তানজীনা নূর-ই সিদ্দিকীর তিনটি কবিতা
মানুষ তারপর
মানুষ তারপর নিজের দিকে তাকায়
নিজেকে নিয়ে ভাবে, নিজের জন্য ভাবে।
ভোর এসে গেলে হঠাৎ ভেঙে যাওয়া ঘুমে
কোন এক জড়তা মিশে থাকে।
ভুলে যেতে থাকে গন্ধের নাম।
গন্ধের নাম কি মনে রাখা যায়?
কারো শরীরের, কারো প্রস্থানের, কারো বেদনার?
এক ভোর হাতে নিয়ে আকাশ রঙ বদলায়।
নীরব রাস্তায় এরপর একটা দুটো করে আরো মানুষেরা
রিক্সার টুংটাং, ধুলারা তখনো পরিত্যক্ত নয়।
তখনো চোখের পরিচয়ে কেউ কেউ হাসে।
কেন হাসে? কেন দিন হেরে যায়?
কেন মানুষ আর কাউকে চেনে না?
সুবোধ কেন পালায়?
একটা বীভৎস পরাজিত দিনে
মানুষ অতঃপর নিজেকে বাঁচাতে নাভিশ্বাস।
কোথাও সময় থাকে না। আলো থাকে না।
নিজস্ব যুদ্ধে হারতে থাকা
জীবন্ত আত্মারা সব-
এরকম করে ডুবে যায়
কেন ডোবে?
আশ্চর্য পাপ
ব্যথা, নৈঃশব্দের শিশু
স্মৃতি ধ্যান, বিনম্র ঈশ্বরে স্থির-
অবশ্যম্ভাবী।
অমোঘ আনন্দে ঠাসা আশ্চর্য পাপ।
এতে নিমগ্ন হও, ডুবে যাও।
সমস্ত শরীরে নামাও শুভ্রবসন।
আমাকে ফেরাও বিষণ্ন ঢেউয়ের
বিরামহীন বিশ্রাম থেকে।
ওষ্ঠের তাপ মাটিতে লুটাক-
ধূসর ক্ষীণ মেঘ, শীতকাঁথা।
আর, অমন করে হেসো না।
মনে রেখো, হেসো না।
হাসলেই আনন্দ অশ্রু
হাসলেই ভাঁজ খোলে-
কাপড়ের আড়মোরা;
কেবলই ভাবতে থাকি,
পৃথিবী সুন্দর!
অথচ দু'চারটে লাশ রোজ ভাসে
অথচ ফেরার পথে অনিশ্চয়তায়
পকেট ফাঁকা।
অথচ মাসের মধ্যভাগে শূন্য হয়ে যায়
অনেকের বুক।
ভারি নিঃশ্বাসে বৃত্তবন্দী বাতাস।
খোলসের ঘরে দুমড়ে মুচড়ে যায়
খবরের চাকা।
অন্ধ তোমার গায়
আমাকে দেখো না তুমি?
দেখি না তোমাকে আমিও!
সত্যি বলছি তাই
ঘোর জ্বর আসে।
ভুলতে ভুলতে নামধাম সব
হাত রাখিনা কপালে ভুলেও!
কোত্থেকে যে কোথায় পালায়
স্মৃতির শহর!
ধূসর বিকেল; দিন মরে যায়।
অন্ধ তোমার চোখের দ্যুতি মনে পরে
অন্ধ তোমার গায় জড়িয়ে উজ্জ্বল রঙ
অন্ধ তোমার সাঁওতালি গায়
ছুটছে কিছু প্রজাপতি
ভাসছে হাওয়া ব্যস্ত দারুণ
আমার হাতে, তোমার হাতে!
এবার আবার থমকে দাঁড়াই
মিষ্টি মদির আসছে কিছু ধেয়ে
আবার আমি লাজুক হবো
দেখব না আর চেয়ে।
এইচআর