কাঁদো নাফ কাঁদো
শত শ্বাপদের আপদে ভরা
চৌদিকে গহীন বন-বাদার
নেই কোন এমন আদম সন্তান
ও জমিনে নির্ভয়ে রাখে পা তার
সুদূর প্রাসাদের শান-শৌকত ঝলমল
আর সিপাহীদের সদম্ভ কোলাহল
কিংবা কোন আলো- পৌঁছেনি যেথা
সেই নিস্তব্ধ ভূভাগ-নিবিড় বনাঞ্চল
কেবল নীরবে বয়ে যায় তারে ছুঁয়ে যায়
দূরন্ত নাফ নদী উত্তাল সাগর পানে
নোঙ্গর ফেলেছিল তারই কোনখানে
হাজার সাল আগে আরব-বণিক বহর
থামিয়ে দিয়ে বহুদূরের সফর
আজানের ধ্বনিতে তাদের সুমধুর
টুটে যায় তাবৎ আঁধার।
সহস্র বছরের শ্রমে ঘামে
আবাদী হলো সেই বনভূমি
পতিত জমিন দুর্গম পাহাড় জঙ্গল
যত, সবুজ শস্যক্ষেত্র থেকে
ধ্বনি উঠে ‘আল্লাহু আকবর’।
দিকে দিকে গড়ে ওঠে জনপদ-
মসজিদ মক্তব খানকাহ্ বেশুমার
জমজমাট হয়ে ওঠে আরাকান শাহী দরবার
কত কবি লেখক সাধক পীর অপরাজেয় বীর-
ভিড় করে হাজারো রোহিঙ্গা সন্তান
দৌলত কাজী আলাওল মহাপ্রাণ
জ্বালালে নতুন প্রদীপ- বাংলায় ইসলামী দাস্তান
প্রাণ পায় রোহিঙ্গাদের এ প্রিয়ভূমি
এই প্রাচীন প্রশস্ত জমিন
মুখরিত থাকে আনন্দ উল্লাসে
কাটে সুখময় শত প্রজন্ম কাল
তার দীপ্ত তমদ্দুনে আলোর সন্ধান পায়
যত বর্বর কমিন।
সহসা দানব এক দূর্মতি দূর্মর-
জেগে উঠে সেই ভূই ফুঁড়ে
কদর্য পদভারে তার
কেঁপে ওঠে শান্ত রোহিঙ্গা বসতি
দু’চোখের আগুনে তার হয় ছারখার
কত শত সুখী ঘর সংসার
জ্বলে পুড়ে নিঃশেষ নিশ্চিহ্ন-
শত মসজিদ মকতব দরবেশের আস্তানা
শত কুমারী কন্যা লজ্জাবতি লতার উপমা
আর অগণন সাধ্বী ললনা-
হিংস্র সন্তদের লালসার ছোবলে হলো নীল
রক্তাক্ত পুত্র কাঁধে নিয়ে ছোটে পিতা বেচাইন দীল
বহু পথ ঘাট মাঠ মাড়িয়ে- সীমান্ত পানে
আর কত মমতাময়ী জননী, আহা
সন্তানের লাশ পিছনে ফেলে
দেয় ঝাঁপ অথৈ নাফের ঘোলা জলে
বাঁচাতে মান ইজ্জত সম্ভ্রম
হে, নির্বাক নাফ!
মহাকালের নীরব সাক্ষী-
কাঁদো একবার, কাঁদো তুমি
শতাব্দীর পর শতাব্দী বয়ে যাও
আরাকানের কোমল মাটিরে চুমি
গেরুয়াধারী সন্তরা ঝাঁপিয়ে পড়ে আক্রোশে
নিরীহ রোহিঙ্গার উষ্ণ রক্ত মিশছে তোমার বুকে
ভেসে গেছে কত মাসুম শিশুর লাশ কে জানে
তোমার প্রবল স্রোতের টানে।
হায়! দুর্ভাগা রোহিঙ্গা মুসলমান
বাড়ায়নি ভ্রাতৃত্বের হাত মুসলিম জাহান
নিজ দেশে পরবাসী তুমি আজ-
বার বার খান খান হয়েছে স্বপ্ন তোমার
শান্তির নামাবলি পরা বর্বরদের হাতে-
ওরা এখন বিবেকহীন উন্মত্ত সন্ত্রাসী
বেপরোয়া হন্তারক দঙ্গল-
না জানি গৌতম পাশ ফিরে শুয়েছে লজ্জায়
প্রাচীন স্তূপের নিচে-
দেখে শুনে তাঁর ভক্তদের
নিঠুর নিদারণ কাণ্ডকীর্তি
গভীর বেদনায়।
এইচআর/পিআর