নদী বিষয়ক একগুচ্ছ কবিতা
খান মুহাম্মদ রুমেল
প্রিয়তমা নদী
শীতলক্ষ্যা আমার শৈশবগন্ধী শীতলক্ষ্যা!
সহস্র বছর পরে প্রত্যাবর্তন তোমার কাছে
ক্ষণিক সময়ের আশ্রয় তোমার বুকে।
হিম ঝরানো বাতাস, তোমার মাথার উপর
বিশাল কাঁসার থালার মতো চাঁদ—
ফিরিয়ে নেয় আমার পেছন দিনে।
কানে বাজে কোন সুদূরের ভেঁপু
চলে যায় সুগন্ধি স্মৃতি বেয়ে নাকের পাশ দিয়ে!
মনে করিয়ে দাও এক অলস দুপুর
বসে আছে লাজুক কিশোর—দুরু দুরু বুক তার!
তোমার শরীর বেয়ে আসবে আজব নৌযান
পৌঁছে যাবে কিশোর তার পেটে চড়ে—সুনীল গন্তব্যে!
লাগবে লঙ্কা মাখা চানাচুর—সুরেলা ডাক
কেন তুলে আনো অতল পাতাল থেকে টেনে?
কাঁচপুর থেকে তোমার বুক বেয়ে
আর কতটা গেলে চরসিন্দুর?
বহু আগে হারিয়ে যাওয়া লাজুক বালক
ভুলেছে সাকিন, হারিয়েছে ঠিকানা লেখা চিরকুট!
শেষ বেলায় পৌঁছে দিয়ো বালককে তুমি
আপন ঠিকানায়, সজল গাঁয়ের কোলে!
শীতলক্ষ্যা, আহারে আমার প্রিয়তমা নদী!
****
প্রিয় শীতলক্ষ্যা
তোমায় তখন বিশাল মনে হতো—
আমি ছোট ছিলাম বলেই কি?
তোমায় এখন খুব শীর্ণ মনে হয়
পড়ে আছো নির্জীব নির্জন
প্রিয় শীতলক্ষ্যা আমার!
কতো ঝলসানো দুপুর বসে থেকেছি
দেখেছি তেজ তোমার ভরা বর্ষায়।
একটু শান্ত হতে শীতের কালে
ঠিক যেন ঘুমিয়ে পড়া অজগর।
জোছনা রাতে চিকচিকে নরম আলো
বিভ্রম জাগানিয়া কোনটা জল কোনটা চরাচর।
এখন তুমি শান্ত কেন—থুত্থুরে বুড়ি যেন
আমি তো বেড়েছি বিস্তারে সর্বগ্রাসী!
খেয়েছি গিলে সৌন্দর্য তোমার সবটাই।
প্রিয় শীতলক্ষ্যা আমার শৈশবের নদী
স্মৃতিতে থেকো অমলিন, ভালোবাসার নদী।
****
একটা নদী স্মৃতির
তোমার সঙ্গে শেষ স্মৃতি তবে সেটিই—
হাওয়ায় উড়ছে চুল রুপালি জোছনায়?
দিগন্তজুড়ে বিছিয়ে আছো নিশ্চুপ
বুকের ভেতর আদিম ঝড় বড় অস্থির!
এক লাজুক কিশোর আলতো ছোঁয়
কী নরম জল তোমার ধীর বয়ে চলা।
স্বচ্ছতার নিচে ধরা দেয় উত মাছ এক ঝলক!
যান্ত্রিক নৌকো চলে মহা কল্লোলে
জেলের ডিঙি সামলে নেয় ঠিকই—
জলের কাঁপন অবিরত ঢেউ সবই।
ছোট্ট শিশু ধরে আছে দাঁড়—
নৌকোর নাকি সংসারের ভার?
অভয় দেয় হাড় জিরজিরে বাবা।
একটা স্মৃতির নদী—
হারিয়ে গেল কোথায়?
****
ব্যক্তিগত নদী
সবারই একটা ব্যক্তিগত নদী থাকা উচিত!
দুঃখের নীল স্রোত বইবে কখনো
কখনো বইবে সুখের সোনালি ধারা
প্রিয় মানুষের সঙ্গে অবাধ সাঁতার
আবার তীরে বসে জলের বয়ে চলা।
জলের দামে কেনা ভালোবাসার চাষ
দুজনের অথবা অনেকজনের মিলিত বিশ্বাস
পাল তোলা নৌকো নয়—
নদীতে ভাসবে উচ্ছ্বাস।
ব্যক্তিগত দুঃখ সব জমা দিয়ে
যৌথ আনন্দের ফসল ঘরে নেবো দুজনে।
প্রত্যেকেরই ব্যক্তিগত নদী থাকা উচিত।
তোমারও আমারও দুটি নদীর মালিকানা থাকা উচিত।
দুটি স্রোত এক হলেই—ফুটবে ভালোবাসা উজ্জ্বল!
****
ফেলে আসা নদী
ফেলে আসা কথারা জেগে থাকে বরাবরই।
স্মৃতিরাও!
এই শীতে নদীটা কি শুকিয়ে গেছে একেবারেই?
কথারাও!
হেমন্ত পেরিয়ে আসার পথে তাল কেটেছিল কোথাও।
সুরেরাও!
জলজ জোছনার স্নানে সুগন্ধি ছিল ছড়ানো।
বাষ্পেরাও!
ধুলি ধূসর শহরে কাকা ডেকেছিল কর্কশ।
কোকিলও!
জমানো ব্যথারা সব গলছিল মোম গলানো আলোয়।
আঁধারও!
সবকিছু ঠিক হলেও ভুল রয়ে গেছে কোথাও।
দ্বিধাও!
এসো ঋজু হই
এসো মুক্ত হই
এসো যুক্ত হই
না থামুক স্বপ্ন হাঁটার পথ।
এসইউ/জিকেএস