আনিস ফারদীনের তিনটি কবিতা
প্রাণহীন শার্টের মতো
হ্যাঙ্গারে ঝোলানো প্রাণহীন শার্টের মতো আমিও বেঁচে আছি
কলকব্জায় ধরেছে মরীচিকা—
অরণ্যে রোধনের নোনতা জল শুকিয়ে আসছে ক্রমাগত
তোমার প্রেতচ্ছায়া ছাড়া আজ কিছু নেই এই আমার সাথে।
শুনেছি তুমি বেশ ভালোই আছো
দিব্যি কাটাচ্ছো তোমার ইচ্ছের দিনগুলো,
রংধনুর বর্ণিল সাজে কাটছে বেলা, কাটছে মন ফাগুনের সময়;
তোমার খেয়ালে-বেখায়ালে বেড়েছে মনের দূরত্ব।
এক জনমে তোমার ইচ্ছেগুলোই সব জয়ী হোক
আমার ইচ্ছেগুলো হারিয়ে যাক শূন্যে,
যেখানে গেলে কেউ আর আমায় খুঁজবে না—
নিশুতি অন্ধকারের ঘুমছোটা রাতে
নিঃসঙ্গ রাতজাগা যাযাবর হয়ে কেটে যাক দীর্ঘ এক জীবন।
****
সিলমোহর
এ ঠোঁটে যদি পাই তোমার ঠোঁটের সিলমোহর
সিগারেট ছেড়ে আমি আসক্ত হবো তোমায়,
আকাশে উড়ে যাবে সব নেশা, এই মাতাল আমি—
হয়ে উঠবো বিশুদ্ধ মানব।
তোমার হাতের ওই তর্জনী যদি পাই
আমি বাহুডোরে আগলে রাখবো যতনে, আমার করে নেব স্বেচ্ছায়—
সব হিসেবের ঊর্ধ্বে তুলে দেব তোমার ওই হাত।
যদি একবার আমাকে জড়াও উষ্ণতার বাহুতে
কাছে টানো বাহানায়,
আমি ভুলে যাব আমার সব অতীত, পৃথিবী ছেড়ে লুফে নেব তোমাকে,
তোমার উষ্ণতাকে।
তোমার চোখের ইশারায় আমি হয়ে যাব সাধু-সন্ন্যাসী
কিংবা যাযাবর হয়ে যাব সব ভুলে,
খেয়ালে-বেখেয়ালে শুধু তোমাকেই যে চাই।
একবার যদি হতে চাও
বিভেদের সব থেকে গুটিয়ে নেব নিজেকে, ভালোবাসার আশায়—
প্রতীক্ষার শহরে এর চেয়ে যে বড় পাওয়া আর নেই,
আর হতে পারে না।
****
ভালোবাসার বিদ্রোহ
বিদ্রোহ চলছে ভালোবাসার
যে বিদ্রোহ ছড়িয়ে যাবে পৃথিবীর আনাচে-কানাচে
ভালোবাসার বিদ্রোহরা কখনো ঘুমোয় না।
বিদ্রোহে ক্লান্তি কিংবা অবসর নেই ভালোবাসার
ভালোবাসারা তীব্র গতিতে ছুটে চলে হৃদয় থেকে হৃদয়ে—
আকাশে-বাতাসে মিছিল চলে ভালোবাসার,
ভালোবাসারা অমর, অক্ষয় আর সার্বজনীন
শত সহস্র বছর ধরে চলছে এই বিদ্রোহ।
এই বিদ্রোহ কখনো হারে না
শুরু আর শেষ বলে কোনো কথা নেই ভালোবাসার—
ভালোবাসারা একবার বিদ্রোহ করলে এই বিদ্রোহ এগিয়ে চলে যুগ যুগ।
দেশে দেশে যুদ্ধের পরিসমাপ্তি হয়, স্নায়ুযুদ্ধ কমতে থাকে
শত্রুতা কমে ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে,
শুধু ভালোবাসার বিদ্রোহগুলো থেকে যায় অপ্রতিরোধ্য হয়ে।
কবি: প্রভাষক, চাঁদপুর সরকারি কলেজ, চাঁদপুর।
এসইউ/জিকেএস