ভিডিও EN
  1. Home/
  2. সাহিত্য

যে লেখকের লেখা পাঠক গ্রহণ করবে সেই বড় লেখক

প্রকাশিত: ০৬:৩২ এএম, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫

আগামীকাল ৮ সেপ্টেম্বর কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলনের (জন্ম ১৯৫৫) ৬০তম জন্মবার্ষিকী। বাংলা উপন্যাসের কিংবদন্তিতুল্য এই লেখক দীর্ঘদিন সৃজনশীলতার কঠিন পথ পরিভ্রমণ করছেন। তাঁর রয়েছে একাধিক শিল্পোত্তীর্ণ উপন্যাস। জনপ্রিয় বলেই কখনো কখনো তিনি সিরিয়াস গ্রন্থের পাঠকদের কাছে উপেক্ষিত হয়েছেন; সমালোচকের কাছে থেকেছেন অনুচ্চার্য। অনেকদিন ধরে ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’য় সবচেয়ে বেশি বিক্রিত গ্রন্থের তালিকায় রয়েছে তাঁর একাধিক গ্রন্থ। ‘বাঁকা জল’, ‘ভূমিকা’, ‘নদী উপাখ্যান’, ‘কালোঘোড়া’, ‘ভূমিপুত্র’, ‘রূপনগর’, ‘কালাকাল’,  ‘টোপ’, ‘এক দেশে’, ‘বনমানুষ’, ‘যাবজ্জীবন’, ‘পরাধীনতা’ ইমদাদুল হক মিলনের এই উপন্যাসগুলোর বিষয় বিচিত্র- মুক্তিযুদ্ধ, প্রবাসী শ্রমিক, কখনও গ্রামের ভেসে বেড়ানো অসহায় বালক অথবা পুরো একটা গ্রামই উপন্যাসের নায়ক। পাত্রপাত্রীর পেশা ও চরিত্র রূপায়ণেও বৈচিত্র্য রয়েছে। দিনমজুর বেলদার অথবা গ্রাম্য বাজারের ভাসমান নিম্নবর্গ, সার্কাসের জোকার, নদী ভাঙা মানুষ, পতিতাবৃত্তির হাত থেকে নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করা কিশোরী পারুল যে শেষ পর্যন্ত জীবনের বিনিময়ে নিজেকে রক্ষা করে(‘টোপ’)- এরকম আরো অনেক চরিত্রের জীবন্ত উপস্থিতি লক্ষ করা যায় তার গ্রন্থে। মূলত ইমদাদুল হক মিলনের লেখক জীবনের বাছাই করা এ উপন্যাসগুলো নানাস্তরের গ্রামীণ মানুষের জীবনযাপনের চিত্র হিসেবে বিশিষ্ট। জীবনের অনুভূতি ও উপলব্ধির ভাষা পাঠকের নিজস্ব সম্পদ করে তুলেছেন তিনি। মামুলি কথার আখ্যান থেকে তিনি নিজেকে প্রসারিত করেছেন সমাজ-রাজনীতির সংকটের গভীরে। ‘নূরজাহানে’র (তিন খণ্ড) মতো বৃহৎ উপন্যাস লিখে লেখনি ক্ষমতা ও মেধার পরিচয় ব্যক্ত করেছেন। জনপ্রিয় এই কথাশিল্পীর শিল্পমানসম্পন্ন, ব্যতিক্রমী ও জীবনঘনিষ্ট গল্প-উপন্যাসের সূত্র ধরে জাগো নিউজের পাঠকের জন্য তাঁর একটি সাক্ষাৎকার এখানে প্রকাশ করা হলো। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন অধ্যাপক ড. মিল্টন বিশ্বাস

জাগো নিউজ : ষাটতম জন্মবার্ষিকীতে আপনার অনুভূতির কথা বলুন। সাহিত্য চর্চার শুরু থেকে যা ভেবেছেন, যা বুঝেছেন তা কাজে লাগাতে পারলেন কী এ দীর্ঘ জীবনে?

ইমদাদুল হক মিলন : জন্মদিনের অনুভূতিটা একটু অদ্ভুত ধরনের কারণ ষাট বছর বয়স হয়ে গেছে এটা ভাবতে কেমন যেন লাগে, যদিও আমি ঠিক মনে রাখতে চাই না যে আমার ষাট বছর হয়েছে। আমি এখনও নিজেকে আটাশ-ত্রিশ বছরের তরুণ মনে করি, আমার বয়সের ব্যাপারটা ঠিক মাথায় রাখি না। কিন্তু আবার একটা অর্থে ভাবতে গেলে যখন নিজের ফেলে আসা জীবনের দিকে তাকাই; সেই ১৯৭৩ সাল থেকে শুরু করেছি। এতগুলো বছর চলে গেছে, বিয়াল্লিশ বছর হয়ে গেছে। এই বিয়াল্লিশ বছর ধরে লেখালেখি করেই যাচ্ছি করেই যাচ্ছি। তার মাঝখানে কতগুলো চেষ্টা করেছি। বিদেশে গিয়েছি কাজের সন্ধানে, দেশে নানা রকম কাজ করার চেষ্টা করেছি। ব্যবসা করার চেষ্টা করেছি, সর্বত্র এক ধরনের ব্যর্থতা এমনভাবে গ্রাস করেছিল। তারপরেও যেটা চেষ্টা করেছি সেটা হচ্ছে লেখা থেকে কখনো সরে যাইনি। এই জায়গাটার মধ্যে সব সময় থাকার চেষ্টা করেছি। আসলে ষাটতম জন্মদিনের এই দিনটিতে এরকমই একটা অনুভূতি আমার হচ্ছে।

জাগো নিউজ : একটা প্রশ্ন আছে গতানুগতিক, আপনার জন্মদিনে আপনার কাহিনী শুনতে চাই। আপনার পিতামাতা, পরিবেশ-পরিস্থিতি সম্পর্কে।

ইমদাদুল হক মিলন : এই গল্পগুলো, গল্প না ঠিক ঘটনাগুলো আমি বহুবার বহুভাবে লিখেছি। নানা রকম সাক্ষাৎকারে বলারও চেষ্টা করেছি। খুব সংক্ষেপে বলি যে, আমি জন্মেছিলাম আমার নানা বাড়িতে সেটা বিক্রমপুরের মেদিনীমণ্ডল নামের একটি গ্রামে, আমি নানীর কাছে বার বছর পর্যন্ত থেকেছি আমরা অনেকগুলো ভাই বোন, এগারোটা ভাইবোন ছিলাম আমরা। তার মধ্যে একজন খুব অল্প বয়সে মারা গেল। আবার একজন আটচল্লি­শ বছরে মারা গেল। তো আমরা এখন নয় ভাই-বোন। বাবা মারা গেলেন উনিশ শো একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময়, মা মারা গেলেন ২০০৫ সালে। আব্বা মারা যাওয়ার পর এতগুলো সন্তান নিয়ে আমার মা যে সংকটে পড়েছিলেন; জীবনকে আবার দাঁড় করানোর চেষ্টা করেছিলেন সেটি আমার কাছে বিস্ময়কর মনে হয়। একজন মহিলা তার হাতে দশটি টাকাও ছিল না। বাবার বাড়িতে সম্পদ যে টুকু পেয়েছিলেন সেগুলো বিক্রি করে ছেলেমেয়েদের দাঁড় করানোর চেষ্টা করেছেন। সেটা আমার কাছে অনেক বড় ব্যাপার। মানে আমার মায়ের সততা আমার কাছে বিশাল ব্যাপার মনে হয়। কারণ আব্বা যখন মারা গেলেন আব্বার মারা যাওয়ার ঘটনাটা খুব অদ্ভুত ধরনের। আব্বার মারা যাওয়ার পরে আমার মনে হয়, এখানে একটা গড গিফটেড ঘটনা বলা দরকার।

আমার বাবা সামান্য কেরানীর চাকরি করতেন। এতগুলো সন্তান নিয়ে সংসার যাপন করা খুব মুশকিল। তারপরেও একটা সময় যখন আব্বা দেখছেন আমরা ছোট ছোট তখনও তিনি অফিসে যাচ্ছেন। কাজ করছেন। তিনি তার সন্তানগুলোকে বাঁচিয়ে রাখার যুদ্ধে লিপ্ত ছিলেন। এ পরিস্থিতিতে আমাদের পাড়ার রাজাকারদেরকে কেউ একজন এরকম কথা রটালো যে এই ভদ্রলোক মুক্তিযোদ্ধাদেরকে সাহায্য করেন, মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। সেই সময় মিলিশিয়ারা এসে আমার বাবাকে খুব হুমকি ধমকি করেছেন এবং এর মধ্যে একজন কাবুলিওয়ালাও ছিল। যার কাছ থেকে বাবা এক সময় টাকা ধার নিয়েছিলেন। কাবুলিওয়ালারা তখন সুদে টাকা ধার দিত। আসল টাকা শোধ করে দিয়েছিলেন। সুদের টাকার জন্য কাবুলিটা আসত। সেই লোকটা মিলিশিয়াদের সঙ্গে আমাদের বাড়িতে আসে, আব্বা সেই সময় বাড়ি ছিলেন না। পরে বাড়ি ফিরে একথা শোনার পর থেকে তার মধ্যে অস্থিরতা শুরু হয়। সেই রাতেই তিনি হার্ট অ্যাটাক করে মারা যান। এটাকে আমি মনে করি আমার বাবা মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানিদের চাপে মারা যান। যাই হোক এ ঘটনা আমি সর্বত্র বলতে চাই না। তবে আজকে লুকাবারও কিছু নেই। তারপর থেকে আমাদের মা আমাদের নিয়ে যে যুদ্ধটা করেছেন এটা আমার কাছে খুব ভয়ঙ্কর মনে হয়। ছেলেবেলার দিনগুলো কেটেছে নানীর কাছে। তারপর একটু বড় হওয়ার পরে দিনগুলো কেটেছে ঢাকায়। এইভাবে আমার জীবনটা শুরু হয়েছিল।

জাগো নিউজ : আপনার স্কুল ও প্রথম জীবনের গল্প কেমন ছিল? এটা দুঃখের না সুখের?

ইমদাদুল হক মিলন : মানুষের জীবন যে একচেটিয়া সুখের বা একচেটিয়া দুঃখের নয় বিষয়টা তেমনই। দুঃখটা মানুষের কীরকম হয়তো অভাব অনটন লেখাপড়া করতে না পারা এরকম নানা দুঃখ বোধের মধ্য দিয়ে মানুষের আনন্দ ঘন জীবন কাটে। সে রকম প্রচুর আনন্দের জীবন আমি কাটিয়েছি। নানা রকম অভাব অনটনের মধ্যে দিয়ে ছোটবেলা ভালো সময়ও কেটেছে। অনেক অনেক আনন্দের দিনও গেছে। কিন্তু তার মধ্যে আমি আমার চারপাশে সাধারণ কিছু মানুষ পেয়েছি, যেমন আমার নানীর কাছে আমি বড় হয়েছি। আমার এখনও পর্যন্ত মনে হয় যে এই রকম হৃদয়বতী মানুষ আমি আর দেখিনি। এই রকম হৃদয়বতী নারী আমি আর দেখিনি। আমি আমার নানীর কথা লিখেছি আমার ‘কেমন আছ, সুবজপাতা’ উপন্যাসে। সে উপন্যাসে প্রকৃত অর্থে আমার ছেলেবেলার কথা আছে। আমার ‘বাঁকাজল’ বলে একটা উপন্যাস আছে সেখানেও আমি আবার ছেলেবেলার কথা লিখেছি। আমার ‘বন্ধু বান্ধব’ বলে একটা উপন্যাস আছে সেখানে আমার কৈশোর বয়স থেকে শুরু করে যৌবন বয়সে যুবক হয়ে ওঠার সময় বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে যে ঘটনা ওটাও আমার একটা জীবনী। এই লেখাগুলোর মাঝে আমার জীবনের কথা লেখা আছে। এগুলো নিয়ে আমি বিস্তারিত বলতে চাই না। কারো যদি বিশেষ কোনো আগ্রহ থাকে তাহলে এই বইগুলো পড়ে নিলে তারা আমার সম্পর্কে জানতে পারবেন।

জাগো নিউজ : গ্রামে কাটানো বাল্য কৈশোর জীবন আপনার লেখক হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে কোনো প্রভাব ফেলেছে?

ইমদাদুল হক মিলন : যদি আমার ছেলেবেলাটা ঐ গ্রামে আমার নানীর কাছে না পেতাম তাহলে আমার লেখক হয়ে ওঠা হত না। কারণ আমি যখন আমার নানীর কাছে একা একা থাকতাম কোনো বর্ষায়; দীর্ঘ ছমাস ধরে বর্ষাকাল ছিল তখন জৈষ্ঠ্য মাসের শেষের দিক থেকে শুরু হয়ে অগ্রহায়ণ মাস পর্যন্ত বর্ষাকাল। অবিরাম বৃষ্টি। তিনদিন-চারদিন-পাঁচদিন ধরে বৃষ্টি। বাড়ির ওঠান পানিতে ভেসে যাচ্ছে। একটা ঘরের মধ্যে বিশাল নদী হয়ে আছে। বাড়ির মধ্যে বিশাল একটা ঘর। ঘরের মধ্যে আমি আমার নানী সঙ্গে কাজের মানুষ, কখনো কখনো কোনো ভাই বোন কখনো কখনো কোনো খালা। আমার একমাত্র খালা ছিলেন। নানী সে সময় আমাকে আমার সঙ্গে যারা থাকত তাদের সামনে গল্প বলতে বলতেন। তিনি তখনকার গ্রামের স্কুলে পড়েন। কিন্তু আরবি, বাংলা পড়তে পারতেন, আমাকে নানা রকম গল্প বলতেন। এগুলো শুনতে শুনতে আমার একটি কল্পনার জগৎ তৈরি হয়েছিল। কল্পনা প্রবণ হয়ে ওঠার পেছনে আমার নানীর যে ভূমিকা ছোটবেলায়- এটা না থাকলে আমার লেখক হয়ে ওঠা হত না। বিক্রমপুরের এই গ্রাম, নির্জনতা, পাখির ডাক, এক এক ধরনের গাছের এক এক প্রকৃতি এই যে বিষয়গুলো আমি দেখেছিলাম পরবর্তীতে আমার লেখক জীবনে এগুলো প্রভাব ফেলেছিল। সুতরাং ঐ ছেলেবেলাটা আমি যদি না পেতাম তবে আমার লেখক হয়ে ওঠা হত না।

জাগো নিউজ : বিক্রমপুর থেকে ঢাকায় এসে শিক্ষা গ্রহণ আর ছাত্র জীবনের কাহিনী এটা কেমন ছিল? সেই সময় আপনার জাতীয় রাজনীতির প্রতি আগ্রহ ছিল কি?

ইমদাদুল হক মিলন : রাজনীতিতে আমার কখনোই আগ্রহ ছিল না, না থাকার প্রধান কারণ হচ্ছে আব্বা বেঁচে থাকা অবস্থাতেই আমরা নানান প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলাম। আমি যখন ক্লাশ নাইনে পড়ি তখন টিউশনি করতাম। আমার বড় ভাই টিউশনি করতো, এসব মিলে আমি আর আমার বড় ভাই আব্বাকে কিছুটা সাপোর্ট করার চেষ্টা করতাম। তাই আমাদের অন্যান্য বিষয় যেমন রাজনীতি, বন্ধুবান্ধব-আড্ডা এসব বিষয়ে তাকাবার মতো সুযোগ বা অবস্থা ছিল না। আমার তো ছিলই না, তারপর নিজের লেখাপড়া নিজেদের সংসারের চিন্তা করা, পরিবারটি বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করা, ভালভাবে চলার চেষ্টা করার কারণে রাজনীতি আর করা হয়নি। পড়াশোনাতে মোটামুটি খারাপ ছিলাম না। তখন গেন্ডারিয়া হাই স্কুলে পড়েছি, তখন আমাকে স্কুল ফিস ফ্রি করে দিয়েছিল। যখন এসএসসি পরীক্ষা দেই সেই পরীক্ষার ফি আমার একজন টিচার দিয়ে দিয়েছিলেন। তখন আমাদের এরকম অবস্থা, এ অবস্থার মধ্য দিয়ে ৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় মা আমাদের নিয়ে স্ট্রাগল করছেন। বাবা মারা গেলেন। তারপর কলেজ জীবন। অলটাইম একটা স্ট্রাগল এর মধ্য দিয়ে গেলো। যার ফলে অন্য কোনো দিকে তাকানোর সুযোগ হয়নি।

জাগো নিউজ :  ঢাকায় এসেও রাজনীতি...

ইমদাদুল হক মিলন : আমি এটা ঢাকার কথা বলছি। আমি বিক্রমপুর থেকে চলে এসেছি বার বছর বয়সে।

Nurjahan

জাগো নিউজ : সাহিত্য চর্চা তথা লেখা ও লেখা প্রকাশের গল্পটা শুনতে চাই। লেখক হয়ে ওঠার অনুপ্রেরণা পেলেন কোথা থেকে?

ইমদাদুল হক মিলন : লেখক হয়ে ওঠার গল্প আমি বহুবার বলেছি। একই কথা আমার বারবার বলতে ভাল লাগে না। বহুবার বহুভাবে আমি বলেছি যে আমাদের গেন্ডারিয়াতে একটি পাঠাগার ছিল। আমি তো খেলাধুলা কিছুই পারতাম না একটা অপদার্থ টাইপের ছিলাম। খেলাধুলা সাইকেল চালানো মোট কথা ঐ বয়সের ছেলেরা যা করে। আমি বিকাল বেলা একটু অবসর পেলে ঐ ‘সীমান্ত গ্রন্থাগারে’ গিয়ে বই পড়তাম। সেখানে একজন তরুণ লেখক অমিত যে তখনকার ছোট পত্রিকাগুলোতে লেখত। আমাদের বন্ধুজন। তার লেখা যখনই প্রকাশিত হতো সেটার কাটিং নিয়ে আমাদের কাছে আসত। সে খুব অহংকার করে দেখাতো তার লেখা, এটা দেখে আমার মনে হতো এই ছেলেটা লিখতে পারে, চেষ্টা করলে তো আমিও লিখতে পারি। এই মনোভাব থেকে আমি লিখতে শুরু করি।

জাগো নিউজ : স্বতন্ত্র কেউ অনুপ্রাণিত করেনি।

ইমদাদুল হক মিলন : বেশির ভাগ লেখক এ প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে বলেন যে সে একটি মেয়ের প্রেমে পড়েছিলেন মেয়েটিকে খুশি করার জন্য লিখেছিলেন। বা কাউকে আকর্ষণ করানোর জন্য লিখেছিলেন বা প্রেমিকা তাকে অনুপ্রাণিত করেছিলেন। বা তার পরিবারের ঘনিষ্ঠজন বা কাছের কেউ অনুপ্রাণিত করেছিলেন। বরং আমি লিখতে এসেছি এমন এক পরিবার থেকে যেখানে আমি রোজগারের জন্য চেষ্টা করলে আমার পরিবারের সবাই সাপোর্ট করত। অর্থাৎ অনেক দিন পর্যন্ত আমার পরিবারের কেউ লেখাকে সাপোর্ট করেনি। তারা ভেবেছে যে আমি লেখালেখি করে স্পয়েল হয়ে যাচ্ছি। আমি সংসার কোনোভাবে দেখতে পাচ্ছি না বরং ক্ষতি করছি। সে কারণে পরিষ্কারভাবে একটা জিনিস আমি বলতে চাই যে আমাকে লেখালেখির ক্ষেত্রে কেউ কখনো উৎসাহ বা এই জাতীয় কিছু বলেনি। যখন দু’একটা লেখা বের হতে শুরু করেছে কেউ কেউ আকৃষ্ট হয়েছে তখন কেউ কেউ বলেছে যে এই ছেলেটা লিখতে পারবে। তুমি চেষ্টা কর। যদি লেখকদের মধ্যে কেউ কেউ আমাকে অনুপ্রাণিত করে থাকেন লেখালেখির ক্ষেত্রে তবে তিনি হচ্ছেন রফিক আজাদ, প্রথমত রফিক আজাদ দ্বিতীয়ত শহীদ কাদরী। এই দুজন আমাকে ব্যাপকভাবে অনুপ্রাণিত করেছেন। অনুপ্রাণিত বলতে যখন আমার কিছু লেখা বেরিয়েছে তখন তারা আমাকে দেখিয়ে দিয়েছেন বুঝিয়ে দিয়েছেন যে এটা এভাবে করো।

জাগো নিউজ : প্রথম গল্পটা কোথা থেকে প্রকাশিত? পাঠকের সাড়া কেমন পেয়েছিলেন?

ইমদাদুল হক মিলন : ১৯৭৩ সাল ছোটদের গল্প নাম হচ্ছে ‘বন্ধু’। এটা তখনকার পত্রিকা ‘দৈনিক পূর্বদেশ’ এর ছোটদের পাতা ‘চাঁদের হাট’-এ প্রকাশিত হয়েছিল। এরপর বড়দের গল্প ‘শঙ্খিনী’। গল্পটি বাংলাদেশের অনেক পত্রিকায় ছাপতে গিয়েছিলাম কিন্তু তারা ফেরত দিয়েছে। তারা কেউ ছাপতে চায়নি। পরে গল্পটি আমি অমৃত পত্রিকায় পাঠিয়ে দিলাম, ঐ বছরই। অমৃত পত্রিকায় গল্পটি খুব সম্মানের সঙ্গে ছাপা হল। দুটো গল্পেরই সাড়া ব্যাপকভাবে হল। সে সপ্তাহে ছোটদের গল্প পাঠানো হয়েছিল তার পরের সপ্তাহে বড়দের গল্প ছাপা হল। পরে ‘চাঁদের হাটের’ একটি অনুষ্ঠানে গেলাম। সেখানে অনেকবন্ধু বান্ধব পেলাম সেই বন্ধুরা অনুপ্রাণিত করেছে পরবর্তী সময়ে। আর অমৃত পত্রিকায় লেখাটি ছাপা হওয়ার ফলে লেখকদের মধ্যে আকৃষ্ট হয়েছিলাম আমি।

জাগো নিউজ : সাহিত্য চর্চার সূচনায় শিশুতোষ রচনায় অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন কেন? কিশোর গল্প ‘বন্ধু’ রচনার পটভূমি কি ছিল?

ইমদাদুল হক মিলন : পটভূমিটা ছিল গেন্ডারিয়ার একটি বাড়িতে থাকতাম, সে বাড়িতে প্রচুর বানর ছিল। একটা পা ভাঙা বানরকে আমার ছোট ভাই খাবার দিত, এটা দেখে আমার মনে হয়েছে যে একটা বানরের সঙ্গে একটা বাচ্চা ছেলের বন্ধুত্ব নিয়ে একটা গল্প লেখা যায়। তো এই ধরনের গল্প সাধারণত শিশু কিশোরদের উপযোগী হয়। তেমন কিছু ভেবে লিখিনি। মনে হয়েছিল লিখে ফেলেছি। এতে অনুপ্রাণিত হওয়ার কিছু নেই। দৃশ্যটি দেখে লিখে ফেলেছি। কেউ বলেনি যে তুমি লেখ। আর বড়দের গল্পটা লিখেছিলাম নিজের অনুপ্রেরণা থেকে কারণ যখনই ‘বন্ধু’ গল্পটা ছাপা হয়ে গেল, ছাপা লেখায় নিজের নাম দেখে আমি পাগল হয়ে গেছি। একদম উন্মাদের মতো। লিখতে শুরু করলাম, একটা লোভ যে খবরের কাগজে আমার নাম ছাপা হবে। এ কারণেই এই দীর্ঘদিন পর্যন্ত লিখেছি। তখন লেখা কি? গল্প কেমন করে লিখতে হয়? ভাষা কেমন করে কি পড়তে হয় কিছুই জানতাম না, নিজের মতো করেই লিখেছি।

জাগো নিউজ : প্রথম গল্পগ্রন্থ ভালবাসার বারটি গল্প নিয়ে ১৯৭৭ সালে প্রকাশিত। লেখক হিসেবে গল্প দিয়ে শুরু করেছিলেন কেন? ২০১৫ সালে নিজেই ঐ সৃষ্টিকর্মকে কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?

ইমদাদুল হক মিলন : এখন নিজের লেখালেখির মূল্যায়ন করার ইচ্ছা বা আগ্রহ আমার নেই। যদি আমি সামান্যতম লিখে থাকতে পারি সেটা মূল্যায়ন করবে পাঠক। গল্প দিয়ে শুরু করেছিলাম কারণ ছেলেবেলায় আমি নানীর মুখে গল্প শুনে শুনে বড় হয়েছি। আমার মনে কাব্য ভাবনাটা ঠিক কখনো আসেনি। কাহিনী বানিয়ে বানিয়ে গল্প বলার প্রবণতা চলে এসেছে। এ কারণে আমি গল্প দিয়ে শুরু করেছিলাম। কবিতার কথা আমি কখনো ভাবিনি, বা অন্য কোনো কিছু লেখার কথা ভাবিনি। কাহিনীর প্রতি বা ঘটনার প্রতি আমার একটা দুর্বলতা ছিল। যেটা গল্প লেখার ক্ষেত্রে কাজে লাগতো, পরবর্তীতে উপন্যাস লেখার ক্ষেত্রে কাজে লাগে।

জাগো নিউজ : আরেকটি প্রশ্ন- মুক্তিযুদ্ধোত্তর বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয় ধারা সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন জানতে চাই।

ইমদাদুল হক মিলন : জনপ্রিয় ধারা আর অজনপ্রিয় ধারা- এই ধারা বিষয়টি আমার পছন্দ নয়। লেখকের একটি লেখা যেমনই হোক পাঠক যদি তা গ্রহণ করে থাকে তবে তিনি জনপ্রিয় লেখক, জনপ্রিয় লেখক শব্দটির মধ্যে তুচ্ছ- তাচ্ছিল্যের প্রবণতা আছে আমাদের দেশে। যেমন ঐ লেখক জনপ্রিয়, ওই লেখার কিছু হয়নি। আমি মনে করি বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তার সব লেখাই অনন্তকাল ধরে বেঁচে থাকবে। শরৎচন্দ্রের সব লেখাই বহু বছর ধরে বেঁচে থাকবে। বাংলা সাহিত্যের কোন্ বড় লেখক জনপ্রিয় নয়? ইংরেজি সাহিত্যের কোন্ বড় লেখক জনপ্রিয় নন? মার্কেজের চেয়ে বড় কে আছে? হেমিংওয়ের সময় তাঁর চেয়ে বড় লেখক কে ছিলেন। তলস্তয় তো এখনও জনপ্রিয়। দস্তয়ভস্কি এখনো জনপ্রিয়। জনপ্রিয় বলতে আমাদের দেশে আমরা এক সস্তা লেখককে মনে করি। এই মনে করাটার মধ্যে আমি নেই। আমি মনে করি যে লেখকের লেখা পাঠক গ্রহণ করবে সেই লেখক বড় লেখক। কারণ যারা তাঁর লেখা পড়ছেন তারা মূর্খ নন। কারণ মূর্খরা পড়ে না। সাহিত্য পড়ে সচেতন ব্যক্তি। আমার একটি লেখা হুমায়ূন আহমেদের একটি লেখা বা সৈয়দ শামসুল হকের একটি লেখা বা আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের একটি লেখা বা সেলিনা হোসেন, শহীদ কাদরী, রফিক আজাদ বা শামসুর রাহমান- এঁদের লেখা কমবেশি পাঠকদের কাছে পৌঁছে গিয়েছে। কোনো কোনো লেখক পাঠক-পাঠিকার কাছে ব্যাপকভাবে পৌঁছে যায়। কোনো লেখক একটু কম পৌঁছে যায়। যে লেখক কম পৌঁছান তিনি জনপ্রিয় লেখক নন বা অন্য ধারার লেখক। একজন লেখক তাঁর নিজের মতো লেখেন।

আখতারুজ্জামান ইলিয়াস তাঁর মতো লিখেছেন। হুমায়ূন আহমেদ তাঁর মতো লিখে গেছেন। এখন আখতারুজ্জামানকেও একশ জন পাঠক গ্রহণ করেছেন। হুমায়ূন আহমেদকে একশ জন পাঠক গ্রহণ করেছেন, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কেও একশজন পাঠক গ্রহণ করেছেন, দেবেশ রায়কে একশ জন পাঠক গ্রহণ করেছেন। এই দেবেশ রায়ের কিছু জনপ্রিয় লেখা আছে, আবার আখতারুজ্জামানের ‘খোয়াবনামা’ বইটি কোলকাতায় ১৫টি এডিশন হয়েছে। তার মানে তাঁর লেখা ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। তিনি জনপ্রিয় লেখক। এক অর্থে। কিন্তু তাঁর বলার ভঙ্গি, বর্ণনার ভঙ্গি, রাজনৈতিক বক্তব্য, দর্শন হয়ত হুমায়ূন আহমেদের চেয়েও অনেক ভালো। এজন্য জনপ্রিয় ধারা বা অজনপ্রিয় ধারায় আমি বিশ্বাসী নই। একজন লেখক তাঁর মত করে লেখেন। তাঁর ক্ষমতা অনুযায়ী লেখেন। তাঁর মেধা অনুযায়ী লেখেন, তাঁর ভঙ্গি অনুযায়ী লেখেন। সেই ভঙ্গি পাঠক বেশি গ্রহণ করতে পারেন আবার পাঠক কম গ্রহণ করতে পারেন।

ব্যাপারটা এই জায়গায়, স্বাধীনতাত্তোর সময়ে সাহিত্যের জনপ্রিয় ধারা বা অজনপ্রিয় ধারা এ বিষয়ে আমার যতটুকু বলার আমি বলেছি। একটা জিনিস আপনাকে বলার আছে সেটা হচ্ছে স্বাধীনতার আগে বাংলাদেশে লেখক ছিল না, গুটি কয়েক বোদ্ধা লেখক ছিলেন যাঁরা গল্প, উপন্যাস প্রবন্ধ লিখতেন। কিন্তু তাঁরা একরকম চাপের মুখে ছিলেন। কারণ তাঁরা একটা পরাধীন দেশে বসবাস করতেন। তাঁরা যা লিখতে চাইতেন যেমন করে লিখতে চাইতেন হয়তো তা পারতেন না। যখনই বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হল আমাদের পুরোনো লেখকরা হাত খুলে লিখতে শুরু করলেন। তাঁদের সাথে সাথে একঝাক তরুণ লেখকও লিখতে শুরু করলেন। ফলে বাংলা সাহিত্য ব্যাপকভাবে আগাতে শুরু করল। একটা সময় পশ্চিমবঙ্গের সাহিত্যিকরা তাদের লেখার দ্বারা বাংলাদেশের বইয়ের বাজার একদম পূর্ণাঙ্গভাবে ছেয়ে রেখেছিল। আমরা যখন ব্যাপকভাবে লিখতে শুরু করলাম তখন পশ্চিমবঙ্গের সাহিত্য ধীরে ধীরে সরে যেতে লাগল। আর সেই জায়গাতে বাংলাদেশের লেখকরা ঢুকে গেল। তখন দেশে সাহিত্যের জগতটা বড় হয়ে গেল। বইয়ের জগৎ খুলে গেল। কথাসাহিত্যে ও পত্রপত্রিকায় প্রচুর লেখক এল। বাংলাদেশের সাহিত্য নিজস্ব একটি ধারা তৈরি করল। সাহিত্যের একটা মানদণ্ড তৈরি করল। একটা জায়গায় এসে আমাদের সাহিত্যটা দাঁড়াল।

জাগো নিউজ : কিছু রিলেটেড কোশ্চেন। অনেক দিন লিখছেন, লিখে যাওয়া এক কথা আর সাহিত্য সৃষ্টি করা আর এক কথা। এ সম্পর্কে আপনার অভিমত কি?

ইমদাদুল হক মিলন : সাহিত্য সৃষ্টি আর লেখা এ ব্যাপারটা পণ্ডিতরা দুরকমভাবে দেখেন। আমার একটা ছোট উদাহরণ আছে- এক্ষেত্রে গ্রাম বাংলায় একটা কথা প্রচলিত আছে যে কচুগাছ কাটতে কাটতে ডাকাত হয়। কচু গাছ খুব নরম। পোচ দিলেই কেটে যায়। আস্তে আস্তে সেই লোকটি হয়তো একটা মানুষের গলা কেটেছে। সাহিত্যের মধ্যেও একটা চর্চার ব্যাপার আছে, আবার কোনো কোনো লেখক জন্মগতভাবেই একটা অসাধারণ প্রতিভা নিয়ে পৃথিবীতে আসে। হয়তো প্রথম লেখাতেই তিনি মাত করে দেন। হয়তো পরবর্তী লেখায় অত ভাল তিনি লিখতে পারেন না। আর এক শ্রেণির লেখক আছেন যারা চর্চা করে করে লেখক হয়ে ওঠেন। আমার কোনো জন্মগত প্রতিভা আছে বলে মনে হয় না। আমি লেখালেখির চেষ্টা করেছি। চর্চা করেছি, পড়ার চেষ্টা করেছি, তাৎক্ষণিকভাবে মানুষকে বিনোদিত করার মত লেখার চেষ্টা করেছি। প্রচুর প্রেমের গল্প-উপন্যাস লেখার চেষ্টা করেছি।

আবার দীর্ঘ সময় ধরে একটা ‘নূরজাহান’ লেখার চেষ্টা করেছি। আবার ‘কেমন আছ সবুজ পাতা’ লেখার চেষ্টা করেছি বা ‘সাড়ে তিন হাত ভূমি’ লেখার চেষ্টা করেছি। ‘কালোঘোড়া’, ‘কালাকাল’, ‘পরাধীনতা’, ‘পরবাস’, ‘বাঁকাজল’, ‘নদী উপাখ্যান’ এরকম উপন্যাস লেখার চেষ্টা করেছি। গল্পের বই লেখার চেষ্টা করেছি। আমি যদি আমার নিজের দিকে তাকাই তবে আমার লেখাকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়। একটা ভাগ হচ্ছে শহর কেন্দ্রিক এক ধরনের আমার সময়কার তরুণদের জীবনযাত্রা প্রেম ভালবাসা স্বপ্ন, তাদের বেঁচে থাকা এগুলোকে আমি লেখার মধ্যে এনেছিলাম খুব সরল আঙ্গিকে, জটিলতার দিকে তাকাইনি। এটা একটা দিক, সেইসব লেখার কোনো কোনোটা জনপ্রিয় হয়েছে। পাঠক গ্রহণ করেছে ব্যাপকভাবে। এর পাশাপাশি আমি ‘নিরন্নের কাল’ লেখার চেষ্টা করেছি। লক্ষ্য করতে হবে আমার প্রথম বইয়ের নাম ‘ভালবাসার গল্প’ আর দ্বিতীয় বইয়ের নাম ‘নিরন্নের কাল’ এই বইগুলির দিকে একজন পাঠক বা সাহিত্য বোদ্ধা তাকায় তাহলে বুঝতে পারবেন একই লোক কীভাবে একই সাথে ভালবাসার গল্প আর নিরন্নের কাল গল্প গ্রন্থ দুটি লেখে কারণ দুটো দুই মেরুর ব্যাপার। নিরন্নের কাল শব্দের অর্থই হয়তো অনেকে বুঝবেন না। আর ভালবাসার গল্প সবাই বুঝবে। একজন লেখক কীভাবে দুই রকম লেখা লেখে? সে জন্য আমি আমার লেখকসত্তাকে দুই ভাগে ভাগ করে নিয়েছিলাম প্রথম থেকে। একটি ভাগের কথা আমি বললাম- তাৎক্ষণিকভাবে ভালোবাসা জীবনাচরণ তারুণ্য নিয়ে লিখেছিলাম। তরুণদের জীবনাচরণ তাদের স্বপ্ন নিয়ে লিখেছিলাম, এরপর যে জীবনের মধ্যে বড় হয়ে উঠেছি একটা সময় সেই গ্রাম জীবনের স্ট্রাগলের কথা দেখার চেষ্টা করেছি।

মানুষের দারিদ্রের কথা লেখার চেষ্টা করেছি। নিরন্নের কথা, চাষি, মজুর-কামার, কৃষক, গ্রামের একেবারে ভাসমান মানুষ, খেটে খাওয়া মানুষ এদের কথা লেখার চেষ্টা করেছি; মুক্তিযুদ্ধের কথা নিয়ে লেখার চেষ্টা করেছি। মুক্তিযুদ্ধ কারা করেছে যারা গ্রামের একেবারে খেটে খাওয়া মানুষ যারা রাজনীতি বোঝে না, যারা দেশকে ভালোবাসে, দেশকে রক্ষার জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেছে। সে রকম যুবকদের নিয়ে আমি ‘কালোঘোড়া’ নামে একটি উপন্যাস লিখেছি। আমার প্রত্যেকটি উপন্যাসই পাঠক যদি খেয়াল করেন তবে দেখতে পাবেন মুক্তিযুদ্ধে ভাসমান মানুষদের অংশগ্রহণ, ছাত্রদের অংশগ্রহণ এ বিষয়গুলোকে আমি গুরুত্ব দিয়েছি। আমি গুরুত্ব দিয়েছি ধর্মকে। এক সময় বাংলাদেশের পুরো গ্রামকে ছেয়ে ফেলেছে ধর্মান্ধতা। বাংলাদেশের গ্রাম-গঞ্জের ধর্মান্ধ কিছু মানুষ মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তিসহ তারা ধর্মের আবরণে গ্রামের মানুষদের অত্যাচারের চেষ্টা করেছে। নারীর উপর নির্যাতন চালিয়েছে এরকম মানুষদের নিয়ে আমি লেখার চেষ্টা করেছি ‘নূরজাহান’। ‘নূরজাহান’-এর ঘটনাটা কুক্ষিগত ছিল বাংলাদেশে। সেই ‘নূরজাহান’ ঘটনাটি আমি বিশাল একটি ক্যানভাসে বহু চরিত্রের সংমিশ্রণে চিত্রিত করেছি। এই নূরজাহান এর মধ্য দিয়ে আমি গ্রাম যেমন তুলে ধরেছি, গ্রামের মানুষ যেমন তুলে ধরেছি, তেমনি গ্রামের ধর্মান্ধরা কীভাবে মানুষের উপর নির্যাতন চালাচ্ছে, কীভাবে ফতোয়া দ্বারা মানুষের জীবন সংহার করছে এই পুরো জিনিসটা আমি তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। পুরো বাংলাদেশকে আমি ‘নূরজাহান’এর মধ্যে আবদ্ধ করার চেষ্টা করেছি।

জাগো নিউজ : সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ, সেই সঙ্গে জন্মদিনের শুভেচ্ছা।

ইমদাদুল হক মিলন : ধন্যবাদ।

এইচআর/পিআর