হাবীবাহ্ নাসরীন-এর কবিতা
চাইছ যখন, ভুলেই না হয় যাব
চাইছ যখন, ভুলেই না হয় যাব
ভুলতে গেলে কী আর এমন লাগে
হৃদয়বেতার বন্ধ না হয় হবে
বাজবে না সুর স্মৃতির অনুরাগে।
কোন দুপুরে বৃষ্টিভেজা পথে
একলা আমার সঙ্গী ছিলে তুমি
তোমার পায়ের ছাপ পড়েছে তাই
সেই থেকে সেই পথটি পূণ্যভূমি।
সে পথ ধরে হাঁটবো না আর ভুলে
না হয় যাব অন্যপথে ঘুরে
আর কিছুতেই যায় না এসে কিছু
কাছের তুমি যখন এত দূরে!
তোমার দেয়া একটি সাদা গোলাপ
একটি পাতা, একটি ছিল কাঁটা
বইয়ের ভাঁজে মুখ লুকিয়ে আজও
রঙ হারিয়ে ফুলটি সাদামাটা।
ফুলটি না হয় ছুঁড়েই দেবো ফেলে
যাক হারিয়ে অনেক ফুলের ভীরে
সুগন্ধিহীন কাটুক পোড়া সময়
অন্ধকারের শূন্যতাকে ঘিরে।
বাড়ুক না হয় বিষণ্নতা আরো
ঘড়ির কাঁটা উল্টো হয়ে চলুক
খুলে দিলাম সবার মুখের তালা
আজকে থেকে যার যা খুশি বলুক।
বাসলে ভালো কোন খেয়ালের ভুলে
ভাববো না আর সেসব আগুপিছু।
হৃদয় পুড়ুক, ছাই হয়ে যাক উড়ে
সত্যি বলছি, যায় না এসে কিছু!
তারপর দিন আসে
তারপর দিন আসে, বিরহের দিন
কলমের কোলজুড়ে ক্লান্তি ঘুমায়
কখনো বিকেল আসে ছেঁড়া ঘুড়ি, মেঘ
দিন তো গড়িয়ে চলে, এক দুই তিন।
তারপর দিন আসে, রাত আসে রোজ
জানালায় উঁকি মারে জোনাকির দল
কানে কানে গানে গানে ঝিঁঝিদের সুর
চাঁদ হাঁটে ফুটপাতে, জোসনা নিখোঁজ!
ঝিমধরা দুপুরের দগ্ধ সময়
আমাকে পুড়িয়ে যায় কখনো হঠাৎ
পুড়ে পুড়ে জমে থাকে শরীরের ছাই
কষ্টের তাপে গলে নষ্ট বলয়।
মনগড়া কবিতার ছলনা, আবেগ
আমাকে ভাবিয়ে রাখে এতটা সময়
এতটা দখল করে মনের আকাশ
বৃষ্টির তালে তাই ঝরে যায় মেঘ।
তারপর দিন আসে ঝলমলে দিন
রোদের গন্ধ বুকে ফুলেরা ঝিমোয়
বেওয়ারিশ চিঠি জমে ভুল ঠিকানায়
ছন্দে গন্ধে বাড়ে কবিতার ঋণ।
মুখোশের রং মুছে যাক
এতসব অসুখী মানুষ
এতগুলো দুখী দুখী মুখ।
হাসি নেই, হাসি কেন নেই
কেন এত ব্যথাভরা বুক!
বুকে বুকে এত ব্যথা আর
এত জল, এত হাহাকার
এত প্রেম তবু এত ভুল
কোন ভুলে কতটা মাশুল
কে জেনেছে, কোন ব্যথা কার
ক্ষয়ে যাওয়া পাঁজড়ের হাড়
ক্ষয়ে যাওয়া মানুষের মুখ
ক্ষয়ে যাওয়া মানুষের চোখ
রংহীন দৃষ্টিগোলক।
এতগুলো হাসি হাসি মুখ
তার নিচে লুকানো অসুখ
মুখ নয়, মুখোশের ভীড়
বোবা আর অন্ধ- বধির
যা দেখে তা শোনে না তো আর
যা শোনে তা বলে না আবার!
না বলার তাপে পোড়ে বুক
সেই তাপে বেদনা পুড়ুক
মুখোশের রং মুছে যাক
মুখগুলো ঝলসে উঠুক!
এইচআর/এমএস