ইকবাল পারভেজের ছয়টি কবিতা
জরার জীবন
অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যেতে ভালো লাগে না আমার
কেউ আমাকে মৃত্যু সংবাদ শুনিও না আর
কী লাভ জানিয়ে
এমন কতো কে আছে
খবর জানি না তার
সবাই এমনই থাকুক অজানা।
****
বাবা
এত দিনে শিখে গেছি একা থাকা
একা একা খেলা করা একা কথা বলা
শিখে গেছি একা একা পথ চলা
এত দিনে শিখে গেছি ঘুম থেকে জেগে ওঠা
একা একা ছুটে চলা
পথ মাড়িয়ে উড়িয়ে ধুলা
একা একা গান গাওয়া
একা একা নাও বাওয়া
একা একা নাওয়া খাওয়া
একা একা হাটে যাওয়া
একা একা সব কিছুই শিখে গেছি
তুমি ছাড়া।
****
যে শব্দ হয়নি বলা
যে শব্দটি সারাজীবন লালন করেছি হৃদয়ে
কাউকে বলবো বলে,
বলা হলো না
শব্দটি নিয়ে বড় হতে থাকি,
স্কুল-কলেজ মাদ্রাসা পার হই
পুল সাঁকো ব্রিজ কালভার্ট পার হই
বনে বাঁদাড়ে ঘুরে বেড়াই
মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকি
আমি এই শব্দের যন্ত্রণায় ঘর ছেড়েছি কতবার
পাহাড়ে চড়েছি, সমুদ্রে দিয়েছি সাঁতার
আকাশে উড়েছি পাতালে ডুবেছি
যুদ্ধে নেমেছি পতাকা এনেছি
রাস্তা বানিয়েছি দীর্ঘ
প্রাসাদ বানিয়েছি, অট্টালিকা বানিয়েছি
তাজমহল বানিয়েছি কত
শব্দটা বলা হলো না আর
****
বন্ধন
তিনি আটকালেন ভাঙন
আজ নদী চলে শান্ত স্থির
গন্তব্যে অধীর
পাথরে বাঁধলেন যিনি।
নদীর মন বোঝে এক নারী
নদীও বোঝে নারীর মন।
নদী এক নারী,
যে বাঁধে সে তারই
নদী ও নারী দুই বোন।
****
আত্মার সদগতি ও একটি সেলফি
আমার পূর্ববর্তী বক্তাগণ
তাঁর জীবনের আলোকিত দিকসমূহ অনালোকিত করেছেন
এবং পরবর্তী বক্তাগণ আশা করি
অনালোকিত দিকগুলো আলোকিত করবেন
তাঁর সম্মন্ধে বলার মতো
আমার কাছে কিছুই রইল না
আমি তাঁর আত্মার সদগতি কামনা করছি
তাঁর সাথে আমার একটি সেলফি আছে।
****
মূক বাংলাদেশ
বাংলাদেশ নামক কোনো দেশ ছিল না তখন
কবিতায় এমন দেশটি ছিল অনেক
অতঃপর আমরা কবিতার দেশটি বানালাম
বিনিময়ে আমাদের ত্রিশ লক্ষ জীবন গেল
তোমার দেওয়া স্লোগান ছিল জয় বাংলা
তোমাকে এনে বানালেন জাতীয় কবি
আর নাগরিকত্ব দিলেন,
পিতা
আর একজন আছে
হত্যাকারীকে ফিরিয়ে আনলো
নাগরিকত্ব দিলো
তার স্লোগান ছিল জিন্দাবাদ
এসবের আগে
তোমার মূক হয়ে যাওয়া সঠিক ছিল।
এসইউ/জিকেএস