কবি শামসুর রাহমানের ৮৭তম জন্মদিন আজ
আজ ২৩ অক্টোবর। বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি শামসুর রাহমানের ৮৭তম জন্মদিন। ১৯২৯ সালের এই দিনে ঢাকার মাহুতটুলীতে জন্মগ্রহণ করেন এই নাগরিক কবি। ২০০৬ সালের ১৭ আগস্ট তিনি পাড়ি জমান না ফেরার দেশে। ঢাকার বনানী কবরস্থানে মায়ের কবরে শায়িত আছেন তিনি। কবির শেষ ইচ্ছানুযায়ী সেখানেই তাকে সমাহিত করা হয়।
পঞ্চাশের দশকের শেষ দিকে মর্নিং নিউজে সাংবাদিকতার মাধ্যমে পেশাগত জীবনে প্রবেশ ঘটে তার। এর পর ১৯৫৭ থেকে ১৯৫৯ সাল পর্যন্ত রেডিও পাকিস্তানের অনুষ্ঠান প্রযোজক ছিলেন। এর মাঝে আবার ফিরে আসেন পুরানো কর্মস্থল দৈনিক মর্নিং নিউজে। সেখানে ১৯৬০ থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত সহযোগী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৬৪ সালে নভেম্বর থেকে শুরু করে সরকারি দৈনিক পাকিস্তানের সহকারী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন ১৯৭৭ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত। ১৯৭৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি দৈনিক বাংলা ও সাপ্তাহিক বিচিত্রার সম্পাদক নিযুক্ত হন। ১৯৮৭-তে সামরিক সরকারের শাসনামলে তাকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়। এ সময় তিনি মাসিক সাহিত্য পত্রিকা অধুনার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
শামসুর রাহমানের বাবা মুখলেসুর রহমান চৌধুরী ও মা আমেনা বেগম। ১৩ ভাই-বোনের মধ্যে কবি ছিলেন চতুর্থ। পুরানো ঢাকার পোগোজ ইংলিশ হাই স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন ১৯৪৫ সালে। ১৯৪৭ সালে ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিষয়ে ভর্তি হন এবং তিন বছর নিয়মিত ক্লাসও করেন সেখানে। শেষ পর্যন্ত আর মূল পরীক্ষা দেননি। পাসকোর্সে বিএ পাস করে তিনি ইংরেজি সাহিত্যে এমএ (প্রিলিমিনারি) পরীক্ষায় দ্বিতীয় বিভাগে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করলেও শেষ পর্বের পরীক্ষায় অংশ নেননি।
শামসুর রাহমানের প্রথম কাব্য গ্রন্থ- প্রথম গান দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে প্রকাশিত হয় ১৯৬০ সালে। তার উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে- রৌদ্র করোটিতে (১৯৬৩), বিধ্বস্ত নিলীমা (১৯৬৭), নিরালোকে দিব্যরথ (১৯৬৮), নিজ বাসভূমে (১৯৭০), বন্দী শিবির থেকে (১৯৭২), দুঃসময়ে মুখোমুখি (১৯৭৩), ফিরিয়ে নাও ঘাতক কাটা (১৯৭৪), আদিগন্ত নগ্ন পদধ্বনি (১৯৭৪), এক ধরনের অহংকার (১৯৭৫), আমি অনাহারী (১৯৭৬), শূন্যতায় তুমি শোকসভা (১৯৭৭), বাংলাদেশ স্বপ্ন দেখে (১৯৭৭), প্রতিদিন ঘরহীন ঘরে (১৯৭৮), ইকারুসের আকাশ (১৯৮২), মাতাল ঋত্বিক (১৯৮২), উদ্ভট উটের পিঠে চলেছে (১৯৮৩), কবিতার সঙ্গে গেরস্থালি (১৯৮৩), নায়কের ছায়া (১৯৮৩), আমার কোনো তাড়া নেই (১৯৮৪), যে অন্ধ সুন্দরী কাঁদে (১৯৮৪), অস্ত্রে আমার বিশ্বাস নেই (১৯৮৫) ইত্যাদি।
এছাড়া উপন্যাসও লেখেছেন তিনি। অক্টোপাস (১৯৮৩), অদ্ভুত আঁধার এক, (১৯৮৫), নিয়ত মন্তাজ (১৯৮৫), এলো সে অবেলায় (১৯৯৪) নামে তার চারটি উপন্যাস রয়েছে। স্মৃতির শহর ও কালের ধুলোয় লেখা নামে দুটি আত্মস্মৃতিমূলক গ্রন্থও রয়েছে তার।
সাহিত্যে অবদান রাখার জন্য পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার। এর মধ্যে রয়েছে আদমজী সাহিত্য পুরস্কার, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পদক, নাসির উদ্দিন স্বর্ণপদক, জীবনানন্দ পুরস্কার, আবুল মনসুর আহমেদ স্মৃতি পুরস্কার, মিতসুবিসি পুরস্কার (সাংবাদিতার জন্য), স্বাধীনতা পদক, আনন্দ পুরস্কার।
কবির জন্মবার্ষিকী স্মরণে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা কর্মসূচির আয়োজন করেছে। এর মধ্যে রয়েছে বনানী কবরস্থানে কবির সমাধিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, আলোচনা সভা, গান ও কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান। কবির স্মরণে বাংলা একাডেমি, জাতীয় কবিতা পরিষদ ও শামসুর রাহমান স্মৃতিপরিষদ যৌথভাবে একাডেমির রবীন্দ্র চত্বরে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।
সকালে কবির সমাধিতে বাংলা একাডেমি, জাতীয় কবিতা পরিষদ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন পুষ্পমাল্য অর্পণ করবে। এরপর বিকাল ৪টায় এ অনুষ্ঠানে শামসুর রাহমানের কবিতা থেকে আবৃত্তি, কবিকণ্ঠে নিবেদিত কবিতা, নৃত্য ও সংগীত পরিবেশিত হবে।
অনুষ্ঠানে আলোচনায় অংশ নেবেন কবি সৈয়দ শামসুল হক, কবি ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর ও বাংলা একাডেমি মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। স্বাগত বক্তব্য দেবেন জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি কবি মুহাম্মদ সামাদ।
বিএ