মোরশেদুল ইসলামের চারটি কবিতা
রাতের শবনম
হেমন্তের মিষ্টি রাতে হঠাৎ শবনম
ছুঁয়ে যায় খোলা দেহ; গাছের হৃদয়
শিহরিত, পাতায় না প্রকাশ তা হয়!
ঘাসের মতন ভিজি আমি–কী নরম
মুক্তোর ছোঁয়ায়, তার যায় যায় দম!
এতদিন পরে হলো হঠাৎ উদয়
কোত্থেকে তোমার সখী! কেটেছে সময়
ঢের–সুখের অসুখ হয়েছ একদম!
অসময়ের শবনম নামো মাঠে মাঠে
ঘাসেরা শীতল হয় কামনার ঘামে
পাখিদের পাখা ভেজে, চুপ থেকে কাটে
আরাধ্য সময়, বেদনা বাড়ে আরামে!
রাতের শবনম ঝরে ভিজিয়ে উড়ায়
ফুলে ঘ্রাণ–মরিচীকা, শূন্যতা ছড়ায়!
****
উপেক্ষিত সৌন্দর্য
ফুটেছে কাঠ মালতী, পড়ে নাই চোখে
বারেবারে দৃষ্টি যায় গোলাপের দিকে!
রাতে ফোটে শেফালিরা হয়ে যায় ফিকে
লিলিগুলো লাশ হয় ভ্রমরের শোকে;
কামিনীরা ক্লান্ত যেন কামনার ভোকে
অলির বিরহে জুঁই জ্বলে ধিকে ধিকে;
ঝরে পড়ে শ্বেতকাঞ্চন ছেঁড়ে না তো শিকে
হাস্নাহেনা হারায় ঘ্রাণ কে তারে রোখে!
বসন্তবৌরির মতো ডাকে ফুল যাকে
দিনের আলোর চাঁদ–লুকায় আকাশে
তবু কায়া দেখা যায়, তবু যেন হাসে;
কার জন্য প্রেম তার হৃদয়ের ফাঁকে?
কতশত ফুল ফোটে অদেখাই রয়,
রূপ ঝরে রৌদ্রে, খুশবু–বাতাসেই ক্ষয়!
****
কুকুরের যুদ্ধ
মানুষেরা খেয়েদেয়ে হাড়-হাড্ডি ও মাছের কাঁটা
বাইরে ফেলে দিয়ে যায়; রং-বেরঙের কুকুরেরা
দিবালোকে মারামারি করে–শুধু নিজেরা নিজেরা
নয়; নম্র বিড়ালেরও সাথে, কিছু হলুদ ঠোঁটকাটা
কাক টানাহেঁচড়া করে–কুকুরগুলোর জিভের আঠা
কাকদের ডানা ভেজায়, কেঁপে কেঁপে উড়ে যায় তারা;
রাত নেমে আসে নিচে, এই যুদ্ধে কত পিঁপড়ে মারা
পড়েছে–ইয়ত্তা নেই–বন্ধ হয়েছে তাদের ঘাটা!
আঁধারের কড়া ঘ্রাণ ডেকে নিয়ে আসে ইঁদুরদের;
তখনো দু’একটা কুকুর বাঘের মতো বসে থেকে
কালো পিঁপড়াদের দেখে শ্রম আর ধৈর্য ধরা শেখে
ইঁদুরেরা ভয় পায়, তাই বৃত্তাকারে ঘোরে ফের।
ছিঁচকে পতঙ্গরা শুধু উড়ে দেখে চলে জীবনভর
আফসোসে নিশীথ ঝরে, রাজা রাখে হাঁড়ির খবর!
****
যে তুমি হাস্নাহেনা
হাস্নাহেনার মতন রোজ রাতে ছড়াও সুবাস
আঁধারে সাপেরা আসে, সাদা-কালো পতঙ্গেরা আসে
পতঙ্গভুকেরা আসে–প্রেমিক হৃদয় অট্টহাসে
চেয়েছি বাদশাহ হতে–হয়েছি নিছক দুঃখ-দাস!
দিনভর খুঁজেছি যারে স্বপ্ন-আবরণে তার বাস–
বিনিদ্র অশান্ত মন শুয়ে থাকে বেদনার পাশে!
সুবাস হরণ করে সাপেরা ক্ষণিক ভালোবেসে
কাকের মতন আমি তা দিই স্বপ্নেই–সর্বনাশ!
তোমার আশায় গেছে কোকিলের সুরে কতকাল
গেছে বৃদ্ধ পাতা ঝরে নতুন আনন্দের আশায়
আঁধারে বিলাও ঘ্রাণ–প্রেমিকের পড়েছে আকাল?
বাতাসে বিরহ স্রোত, তোমার জন্য টালমাটাল
বয়ে যায় একা দিন, তুমি বেভোলা ঘুমে কোথায়–
অসময়ে প্রেম আসে, মিলন নয় সে তো–জঞ্জাল!
এসইউ/জিকেএস