বাঙালির চেতনার কাব্যিক রূপকার শামসুর রাহমান
দেশ, দেশের মানুষ আর স্বাধীনতার কথা বারবার উঠে এসেছে যার কণ্ঠে; তিনি নগর কবি শামসুর রাহমান। তবে তিনি একাধারে প্রেমের কবি, মানবতার কবি এবং স্বাধীনতার কবিও।
তার সমগ্র কাব্যজীবনের মূল সুর, মূলত স্বদেশপ্রেম। শত হৃদয়ের কষ্ট-যন্ত্রণা কবিতার স্বরে বেজে উঠেছে শামসুর রাহমানের কণ্ঠে। বেদনার্ত হৃদয়ের বাহক হয়ে রচনা করেছেন অজস্র কবিতা। শামসুর রাহমানের কবিতায় বেদনা, দুঃখবোধ শক্তিতে রূপান্তরিত হয়েছিল।
বাংলা কবিতা সত্যিকার অর্থে পোশাকে ও আশাকে, মেজাজে ও মননে আধুনিক হয়ে ওঠে হাতেগোনা যে ক’জন কবির অক্লান্ত সাধনায়; তাদের একজন কবি শামসুর রাহমান। যিনি আপাদমস্তক শুধুই একজন কবি।
বাংলা সাহিত্যের অন্যতম কবি শামসুর রাহমানের আজ ৯২তম জন্মদিন। ১৯২৯ সালের ২৩ অক্টোবর পুরান ঢাকার মাহুতটুলিতে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার পৈতৃক নিবাস নরসিংদী জেলায়।
১৯৪৫ সালে পুরোনো ঢাকার পোগোজ স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন শামসুর রাহমান। ১৯৪৭ সালে ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজ থেকে আইএ পাস করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিষয়ে ভর্তি হন তবে শেষ পর্যন্ত আর চূড়ান্ত পরীক্ষা দেননি। পাসকোর্সে বিএ পাস করে তিনি ইংরেজি সাহিত্যে এমএ (প্রিলিমিনারি) পরীক্ষায় দ্বিতীয় বিভাগে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করলেও শেষ পর্বের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেননি।
শামসুর রহমান ১৯৫৭ সালে দৈনিক মর্নিং নিউজে সাংবাদিক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। এরপর ১৯৫৯ সাল পর্যন্ত রেডিও পাকিস্তানের অনুষ্ঠান প্রযোজক ছিলেন। এরপর তিনি আবার ফিরে আসেন তার পুরোনো কর্মস্থল দৈনিক মর্নিং নিউজে। তিনি সেখানে ১৯৬০ সাল থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত সহযোগী সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৬৪ থেকে শুরু করে সরকারি দৈনিক পাকিস্তানের (স্বাধীনতা উত্তর দৈনিক বাংলা) সহকারী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন ১৯৭৭ এর জানুয়ারি পর্যন্ত। ফেব্রুয়ারি ১৯৭৭ সালে তিনি দৈনিক বাংলা ও সাপ্তাহিক বিচিত্রার সম্পাদক নিযুক্ত হন। ১৯৮৭ সালে তাকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়।
তিনি অর্জন করেছেন আদমজী সাহিত্য পুরস্কার, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পদক, নাসির উদ্দিন স্বর্ণপদক, জীবনানন্দ পুরস্কার, আবুল মনসুর আহমদ স্মৃতি পুরস্কার, মিতসুবিশি পুরস্কার, স্বাধীনতা পদক, আনন্দ পুরস্কার। ভারতের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ও রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় সম্মানসূচক ডিলিট উপাধিতে ভূষিত করে এই মহান কবিকে।
২০০৬ সালের ১৭ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন শামসুর রহমান। তার ইচ্ছা অনুযায়ী ঢাকার বনানী কবরস্থানে মায়ের কবরের পাশে সমাহিত করা হয়।
জেএইচ/এমএস