ফরিদপুরের শাহজাদী
কংক্রিটের শহরে সময়কে হাজিরা দিচ্ছি
জীবনকে নিষ্ঠুরভাবে তাড়িয়ে।
এ জীবন বেরসিক, কালো, কুৎসিত, মৃতবৎ।
কার্বন মনোক্সাইডের ধোঁয়া, কৃত্রিম আলোর ঝলকানি-
এসব জড়, আজকাল বড় অসহ্য, মর্মন্তুদ।
অস্থির, অশান্ত বিচলিত এ মনের নির্বাণে আমি দ্বিগ্বিদিক।
ভাবনারা শাসনের প্রাচীর ভেঙে ঘোষণা করেছে মুক্তি সংগ্রাম।
ধমনী শিরায় রক্তে বয়ে চলেছে অস্থিরতার বিষ ঢেউ।
উন্মাদনায় মত্ত প্রবল সাইক্লোন শরীরে বয়ে
আমি এক প্রাণহীন রক্ত-মাংসের মনুষ্য অবয়ব।
আজ আমার ভীষণ প্রয়োজন-
সার্বভৌম শৈশব, মায়ের কোল, কাঁদামাখা দিন
লাউয়ের ডগায় শিশির,
ঘাসফড়িং আর প্রজাপতি,
যাতে আমার প্রাণ মিশে আছে।
মনের এমন দাবানলে আমি দুটো চোখের তারার সাক্ষাৎ পেয়েছি;
চোখের নিষ্পলক চাহনি-
পদ্মার ঢেউয়ে সূর্যকে ডোবায় বারে বারে
প্রতি পলকে প্রজাপতি পাখা মেলে উড়ে।
আঁখি দৃষ্টিতে বহমান ধারা শান্তির
ক্ষয় হয়েছে আমার শত বছরের ক্লান্তির।
শ্যামল শস্যে রূপে শান্তির চির সবুজ নদী
চোখ ও চোখ ফরিদপুরের শাহজাদী।
পোড়া চিত্তকে প্রশান্ত করেছিল দুটি চোখের মণি
আমি পেয়েছিলাম অনন্ত শান্তির অবারিত খনি।
গভীর সে দৃষ্টির অতল ফাঁদে
ডুবে যাই মারিয়ানা ট্রেঞ্চের খাদে।
হতবিহব্বল আশ্রয়ের প্রার্থনায়
তবুও সুখ যদিও থাকি তাজিয়ায়।
এই নির্মম, নির্দয় সময়েও আজ আমি ভীষণ শান্ত।
আমি জেগে জেগে ঘোরে দেখি-
পালতোলা নৌকা, সবুজ-হলুদ ফসলের মাঠ
ফরফর শব্দে ফড়িংয়ের স্বাধীন উচ্ছ্বাস
রং-বেরঙের প্রজাপতি স্বপ্নকে পাখা দিচ্ছে
নীলাকাশ ডুবেছে দিগন্তবিস্তৃত বানের জলে।
ওই দৃষ্টির সালোক সংশ্লেষণে জেগে উঠেছে তৃণ
সুন্দরবন থেকে আমাজানে জেগেছে প্রাণের স্পন্দন
চোখের মায়া বয়ে চলেছে নদীর স্রোতে-
পদ্মা থেকে নীলনদে
প্রশান্ত মহাসাগর থেকে প্রশান্ত মহাসাগরে
আর্কটিক থেকে এন্টার্টিক মহাসাগরে
আমি সদা ছুটে চলেছি সেই অসূর্যম্পশ্যার খেয়ালে-
কালো উৎপলে শোভিত দুটি চোখ
আমাকে করেছে চিরজাগরূক
পদ্মচাহনি আর স্মিত হাসি
মায়ার ফাঁসি ভালোবাসি ভালোবাসি।
ভাবনার আবেশ চিবুকজুড়ে মিশে থাকে
তন্ময় ভাবনায় এলো কেশে সে সন্যাসী
মৃদু বায়ু প্রবাহে ধ্যানের পূর্ণতায়-
ঠোঁটের কোণে এক চিলতে মায়া হাসি
নিমিষেই হয়ে যায় শিশিরের মাঝে সূর্যের ফাঁসি।
এমআরএম