পারিবারিক শান্তি-সমৃদ্ধির গাইডলাইন ‘পরিবার’
আনিসুর রহমান এরশাদের ‘পরিবার’ বইটিকে বলা যেতে পারে পারিবারিক সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধির একটি গাইডলাইন। পরিবারের বন্ধন, প্রশান্তি, প্রেরণা ও বিকাশকে তুলে ধরা হয়েছে বইটিতে। আলোচনা করা হয়েছে- পরিবার কিভাবে জীবনের গতিপথ বদলে দিতে পারে, কিভাবে সার্থক জীবনের সন্ধান দিতে পারে।
টেকসই উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখতে পরিবার কিভাবে ভূমিকা রাখতে পারে কিংবা পরিবার কিভাবে ভালো মানের ও ভালো মনের সুনাগরিক উপহার দিতে পারে- সে সব বিষয় নিয়েও বইটিতে আলোচনা করা হয়েছে। অর্থাৎ এক কথায় বইটিকে পরিবারবিষয়ক বৈচিত্র্যময় চিন্তা-ভাবনার সমাহার বলা যেতে পারে।
পরিবার যদি ভালো হয়, ব্যক্তি ভালো হবে, ব্যক্তি ভালো হলে দেশ বা রাষ্ট্র ভালো চলবে। বইটিতে বলা হয়েছে- পরিবার থেকেই অপরাধমুক্ত সমাজ গড়ার আন্দোলন শুরু করার কথা, পরিবারকে সুস্থ ধারার বিনোদন ও সংস্কৃতি চর্চার উর্বরক্ষেত্র বানানোর কথা, গৃহের প্রশস্ততা-বড়ত্ব-চাকচিক্যের চেয়ে গৃহে থাকা মানুষগুলোর মানবিক মান-মর্যাদা আর সুখ-শান্তিকে বেশি গুরুত্ব দেয়ার কথা।
বইটির পরিবার শীর্ষক প্রথম অধ্যায়ে রয়েছে- পরিবার কী, পরিবারের প্রকারভেদ, পরিবারের গুরুত্ব, পরিবারের কার্যাবলি, পরিবারহীনতার পরিণতি ও পরিবারের ইতিহাস।
পারিবারিক বন্ধন শীর্ষক দ্বিতীয় অধ্যায়ে রয়েছে- বাবার ভালোবাসা নিঃস্বার্থ, মায়ের ভালোবাসা অকৃত্রিম, বোনের মনে প্রীতির শিহরণ, ভাই বড় ধন রক্তের বাঁধন, স্বামী-স্ত্রীর বন্ধনে আনন্দ, দাদা-দাদী ও নানা-নানী, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী, বন্ধুবান্ধব ও শিক্ষক। সন্তান লালন-পালন শীর্ষক তৃতীয় অধ্যায়ে রয়েছে- প্যারেন্টিং, সুশিক্ষা, মানবিক গুণাবলি, অপরাধপ্রবণতা, ভুল সংশোধন, সঠিক সামাজিকীকরণ, ব্যক্তিত্বের বিকাশ, শিষ্টাচার, কমনসেন্স, নীতিনৈতিকতা-চরিত্র ও আব্রাহাম লিংকনের চিঠি।
পারিবারিক ব্যবস্থাপনা শীর্ষক চতুর্থ অধ্যায়ে রয়েছে- পারিবারিক রুটিন, পারিবারিক বাজেট, ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স, নেতৃত্বের বিকাশ, বিপদ মোকাবেলা ও ঝুঁকি হ্রাস, সময় ব্যবস্থাপনা, জীবনযাপন পদ্ধতি, পারিবারিক কাজ, হালাল জীবিকা, অধিকার প্রতিষ্ঠা, সম্পত্তির ওয়ারিস ও গৃহকর্ম-গৃহিণী।
নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ ও প্রতিবন্ধকতা শীর্ষক পঞ্চম অধ্যায়ে রয়েছে- পারিবারিক বিশৃঙ্খলা, অপসংস্কৃতি, অশ্লীলতার চর্চা, প্রযুক্তির অপব্যবহার, যৌতুক, ধর্ষণ, ইভটিজিং, আত্মহত্যা, সামাজিক সমস্যা, মাদকাসক্তি ও গ্যাং কালচার। করণীয় শীর্ষক ষষ্ঠ অধ্যায়ে রয়েছে- কোয়ালিটি টাইম, টেকসই উন্নয়ন, ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ও সচেতনতা, প্রবীণবান্ধব হওয়া, পরিবারবান্ধব হওয়া, পরিবেশবান্ধব হওয়া, শিশুবান্ধব হওয়া, স্বাস্থ্যবান্ধব হওয়া, ভারসাম্যপূর্ণ আচরণ, অপরাধকে না বলা, মূল্যবোধের চর্চা, সমতার চর্চা ও অধিকার প্রতিষ্ঠা, সামাজিক সচেতনতা এবং পারিবারিক সমস্যার সমাধান।
আদর্শ পরিবার শীর্ষক সপ্তম অধ্যায়ে রয়েছে- আদর্শ পরিবারের বৈশিষ্ট্য, বিপদগ্রস্তকে সহযোগিতা, পরিবার থেকে বৃহত্তর জীবনে এবং ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে জগৎ পরিবর্তন। বিবিধ শীর্ষক অষ্টম অধ্যায়ে রয়েছে- দু’টি চিঠি, এক সিঙ্গেল মাদারের উপলব্ধি, পরিবার সম্পর্কে বারাক ওবামা, প্রাসঙ্গিক চিন্তাধারা ও তথ্যসূত্র।
বইটির লেখক আনিসুর রহমান এরশাদ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নৃবিজ্ঞানে অনার্স ও মাস্টার্স করেছেন। এ ছাড়া তিনি মিডিয়া ও জার্নালিজম নিয়েও পড়েছেন। দীর্ঘ দিন ধরে সাংবাদিকতা ও গবেষণার সাথে জড়িত। তিনি ‘সেভ দ্য ফ্যামিলি বাংলাদেশ’-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা।
বইটি পাঠে পাঠক গভীরভাবে বুঝতে পারবেন- পারিবারিক বন্ধন ও পারিবারিক মূল্যবোধকে কেন সবেচেয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। সন্তানের সাথে বাবা-মায়ের মানসিক দূরত্ব কেন কমাতে হবে। পরিবারকে সময় দেয়া, পরিবারের যত্ন নেয়া কতটা গুরুত্বপূর্ণ। পরিবারের সদস্যদের মানবিক গুণাবলির বিকাশ ঘটাতে দুঃসময়ে সাপোর্ট দেয়া ও সান্ত্বনা দেয়া কেন জরুরি। অফসেটে ছাপা ১৭ ফর্মার বইটিতে রয়েছে ২৭২ পৃষ্ঠা। দাম ৫০০ টাকা।
আইএইচএস/এমকেএইচ