ভালোবাসি বলি না কখনো
ভালোবাসি বলি না কখনো
আমি তোমাকে ভালোবাসি কিন্তু বলি না কখনো
ভাবে ভঙ্গিতেও বোঝাই না এ- দুনিয়ার সব শক্তি আর মত্ততায় ভরা
ভালোবাসা নিয়ে আমি তোমাকে মনের গহণ থেকে ডাকি!
তোমার নামের সেই জপমালা তসবির দানার মতো নয়
তা কেবল ঝরায় রক্তের ফোটায় ফোটায়
অন্তরের ঘামে নুনে জড়ানো, তকদিরের মতো অচেনা, অস্বচ্ছ
আর আশার সোনার হরিণের মতো সে কেবল পলায়ণপর-
প্রেম!
নামের কি মহিমা দেখো
বরষার মেঘমালার মতো ধাবমান
শুকুতে দেয়া ধান-পাটের ভিজে যাবার ভয়ে শঙ্কিত হৃদয় নিয়ে
আমি অনবরত গাইতে থাকি তোমার গান!
তুমি কি শুনতে পাও সেই আর্ত-বেদনাজাত প্রেমের জপ!
তোমার চিন্তার ফোঁকড়ে কি এই অধমের কান্নার শব্দ পৌছে না?
আমি জানতেও পারি না তুমি শুনতে পাও কি পাও না,
তবু বিশ্বাসের তরু ধরে ডাকি,
চোখ গেলো পাখির মতো তৃঞ্চার্ত হাকাহাকি চলে আমার রাতদিন জুড়ে,
আকাশ ফুঁড়ে মহাকাশে যাবার পথ খুঁজে খুঁজে আজ আমি ক্লান্ত, তবু
অক্লান্ত আমার ভালোবাসা। শঙ্কিত কিন্তু বিশ্বাসের দৃঢ় আলিঙ্গনে বাঁধা,
দুনিয়াদারির সব আশা আর আকাক্ষার মর্মমূলে আঘাত করে আমি
তোমাকেই চাই!
তোমাকেই চাই!!
কেবল তোমাকেই চাই!!!
তোমারই প্রেমে সমর্পিত আমি এবং নিমগ্ন আত্মা আমার!
০৬/২৩/১৫
পোমোনা, লস এঞ্জলেস, যুক্তরাষ্ট্র
তারপরও আমি জানি
কবিতা কি সহোদর ভাইয়ের মতো সন্দেহপ্রবণ!
আমার কবিতাগুলো ঝগড়াঝাটিতে খুব ব্যস্ত!
খুনসুটির পাশাপাশি নারদের ভূমিকায়ও তারা সিদ্ধ, ঠোকাঠুকি,
কেউনা-মারা স্বভাব যাদের, আর যারা শিরদাঁড়া খাড়া করতে চায়,তাদের
যুক্তি-তর্ক-গপ্পে স্বয়ং ঈশ্বরও বোধহয় স্তম্ভিত,
জলছাপে-ভরা জীবনের
কারুকাজগুলো স্বপ্নের উঠোন থেকে টেনে তুলে আনে তারা,
যেন তা প্রাণহরা কোনো,
ছেলেবেলায় আমি ডুব দিয়ে শালুক তুলেছি ঢের ঢের দিন-
অমলিন সেই দিনগুলোকেও তারা মুছে দিতে চায় ক্ষমতার ডামাডোলে-
সারাদিন এই নিয়ে তাদের কর্মজীবন, মর্মজীবন আর
অন্তরলোক ক্ষতবিক্ষত হয়, রক্তঝরে, টপাটপ
জুঁই থেকে যেমন সুইয়ের ডগার মতো মুক্তো-শিশিরকণা!
খুব ভোরে, সুবে-সাদেকের নিম-ঘুমের অতলে চিৎকার শুনি রোজ,
আর ভাবি এই কি আমার কবিতার পরিবার?
আত্মজ-বন্ধন প্রভু!
আমার আত্মার বনিবনা?
দিন কে দিন খারাপ হচ্ছে পরিস্থিতি, পরিবেশ ঘোলা করছে কেউ কেউ
মার্কিন আর রুশের মতো চিকন বুদ্ধিতে খেলছে কেউ কেউ,
কিন্তু আমি তো জানি সব চিকন বুদ্ধিরই সীমা আছে,আছে ইতি,
মোটা বুদ্ধিরও আছে জেগে উঠার ক্ষমতা, যেমন একদিন-
১৯৭১ সালে আমরা জেগে উঠেছিলাম স্বাধীনতার মন্ত্রে,
ঝাপিয়ে পড়েছিলাম দিগন্তে ছড়িয়ে পড়া রোদ্রালোকের মতো
মুক্তিযুদ্ধে, জিতেছি সেই যুদ্ধে আমরা অনেক প্রাণের বিনিময়ে,
তারপরও আমি জানি
জ্ঞাতিযুদ্ধে নামবে আমার কবিতারা,
নতুন কুরুক্ষেত্রে রক্তের বন্যা বইবে, নাশ করবে ক্ষমতার রাজনীতি,
মানবতার ইতি ঘটবে, বিনাশের নিশান উড়বে সকল দিগন্তের শেষপ্রান্তে
আর সকল প্রাণি ফিরে যাবে লোকালয় আর নগরের ধ্বংসস্তুপ থেকে
প্রকৃতির নির্মল কোল আসল জঙ্গলে!!
এটাই কি নিয়তি আমাদের?
০৮/০৬/১৫
পোমোনা, এল.এ, যুক্তরাষ্ট্র
একটি লাল গোলাপকে বললাম
একটি লাল গোলাপকে বললাম তুমি সুন্দর
সে মুচকি হাসলো যেন শীতের সকালের আলো,
বললো- আমি না, আমার সুঘ্রাণ
জমকালো রাতে ফুটে থাকা পূর্ণিমার চাঁদ,
সে ছড়ায় আলো পৃথিবীর পথে পথে
তার মতো নবনীতা নারী নই আমি কোনো,
বুনো জ্যোৎস্নার ঘ্রাণে যে প্রাণ আছে তার কি দেখা পেয়েছো কখনো?
মনে মনে এই সব এঁকে নাও
তারপর প্রকৃতিতে নিরাক পড়লে পাড়ি দাও জ্যোৎস্নার সাগর,
সেই সাগরের তলপেটে বাস করে এক পরী
তড়িঘড়ি তার কাছে যেয়ো না তুমি,
তার আবছা রূপের তাপে পুড়ে যেতে পারে তোমার নগরী-ত্বক
তুমি এক বক-ধার্মিক,
তবু সাবধান করি তোমাকে সবিনয়ে-
কেন না তুমি মানে মানুষেরা বড্ড বেশি লোভী,
গোলাপ দেখলেই তোমাদের আঙুল নিশপিশ করে
পাপড়ি ছিঁড়ে-খুঁড়ে ঘ্রাণ নিতে
আমার প্রাণ নিতে কখনো কাঁপবে না তোমার হাত!
ফিতে কেটে উদ্বোধন করা সভাগুলোতে আমাদের প্রাণ যায় প্রতিদিন,
এর কোনো মানে নেই, আবাল-দের সভা আর
কৈ-টোরার মধ্যে কোনো ভেদ নেই-
ভেদাভেদি রাজনীতিতে খুব নারকীয় যজ্ঞে চলে।
সেখানে ঘ্রাণ ও সুঘ্রাণ বলে কিছু নেই।
গতরের গন্ধে তারা
মাতোয়ারা
ফাঁড়া কেটে গেলে সামাজিক মানুষের মন যেমন স্বস্তির শ্বাস নেয়
তুমি সেই মতো আমাকে বলেছো সুন্দর।
শোনো মনোহর!!!
আমাকে ছিঁড়ে-খুঁড়ে খাবার জন্য আর কতো মিথ্যা
আর কতো ধোকাবাজি!!
০৪/১১/০১৫
পোমোনা, এল.এ, যুক্তরাষ্ট্র
এইচআর/আরআইপি