ভিডিও EN
  1. Home/
  2. সাহিত্য

নিউইয়র্কে বহুবচন- এর পাঁচটি বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠান

প্রকাশিত: ০৭:৫৩ এএম, ২৪ আগস্ট ২০১৫

নিউইয়র্কে সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংগঠন বহুবচন এর উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হলো পাঁচটি বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠান। গত ২২ আগস্ট ২০১৫ শনিবার বিকেলে জ্যামাইকার একটি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় এই উৎসব।

আলোচিত গ্রন্থগুলো ছিল-কবি শামস আল মমীন এর কাব্যগ্রন্থ `মনোলগ`, কবি ফকির ইলিয়াসের কাব্যগ্রন্থ `গৃহীত গ্রাফগদ্য`, আহমেদ ছহুল এর কাব্যগ্রন্থ `বাষ্প অথবা ছায়াবৃক্ষ`, আলম সিদ্দিকীর ছড়াগ্রন্থ ` আঁধারে জোনাকি` এবং সৈয়দ টিপু সুলতান এর ভ্রমণকাহিনী `অপ্রত্যাশিত অভিযাত্রা`।

বিশিষ্ট নাট্যজন মুজিব বিন হকের ভূমিকা বক্তব্যের মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। শুরুতেই নিজের কথা ও কবিতা পড়েন আহমেদ ছহুল। তার কাব্যগ্রন্থ  `বাষ্প অথবা ছায়াবৃক্ষ` নিয়ে আলোচনা করেন বিশিষ্ট আবৃত্তিকার কাজী আরিফ। তিনি বলেন, এই কবির অনেক কবিতা পড়তে গিয়ে আমাকে হোঁচট খেতে হয়েছে। তারপরও তার কবিতার কিছু বক্তব্য-চিত্রকল্প আমাকে মুগ্ধ করেছে। বেশি করে আধুনিক কবিতা পঠন-পাঠন`ই এই অবস্থা থেকে উত্তরণের পথ বলে মন্তব্য করেন কাজী আরিফ।

নিজের কথা শোনান আলম সিদ্দিকী। আলম সিদ্দিকীর ছড়াগ্রন্থ `আঁধারে জোনাকি` নিয়ে আলোচনা করেন সাপ্তাহিক আজকাল পত্রিকার সম্পাদক বিশিষ্ট সাংবাদিক-লেখক মনজুর আহমদ। তিনি বলেন, ছড়া আমাদের সামজের অসঙ্গতি তুলে ধরে। তিনি প্রসঙ্গত বলেন, আলম সিদ্দিকী ক্লরি হিউ এর ধারা অনুসরণ করেছেন। তার তীর্যক বাক্যবাণ আমাদের চেতনায় আঘাত করে। আমাদের জাগাতে চায়। আর এটাই তো একজন ছড়াকারের মূল কাজ। তার ছড়ায় অনেক মহান মানুষের কথা এসেছে। তাকে আরও ছন্দ সচেতন হবার পরামর্শ দেন আলোচক।

কবি ফকির ইলিয়াস পড়ে শোনান নিজের দুটি কবিতা। ফকির ইলিয়াসের কাব্যগ্রন্থ `গৃহীত গ্রাফগদ্য` নিয়ে আলোচনা করেন আশির দশকের শক্তিমান কবি তমিজ উদদীন লোদী। তিনি বলেন, এই কাব্যগ্রন্থে ৫৫টি কবিতা রয়েছে। যে কবিতাগুলোর প্রতিটিই রাজনৈতিক স্পর্শে লিখিত কবিতা। প্রতিটি কবিতায় কবি যে দ্রোহ দেখিয়েছেন, তা আমাদের সামাজিক-রাজনৈতিক-বৈশ্বিক অসঙ্গতি ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, ফকির ইলিয়াসের কাছ থেকে আমরা আরও প্রেমের কবিতা চাই। তুলনামূলক আলোচনায় তিনি বলেন, আমরা নেরুদা কিংবা লোরকা`র রাজনৈতিক কবিতাই বেশি পড়েছি। কিন্তু এই সময়ে তাঁদের প্রেমের কবিতাও অধিক পঠিত হচ্ছে। তিনি বলেন, কবিতার ভেতরে গদ্য তাত্ত্বিক বিষয়। ফকির ইলিয়াস তার কবিতায় সেই কাজটি করতে পেরেছেন খুব দক্ষতার সাথে। তিনি বলেন, গদ্যের ভেতরে কবিতা থাকা অপরিহার্য নয়। কিন্তু কবিতার ভেতরে গদ্য থাকা চাই। এই কবি সেই ধারাটি সঞ্চারিত করতে পেরেছেন। তার এই গ্রন্থে তিনি প্রচলিত ছন্দে কবিতা লিখেন নি।



কবি তমিজ উদদীন লোদী বলেন, ইয়েটস আমাদের জানাচ্ছেন- রাজনীতির ডামাডোলেও চমৎকার কবিতা রচিত হতে পারে। এই কবির অনেক কবিতা পড়ে আমার তাই মনে হয়েছে। তিনি বলেন, তার কবিতাগুলো অবারিত। উন্মোচিত।
কবিতায় প্রচ্ছন্নতা নেই। ঘোর নেই। আমরা তার কাছ থেকে আরও প্রেমাচ্ছন্ন কবিতা চাই। তিনি উল্লেখ করেন, আধুনিক শব্দচয়ন ফকির ইলিয়াসের কবিতাকে অনেকটা শাণিত করে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

সৈয়দ টিপু সুলতানের বই `অপ্রত্যাশিত অভিযাত্রা` নিয়ে আলোচনা করেন সাপ্তাহিক ঠিকানা`র প্রধান সম্পাদক মুহম্মদ ফজলুর রহমান। তিনি বলেন, ভ্রমণ সাহিত্য পাঠককে অনাবিল আনন্দ দেয়। অনেক না দেখাকে দেখায়। এই লেখক তার ভ্রমণের অভিজ্ঞতা পাঠকদের জানিয়ে সেই আনন্দটুকু শেয়ার করেছেন। তুলে এনেছেন, অনেক মানবিক বিষয়।

কবি শামস আল মমীন পাঠ করেন নিজের লেখা কবিতা। তার কাব্যগ্রন্থ `মনোলগ` নিয়ে আলোচনা করেন কবি ফকির ইলিয়াস। তিনি বলেন, শামস আল মমীন চিত্রভাষিক কবি। তার কবিতায় আমরা যে যাপিত চিত্র পাই, তা এই অভিবাসের ক্যানভাসে একটি বিশাল বাংলা। তিনি রাজনৈতিক ধারাভাষ্যকে যেমন ধারণ করেন, তেমনি ধারণ করেন প্রেম ও নিসর্গকে সমান্তরাল ভাবে। ফকির ইলিয়াস বলেন, এটি `মনোলগ` গ্রন্থের দ্বিতীয় সংস্করণ। একটি বইয়ের দুটি সংস্করণ প্রকাশ পাওয়া, আশা জাগানিয়া বিষয়। তিনি বলেন, শামস আল মমীন ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যের শিক্ষক। এই সুবাদে তিনি অন্য ভাষাভাষি কবিতার স্পর্শ পেয়েছেন। যা বাংলা কবিতার চিত্রকল্পকে আরও সমৃদ্ধ করছে তার হাতে। অনুষ্ঠানে ফকির ইলিয়াসের কবিতা আবৃত্তি করেন, মুজিব বিন হক। শামস আল মমীনের কবিতা আবৃ্ত্তি করেন, সাবিনা নীরু ও নাট্যশিল্পী রেখা আহমেদ। স্বরচিত কবিতা পড়েন- স্বপ্ন কুমার ও শাহানা শৈলী।

কবি ফরহাদ মজহারের কবিতা পড়েন- মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর। লেখালেখি বিষয়ে কথা বলেন, এহসান ইমদাদ। প্রবাস জীবন নিয়ে পুঁথি পাঠ করেন, লেখক আবু রায়হান।

প্রায় তিন ঘন্টার এই অনুষ্ঠানে প্রবাসের বিশিষ্টজনেরা উপস্থিত ছিলেন দর্শক-শ্রোতা হিসেবে। উল্লেখ্য,`বহুবচন` আয়োজিত প্রতিটি অনুষ্ঠানই প্রশংশিত হয়েছে সুধীমহলে।

এইচআর/পিআর