বাবার জন্য তিনটি কবিতা
ল্যান্ডফোন
জোবায়ের মিলন
অদৃশ্য ল্যান্ডফোনে
কথা হলো, বাবার সাথে। বাবার কথাগুলো
উড়ে বেড়াচ্ছে
ফড়িংয়ের মতো; ধরছি, ছাড়ছি—
আমিও উড়ে বেড়াচ্ছি বাবার ডানায় চড়ে...
একদিন বাবা আমাকে তালুতে নিয়ে এভাবেই
ঘুরে বেড়াতেন—
শেখাতেন, কী করে তালুতে রেখে সাঁতার শেখাতে হয়
নিজের প্রতিচ্ছায়া।—ওই যে আমার ষোলো মাসের কন্যা
সাঁতরাচ্ছে; আমি হাসছি। আর,
মৌনবৃষ্টি ঝরছে মৃত্তিকামণ্ডলে।
****
বাবাকে কখনো কাঁদতে দেখিনি
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ
আমি বাবাকে কখনো কাঁদতে দেখিনি—
তবে তার দীর্ঘশ্বাস কান্নার চেয়েও ভারি,
আমি তার চোখে অজস্র স্বপ্ন দেখেছি;
কিন্তু কখনোই তা পূরণ হতে দেখিনি।
আমাদের ভার বয়ে বয়ে নিচু হয়েছেন,
কতদিন খোলা আকাশটাই দেখেননি;
কাল ঠুকতে ঠুকতে শুধু বিষাদ মেখেছেন—
কখনো তার চোখে-মুখে আহ্লাদ দেখিনি।
বাবাকে কখনো ভোগ করতে দেখিনি,
নিজের উপার্জনটুকু সবার মাঝে ভাগ করে
দিতে দিতে শূন্য হাতে ফিরতে দেখেছি;
বিসর্জনের থালা হাতে অপমান হতে দেখেছি।
আমার বাবাকে কখনো কাঁদতে দেখিনি—
বুকে পাথর বেঁধে সব হজম করতে দেখেছি...
****
বাবা
সাজেদুর আবেদীন শান্ত
একদিন বাবা আর আমার বয়স শূন্য
বাবা আর আমার আত্মা এক
বাবা আমার ঘাড়ের ওপর হাত রেখে বললেন, ‘চলো?’
আমি বাবাকে বললাম, ‘কোথায় যাবো?’
বাবা কোনো কথা না বলে আবার আমায় বলেন, ‘চলো!’
আমি বাবার পিছু পিছু হাঁটি
যেতে যেতে সময়ের স্রোত পেরিয়ে চলে যাই
গোরস্তানে—
দাঁড়িয়ে থাকি আনমনে
বাবাকে বলি, ‘বাবা, এখানে কেন?’
বাবা আমাকে উপদেশ দেন;
বলেন, ‘যাপিত সংসার থেকে এই গোরস্তানের প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি।’
মদঘুম ভেঙে আমি উঠে দাঁড়াই
দাঁড়িয়ে দেখি পাশে বাবা নেই
ফোন হাতে নিয়ে বাবাকে ফোন করি—
আমি কিছু বলার আগেই বাবা বলে ওঠেন,
‘কেমন আছো তুমি, আমি বেশ ভালো আছি...’
এসইউ/জিকেএস