। হিজলার ওপর দিয়ে বয়ে চলা মেঘনায় বিশাল চর জাগলো। সেই চরের দখল নিয়ে লাঠিয়াল জোতদারদের মারামারি কাটাকাটি হতো। দরিদ্র কৃষকের ধান লুট করতো। এসব দেশে আমি ভাবতাম, এসব অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের একমাত্র উপায় হচ্ছে লেখালেখি। পত্রিকায় লিখলে মানুষ জানবে। প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে। আমি সাংবাদিক হলে অন্যায়ের বিরুদ্ধে লিখতে পারতাম।
আমার এখনো মনে আছে। আমি তখন ৮ম শ্রেণিতে পড়ি। সে সময় চরের অসংখ্য দরিদ্র কৃষকের ধান লুটে নিয়েছিল লাঠিয়ালরা। ওই ঘটনা জানার পর ভীষণ খারাপ লাগছিল। আমার মনে হলো ঘটনা লিখি। তারপর পত্রিকায় পাঠাবার ব্যবস্থা করি। তখন বরিশাল থেকে বেশ কিছু সাপ্তাহিক পত্রিকা বের হতো। সাপ্তাহিক বিপ্লবী বাংলাদেশ পত্রিকার ঠিকানা জোগাড় করে ডাকযোগে রিপোর্টটি পাঠালাম। তারপর অপেক্ষা করতে থাকলাম। পরের সপ্তাহে দেখলাম, রিপোর্টটি ছাপা হয়েছে। তারপর থেকে অধুনালুপ্ত দৈনিক প্রবাসী এবং বিপ্লবী বাংলাদেশে রিপোর্ট পাঠাতাম। ছড়া, কবিতা, গল্প পাঠাতাম। সেগুলো ছাপা হতো। মাকে দেখাতাম। মা ভীষণ খুশি হতেন এবং বলতেন, তুই লেখ বাবা। তুই অনেক বড় হতে পারবি। সেই থেকেই লেখালেখি শুরু। তবে ১৯৯১ সাল থেকে আমি লেখালেখিটাকে অভ্যাসে পরিণত করেছি। পড়ার অভ্যাসের মতোই লেখার অভ্যাস। প্রতিদিন দু’লাইন হলেও লিখি। না লিখলে স্বস্তি পাই না। ঠিক মতো ঘুম হয় না। ছটফট করতে থাকি। মনে হয়, কোনো কাজই বুঝি করিনি। আসলে আমার লেখক হওয়াটা হুট করে কিংবা সখের বশে হয়নি। আমার ভেতরের লেখক সত্বাটা আমাকে কিশোর বয়স থেকেই তাড়িত করেছে।
জাগো নিউজ : এদেশে লিখে জীবন নির্বাহ সম্ভব নয়। আপনার কি অভিমত। আর শখের লেখক কিংবা জনপ্রিয়তার আকাক্ষায় লেখক হওয়াকে আপনি কোন দৃষ্টিতে দেখেন?
মোস্তফা কামাল: শখের বশে লেখক হওয়া আর জাত লেখক হওয়া এক কথা নয়। লিখতে গিয়ে যদি লেখকের মধ্যে ঘোর তৈরি না হয় তাহলে কি ভালো লেখা হয়! লেখক সত্বা ভিন্ন জিনিস। ঘষেমেজে আর যা-ই হোক লেখক হওয়া যায় না।
আর জনপ্রিয়তার আকাঙ্খায় যারা লেখেন, লিখতে পারেন। তবে টিকে থাকতে হলে ভালো লেখা দিয়েই টিকে থাকতে হবে। চটুল লেখা দিয়ে হয়ত সাময়িক সময়ের জন্য কিছু পাঠক পাওয়া যায়। কিন্তু কালের চক্রে তা দ্রুতই হারিয়ে যায়।
জাগো নিউজ: একুশে বইমেলাকে কেন্দ্র করে প্রকাশনা করা একজন লেখকের জন্য অনিবার্য কি? বছরের যে কোনো সময় বই বের করলে সমস্যা কোথায়?
মোস্তফা কামাল: মাসব্যাপী বইমেলার কারণে বিপুল পরিমাণ বই বিক্রি হয়। আমাদের দেশে সারা বছর বই বিক্রি হয় না। একটা সময় ছিল, জেলায় জেলায় বই মেলা হতো। তাছাড়া বাংলাবাজার থেকে সারাবছর পাইকারি বই বিক্রি হতো। এখন সেই বিক্রি একেবারেই নেমে গেছে। জেলায় জেলায় বইমেলার প্রচলনও প্রায় উঠে গেছে। জানুয়ারি মাসে ঢাকা আন্তর্জাতিক বই মেলা হতো। এক সময় ওই মেলাতেও ভালো বই বিক্রি হতো। কিছু নতুন বইও বের হতো। কিন্তু দুই মেলা কাছাকাছি সময়ে হওয়াতে ঢাকা বই মেলা ফ্লপ করল। এই হলো সামগ্রিক অবস্থা। সঙ্গত কারণেই সবাই একুশে বইমেলার জন্য অপেক্ষা করে থাকে।
জাগো নিউজ : ২০১৬ সালের বইমেলাতে আপনার প্রকাশনা সম্পর্কে কিছু বলুন?
মোস্তফা কামাল : আপনি জানেন যে, এ বছর আমার লেখালেখির ২৫ বছর পূর্ণ হলো। আমি এবার একটি বড় কাজ করার চেষ্টা করেছি। প্রায় তিন বছরের প্রচেষ্টায় একটি বড় উপন্যাস লিখেছি। উপন্যাসের নাম পারমিতাকে শুধু বাঁচাতে চেয়েছি। এটি প্রকাশ করেছে পার্ল পাবলিকেশন্স। এর কাহিনী এক মধ্যবিত্ত বাঙালি নারীর জীবন উপাখ্যান। তার দুঃখ কষ্ট, তার জীবন সংগ্রাম। তার স্বপ্ন এবং স্বপ্নভঙ্গের কাহিনী চিত্রায়িত হয়েছে ওই উপন্যাসে। আশা করি, সুহৃদ পাঠকদের হৃদয় জয় করবে। পার্ল আরেকটি কিশোর উপন্যাস রাশেদের রাতদিন প্রকাশ করেছে। এবার অনন্যা প্রকাশ করেছে দুটি বই। হাসির উপন্যাস তেলবাজ এবং পাঁচটি সায়েন্স ফিকশন বই নিয়ে সায়েন্স ফিকশন সমগ্র-২। এছাড়া আলোঘর প্রকাশনা থেকে বের হয়েছে বালিকা বউ নামে একটি গল্পের বই। ১৫টি গল্প এতে সংকলিত হয়েছে।
জাগো নিউজ : লেখালেখিতে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে কিছু বলুন।
মোস্তফা কামাল : জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত লিখে যেতে যাই। এমন কিছু করতে চাই যা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে যায়। কালজয়ী হয়।
এইচঅার/এমএস