মহসিন আহমেদের তিনটি কবিতা
গোপন সন্ত্রাস
কেতাবি কথার ভিড়ে ঢুকে গেছে করুণ-সমাস
পতনের কলধ্বনি সুর তোলে সাগরের জলে
ফাগুনের ফুলগুলো অকালেই হয়েছে বিনাশ
হিমালয় ধীরে ধীরে সমতলে নেমে গেছে গলে।
সীমান্তে মিলিয়ে যায় যেই আলো তারও আছে কথা
বিলুপ্ত কোনো ভাষায় গেয়ে যায় অভিলাষী গান
যেন মহাকাল জয়ী আয়ু নিয়ে খোঁজে অমরতা
বয়সী বটের মত হতে চায় আকাশ সমান।
উছল উন্মাদ হয়ে বৃত্তেই যে ঘুরপাক খায়
ঘন বর্ষার দিনে ফেলে দিয়ে কদমের গুচ্ছ
নিজের আঙিনা ভরে তোলে রোজ সে কৃষ্ণচূড়ায়
বৃন্ত থেকে খসে গেলে ফুল হয়ে যায় খুব তুচ্ছ।
গভীর হলেই রাত ডেকে ওঠে কামুক কুহক
দূরে কোনো মায়াবন জেগে থাকে দারুণ উল্লাসে
ঝোপের আড়াল থেকে মাঝে মাঝে ডাকে নিশিবক
পিপাসা নাগাল পেলে লিপ্ত হয় গোপন সন্ত্রাসে।
****
আদম-হাওয়ার প্রেম
তুমুল বৃষ্টি—অথচ, নড়েনি
যেন উত্তাপে এতকাল ধরে ফুলেফেঁপে ছিল নিয়মের সংসারে
নিষ্ফলা মাঠ—গোমতীর জল, পাতার গোয়াল
আর্তি শুনেছে—শুধু শোনেনি সে, শোনাতে পারেনি তারে।
সাঁতার শিখেছে বলে
ডিঙায় চড়ায় সাধ থাকবে না বুঝি!
সান্ধ্যপ্রদীপ জ্বালাতেই তার শরীরী বাক্য থাকে
তখনও সাজে না আনন্দপুর, কাসা থালা ঝনঝনি
কতকাল ধরে শোনে না অভাগী
পালা মঞ্চের মনকাড়া সুরধ্বনি।
ক্লান্তির পাখি থেকে থেকে ডাকে
মধ্যরাতের জোনাকিরা তাকে—চিঠি লেখে নীল খামে।
ব্যাকুল পাপড়ি ফুলেই শুকায়
তাকায় না ফিরে বেরসিক ভ্রমর—
অথচ, পাশের খুপড়ি ঘরের কার্ণিশ যেন সোনার হেরেম
কপোতীকে প্রায় কপোত শোনায়
কী গভীর ছিল আদম-হাওয়ার প্রেম!
****
ফেলে এসেছি মহুয়া ও মাধবীবন
আমরা পরস্পর পরস্পরের প্রতি বেশ দুর্বল
ওখান থেকেই উদিত হয় সোনালু রঙের শুকতারা
যে আলোর স্বতঃস্ফূর্ত স্ফুরণ
ছড়িয়ে পড়েছে সময়ের সারল্য সংসারে
সে আলোটুকু আমাদেরই চর্চিত প্রেমের ফসল।
গভীর থেকে বেড়ে উঠছে সুপ্ত অঙ্কুর
সুবর্ণরেখা ধরে মউলবনের দিকে পূর্ণচাঁদের গমনাগমন
বেতসলতার মত জাগতিক নিয়মে
সঙ্গমরত সম্মোহনী মানসালয়ে
পবিত্র সুখে বেজে ওঠে চৈনিক সুমধুর ঘণ্টাধ্বনি।
জোছনা ও জলের মিলন মোহনায়
মাঝে মাঝে ডেকে ওঠে লোলুপ ডাহুক
অতঃপর, দু’চোখে ভেসে ওঠে হাবিয়া দোজখ, রক্ত নহর।
দ্বিধাহীন—পায়ে পায়ে পেরিয়ে এসেছি সুদীর্ঘ বিনোদপুর
অথচ, মানবিক আখ্যান রচিত হবার আগেই
অমীমাংসিত অরুণাচল হয়ে লোহিতের রেখা ধরে
মক্তবের শিশুদের মত শুদ্ধতার পাঠ নিয়ে
নিজেকে সঁপে দিয়েছি সমুদ্র-সংসারে।
বুলেট হয়ে আপন লক্ষ্যে ছুটেছি প্রশিক্ষিত ঘোড়ার ন্যায়
দু’ধারে ফেলে এসেছি অগণিত মহুয়া ও মাধবীবন।
কবি: গীতিকার, বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশন।
এসইউ/জিকেএস