ভিডিও EN
  1. Home/
  2. সাহিত্য

যে কোনো পুরস্কারই আনন্দের: ঝর্না রহমান

সালাহ উদ্দিন মাহমুদ | প্রকাশিত: ০৫:৩৩ পিএম, ৩০ জানুয়ারি ২০২২

ঝর্না রহমান বাংলাদেশি গল্পকার, কবি, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, সংগীতশিল্পী ও শিশুসাহিত্যিক। ১৯৫৯ সালের ২৮ জুন ঢাকায় তার জন্ম। তিনি আশির দশক থেকে গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ-নিবন্ধ, নাটক, কবিতা, ছড়া, ভ্রমণ, শিশুসাহিত্য লিখছেন। তিনি বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজের বাংলা বিভাগের প্রধান ছিলেন। বর্তমানে অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।

এ পর্যন্ত তার ৬০টির মতো বই প্রকাশ হয়েছে। উল্লেখযোগ্য গল্পগ্রন্থ—‘ঘুম-মাছ ও একটুকরো নারী’, ‘অগ্নিতা’, ‘স্বর্ণতরবারি’, ‘কৃষ্ণপক্ষের ঊষা’, ‘পেরেক’, ‘জাদুবাস্তবতার দুই সখী’, ‘বিপ্রতীপ মানুষের গল্প’, ‘বিষপিঁপড়ে’, ‘তপতীর লাল ব্লাউজ’ ও
‘আয়নামামি’। উপন্যাস—‘পিতলের চাঁদ’, ‘ভাঙতে থাকা ভূগোল’। কাব্যগ্রন্থ—‘জল ও গোলাপের ছোবল’, ‘হরিৎ রেহেলে হৃদয়’, ‘চন্দ্রদহন’, ‘উড়ন্ত ভায়োলিন’ (নাট্যকাব্য)। নাটক—‘বৃদ্ধ ও রাজকুমারী’। কিশোর উপন্যাস—‘আদৃতার পতাকা’, ‘হাতিমা ও টুনটুনি’ প্রভৃতি।

কথাসাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি ২০২১ সালে অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। সম্প্রতি কথাসাহিত্যে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২১ পেয়েছেন। পুরস্কারপ্রাপ্তির অনুভূতি ও লেখালেখি নিয়ে কথা বলেছেন জাগো নিউজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন কথাশিল্পী সালাহ উদ্দিন মাহমুদ—

জাগো নিউজ: সম্প্রতি ‘বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার’ পেলেন, তার জন্য অভিনন্দন। সেইসঙ্গে পুরস্কারপ্রাপ্তির অনুভূতি জানতে চাইবো—
ঝর্না রহমান: অভিনন্দনের জন্য ধন্যবাদ। পুরস্কার হলো কাজের স্বীকৃতি। স্বীকৃতির সাথে যুক্ত থাকে প্রশংসাও। তাই যে কোনো পুরস্কারই আনন্দের। আর সেটা যদি হয় সাহিত্যের জন্য, তা হলে তা আরও বেশি আনন্দের। কারণ অন্যান্য কাজের মতো সাহিত্যের ফল প্রত্যক্ষভাবে চোখে পড়ে না। লেখকের কাজের মধ্যে কোন ফল ফলে উঠছে, তা দেশ-সমাজ-সংস্কৃতি বা মানবতার কোন জায়গাটিকে স্পর্শ করছে, তার জন্য তার লেখাকে নিরপেক্ষভাবে, জহুরির চোখে যাচাই করতে হয়। যদিও একজন লেখক আপন আবেগে নিজের মনের তাগিদেই লিখে যান। তারপরেও পুরস্কারের পেছনে তার চিন্তা ও শ্রমের স্বীকৃতিগুলো যুক্ত থাকে বলে পুরস্কার আনন্দের।

জাগো নিউজ: আপনি ‘কথাসাহিত্য বিভাগে’ পুরস্কার পেয়েছেন। আমরা জানি, আপনি সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় কাজ করছেন। এতে কোনো অপূর্ণতা বোধ হয় কি?
ঝর্না রহমান: কথাসাহিত্যে জাতীয় পুরস্কার দিয়েই আমার লেখক জীবনের যাত্রা শুরু। তখন আমার একুশ বছর বয়স, ১৯৮০ সালে আমি ছোটগল্পে বাংলাদেশ পরিষদ আয়োজিত ‘একুশে সাহিত্য পুরস্কার’ পেয়েছিলাম। সেটি ছিল উদীয়মান সাহিত্যিকদের জন্য অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার। স্কুল জীবন থেকেই লিখতে শুরু করেছিলাম। তখন গল্প কবিতা, গান, ছড়া, ছোটদের জন্য লেখা—সব কিছুই লিখতাম। কিন্তু গল্পে আমি জীবন স্পর্শ করতে পারতাম। তাই গল্পেই আমার আগ্রহ ছিল বেশি। আর পুরস্কারটি আমার কথাসাহিত্যে আমার আস্থা আর আগ্রহ আরও বেশি বাড়িয়ে দিয়েছিল। আসলে পুরস্কারও নয়, আমার চারপাশের মানুষ, প্রবাহিত জীবনধারা, ক্ষুধা-দারিদ্র্য-অভাবের সাথে নিত্য সংগ্রামের পরেও মানুষের জীবনাকাঙ্ক্ষা, বেঁচে থাকার লড়াই—এসব আমাকে খুব আলোড়িত করতো। মানুষের গল্পগুলো চোখের সামনে এসে দাঁড়াতো। খুব কল্পনাপ্রবণও ছিলাম আমি। প্রকৃতি, পরিবেশ, মানব মনের গভীরতর অনুভূতি, স্বপ্নকল্পনা, রোমান্টিক তন্ময়তা আমাকে খুব আচ্ছন্ন করতো। এসব অনুভূতি মুক্তি পেত কবিতায়। এ ছাড়া প্রবন্ধ, নাটক, শিশুসাহিত্য, ভ্রমণ—সব ধরনের লেখাতেই আমার আগ্রহ। আমি মনে করি না, একই লেখকের এক ধরনের লেখা অন্যধরনের লেখাকে ব্যাহত করতে পারে বা কোনো ধরনের ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। শিল্পের কোনো ক্ষেত্রেই আমি তা মনে করি না। যিনি গান করেন, তিনি নাচও করবেন যদি তার আগ্রহ থাকে। একজন লেখকও তাই কবি, চিত্রশিল্পী, সংগীতশিল্পী সবই হতে পারেন, যদি এসব ক্ষেত্রে তার মেধা ও প্রতিভা থাকে। তবে আমার কাজের প্রধান ক্ষেত্র কথাসাহিত্যই। তাই কথাসাহিত্যে পুরস্কার আমাকে পূর্ণতার বোধই দিয়েছে। অন্য ক্ষেত্রে যদি আমার কাজ গুরুত্বপূর্ণ বলে গণ্য হয়, তবে তা-ও হয়তো একসময় পুরস্কৃত হবে। না হলেও ক্ষতি নেই। লেখক কখনোই পুরস্কারের কথা চিন্তা করে লেখেন না।

জাগো নিউজ: বাংলাদেশের কথাসাহিত্যের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে আপনার অভিমত জানতে চাই। এ সময়ের তরুণ লেখকরা কি সঠিক পথে হাঁটছেন বলে মনে করেন?
ঝর্না রহমান: আমি একজন আশাবাদী মানুষ। যখন নেতি দ্বারা আক্রান্ত হই; তখনো ইতির দিকে তাকিয়ে থাকি। কারণ, কী জীবনে, কী সাহিত্যে সব ক্ষেত্রেই অবিমিশ্র ভালো বা মন্দ বলে কিছু নেই। সাহিত্য একটা স্রোতধারার মতো। সৈয়দ হক একবার একটা অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, অনেকের লেখা একত্রিত হয়ে সাহিত্যের ধারা সৃষ্টি হয়। এর মধ্যে দু’একজন লেখক এসে সে ধারার বাঁক পরিবর্তন করিয়ে দেন। এই বাঁক পরিবর্তনকারী লেখক হলেন ভালো লেখক। ধারা তৈরি না হলে বাঁকও তৈরি হবে না। বর্তমানের কথাসাহিত্যে এই ধারা চলছে। স্বাধীনতা পরবর্তী যাঁরা প্রধান লেখক, তাঁদের মধ্যে অনেকেই প্রয়াত হয়েছেন। এই করোনাকালে, মানে দু’তিন বছরের মধ্যে চলে গেলেন সৈয়দ শামসুল হক, রিজিয়া রহমান, রাহাত খান, রাবেয়া খাতুন, রশীদ হায়দার, হাসান আজিজুল হকের মতো লেখক। পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে তাঁদের মাপের লেখক এখনো তৈরি হয়নি। তবে অনেকের লেখাতেই তার সম্ভাবনা রয়েছে। সিনিয়র লেখকদের মধ্যে যাঁরা এখনো কথাসাহিত্যকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন যেমন-সেলিনা হোসেন, সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম, জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত, পূরবী বসু, এমন অনেকের নাম করা যায়, তাঁরা সবাই শক্তিমান লেখক কিন্তু একুশ শতকে এসে প্রযুক্তির অভূতপূর্ব বিকাশ জনজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে যেভাবে প্রভাব বিস্তার করেছে, প্রযুক্তি মানুষের মনোজগতে যেসব পরিবর্তন নিয়ে এসেছে, ভাবনা চিন্তা ও মূল্যবোধ এবং কাজের ক্ষেত্রগুলোকেও যে বদলে দিচ্ছে প্রযুক্তি, এসব দিক কিন্তু তাঁদের লেখায় আসবে না। এটা আসবে এবং আসছে তরুণদের লেখায়। তরুণ লেখকদের লেখা তাই অনেক বেশি ব্যাপ্ত। অনেক বেশি প্রাণবন্ত। সেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘জীবন মরনের সীমানা ছাড়ায়ে, বন্ধু হে আমার রয়েছে দাঁড়ায়ে’র মত দেশ ও কালের সীমানা ছাড়ায়ে অনেক দূর ছড়িয়ে পড়েছে। তাদের লেখার সামনে বন্ধুর মতই ‘দাঁড়ায়ে’ আছে এক ব্যাপ্ত জীবন। তরুণ লেখকদের লেখার প্রেক্ষাপট এখন শুধু দেশ বা বাংলাদেশের গ্রাম নয়, গোটা বিশ্ব বা বিশ্বগ্রাম। আপন ভূগোল অতিক্রম করে যায় তাদের অন্বেষণ।

তরুণ লেখকরা সঠিক পথে হাঁটছেন কি না এই সিদ্ধান্ত আমি দিতে পারবো না। কারণ সাহিত্যকে কখনোই ব্যাকরণ, নীতি, বা বিধিবিধানের সীমায় আটকে রাখা যায় না। সাহিত্য স্বয়ংক্রিয় আর স্বেচ্ছাচারী এক শক্তি। তাই সেখানে থামানোর কিছু নেই। এখন দেখা যায়, তরুণদের সাহিত্যে ভাষায় এক ধরনের কথনভঙ্গি প্রয়োগ হচ্ছে। এটি না-আঞ্চলিক, না-প্রমিত। দুটি রীতিকে দলে মুচড়ে এক ধরনের রিমিক্স ভাষা তৈরি করা হয়েছে। সাধারণ পাঠক অনেকের কাছে এ ভাষা জনপ্রিয়ও হয়ে উঠছে। হয়তো ভাষার ক্ষেত্রে এটি এক ধরনের নিরীক্ষা। প্রথমে এই ভাষা আমরা, মানে আমরা যারা প্রমিত ভাষায় আর চরিত্রের প্রয়োজনে আঞ্চলিক ভাষা ব্যবহৃত লেখা পড়ে বা লিখে বড় হয়ে উঠেছি, আমরা মেনে নিতে পারতাম না। কিন্তু ভাষা তো প্রচণ্ড জীবন্ত এক প্রাণীর মতো সারাক্ষণ নড়েচড়ে বেড়াচ্ছে। মানুষের জিভ থেমে নেই। ভাষাকে ক্রমাগত বদলে দিচ্ছে। একসময় সাহিত্য রচিত হতো সংস্কৃত ভাষায়। সেই বৈদিক যুগের সংস্কৃত বলয় থেকে একসময় ভাষা আপন নিয়মেই সরে এসেছে। চলিত প্রমিত ইত্যাদি যুগে প্রবেশ করেছে। এখন এই নাগরিক প্রচল ভাষা যদি সাহিত্যে তার জীবন খুঁজে পায় তবে এক সময় দেখা যাবে এই ভাষায়ই শক্তিমান সাহিত্য রচিত হচ্ছে। তবুও, আমি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ছাত্রী ও শিক্ষক বলেই হয়তো, ভাষার এই উদ্ভট রিমিক্স পদ্ধতি এখনো মানতে পারি না। কিন্তু আমার মানা-না-মানায় কিছু এসে যায় না। যা হবার তা হবেই। ওটা স্বয়ংক্রিয়। তাই পথ কোনটা সঠিক আর কোনটা বেঠিক তা কালই বলে দেবে, আমি না।

জাগো নিউজ: আমাদের কথাসাহিত্যে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ যেন একভাবেই এসেছে, এটাই কি যথেষ্ট বলে মনে করেন? ব্যতিক্রম কিছু আপনার চোখে পড়েছে কী?
ঝর্না রহমান: হ্যাঁ, আমাদের কথাসাহিত্যে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ একই ভাবে এসেছে কথাটা বোধ হয় ঠিক। সেখানে যুদ্ধের প্রেক্ষাপট, আন্দোলন সংগ্রাম, যুদ্ধকালীন পরিবেশ, গণহত্যা, মৃত্যু, ধ্বংস, আগুন আর প্রায় সবার সাহিত্যে এসেছে নারীর ধর্ষিত হওয়ার বিবরণ। সব হারানোর বেদনা, স্বাধীনতার আনন্দ এসব সাহিত্যের মূল সুর হিসেবে আছে। তবে যে জিনিসটির অভাব আছে সেটি হলো যুদ্ধের ময়দানের জীবন, শরণার্থী জীবন, কনস্ট্রেশন ক্যাম্পের জীবন—সব মিলিয়ে মুক্তিযুদ্ধের যে বৃহৎ স্থানিক ও কালিক প্রেক্ষাপট তা নিয়ে পূর্ণাঙ্গ কথাসাহিত্য হয়তো এখনো রচিত হয়নি। সেলিনা হোসেনের যুদ্ধ, হুমায়ুন আহমেদের শ্যামল ছায়া, শাহীন আক্তারের তালাশ—এসব সাহিত্যে মুক্তিযুদ্ধ ব্যাপক আকারে এলেও এপিক আকারে হয়তো আসেনি। তবে একই বইয়ে যুদ্ধের সব দিক উঠে আসতে হবে এমনও কথা নেই। যুদ্ধ মানুষের জীবনে অসংখ্য অজস্ররকম প্রভাব ফেলেছে, যে কোনো দিক নিয়েই মহৎ সাহিত্য হতে পারে। তারপরেও, রণাঙ্গণের জীবন বা সীমান্তের ওপারে আশ্রয় নেওয়া মানবেতর জীবন যাপন করা কোটি মানুষের দুঃসহ শরণার্থী জীবন নিয়ে বৃহৎ কথাসাহিত্যের প্রত্যাশা করি। তবে তার জন্য লাগবে গবেষণা, পাঠ, সেই জীবনের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন মানুষের সাক্ষাৎকার, তাদের সম্পর্কে জানা—অনেক কিছু।

জাগো নিউজ: সাহিত্যকর্মীদের প্রাণের স্পন্দন ‘অমর একুশে বইমেলা’ যে উদ্দেশ্য নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়; সে উদ্দেশ্য কি যথার্থভাবে সাধিত হয়?
ঝর্না রহমান: একুশে বইমেলার দুটি উদ্দেশ্য মূল। একটি প্রকাশকদের উদ্দেশ্য—বই বিক্রি করা, আর একটি লেখকের উদ্দেশ্য—বই প্রকাশ করা। লেখক আর প্রকাশক মিলেই মূলত মেলা। এদের মাঝখানে উভয়পক্ষের জন্য আছেন পাঠক। পাঠক প্রকাশক-লেখক দুজনের জন্যই আকাঙ্ক্ষিত। কারণ পাঠক বই কিনলে প্রকাশক লাভবান হয় আবার লেখকেরও তৃপ্তি হয়। হয়তো লেখকের লাভও। কারণ বিক্রিত টাকার একটা অংশ লেখকেরও প্রাপ্য। যদিও আমাদের দেশে অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রকাশকদের মধ্যে চর্চাটা এখনো তৈরি হয়নি। লেখক-রয়্যালিটি প্রদান ব্যাপারটাই বেশিরভাগ প্রকাশকের মধ্যে নেই। নেই লেখকের পাণ্ডুলিপি নেওয়ার জন্য কোনো ডিড ব্যবস্থা। সে যা-ই হোক, ‘প্রাণের মেলা’র উদ্দেশ্য সাধিত হয় না এমন কথা বলবো না। মেলা তো প্রতিবছর বিস্তৃত হচ্ছে, নতুনভাবে সজ্জিত হচ্ছে। তবে প্যাভিলিয়ন, সাধারণ স্টল ইত্যাদি শ্রেণীবৈষম্যও বেড়ে যাচ্ছে। সাজসজ্জা বিন্যাস এসবের বাহার যত বেড়ে যাচ্ছে, মেলা তত বইকেন্দ্রিকতা হারিয়ে বেড়ানোর স্পট হয়ে উঠেছে। এখন পিকনিক স্পট বা বিয়েবাড়ির মতো ছবি তোলার সুবিধার জন্য চমৎকার ব্যাকগ্রাউন্ড দিয়ে স্টুডিও কর্নার তৈরি হয়। তরুণ-তরুণীরা সাজ করে সেখানে ছবি তোলে। এখন হাতে হাতে মোবাইল ক্যামেরা, অনেক ফটো সাংবাদিকও ঘুরে বেড়ান। যাকে পাচ্ছেন তার দিকেই ক্যামেরা তাক করে সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন। সব মিলে বইমেলা যেন আগের মেধাবী চরিত্র হারিয়ে অনেকটাই বাণিজ্যিক বা কর্পোরেট চরিত্র ধারণ করেছে। তারপরেও বইমেলার জন্য লেখকগণ অপেক্ষায় থাকেন, বই প্রকাশ হোক বা না হোক, এ সময় লেখকে-পাঠকে-প্রকাশকে একটা সম্মিলন ঘটে। ভাবনার আদান-প্রদান ঘটে। কী কী বই আসছে, সে সম্পর্কে জানা যায়। আর বইও তো কেনা হয়! যারা সত্যিকারের পাঠক; তারা তো বছরের এই সময়টাকেই টার্গেট করে রাখেন বই কেনার জন্য। সুতরাং উদ্দেশ্য ব্যাহত হয় বলবো না।

জাগো নিউজ: এ সময়ে যারা সাহিত্যচর্চা করছেন, তারা কি কোনো পরিবর্তন আনতে পেরেছেন? কিংবা আপনি কেমনটা আশা করেন, এ ব্যাপারে তাদের জন্য আপনার পরামর্শ কী হতে পারে?
ঝর্না রহমান: এ সময়ে যারা সাহিত্যচর্চা করছেন; তারা কোনো পরিবর্তন আনতে পারছেন কি না, তা এখনই বলা যাবে না। পরিবর্তনের লক্ষণ স্পষ্ট হয়ে উঠবার জন্য একটা সময়ের প্রয়োজন। মানুষ প্রয়োজনে যখন কোনো মাঠের ওপর দিয়ে হাঁটতে থাকে; তখন অনেকদিন পেরোলে দেখা যায় সেখানে একটা পথরেখা ফুটে উঠেছে। সঙ্গে সঙ্গে কিন্তু দেখা যায় না। আর এ বিষয়ে তো আগেও কথা বললাম। কথাসাহিত্যের বর্তমান-ভবিষ্যৎ এই প্রসঙ্গে, তাই না?

জাগো নিউজ: জাগো নিউজকে মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা। আপনার পাঠকের উদ্দেশে কিছু বলবেন কি?
ঝর্না রহমান: জাগো নিউজকেও অনেক ধন্যবাদ। আর আমার পাঠককে কীই-বা বলবো। বলবো, অনেক বই লিখেছি আমি। আমার বইগুলো যদি তাঁরা মনোযোগ দিয়ে পড়েন, তা হলে আমার অনেক ভালো লাগবে। কারণ পাঠকই লেখকের প্রার্থিতজন। জাগো নিউজকে আবারও ধন্যবাদ।

এসইউ/জিকেএস

আরও পড়ুন