স্বপ্ন এখন লাশ ঘরে
কান্না করিস না মৌরি। চল আমরা হাসপাতালে যাই।
মনটা ভালো নেই। তবুও যেতে হবে। কারণ ওর পাশে তো কেউ নেই। এই শহরে আমরাই ওর আপনজন।
হ্যাঁ। হাসপাতালে তো যেতেই হবে। গভীর রাতে হাসপাতালে রেখে এসেছি। এখন পর্যন্ত খবর নিতে পারিনি। একটু পরে শাহনাজ আসার কথা। ও আসলেই কলেজের খবরটা শুনে বের হব।
আচ্ছা কেয়া তুই বল ভালোবাসা কি পাপ?
যে ভালোবাসার জন্য লিজাকে এমন করে খেসারত দিতে হচ্ছে।
লিজার বাড়ি কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুরে। গরিব ঘরের কন্যা সে। তিন ভাইবোনের মধ্যে লিজা সবার বড়। ঢাকা শহরে রিকশা চালিয়ে সংসার চালান লিজার বাবা রমজান আলী। নিজ উপজেলা কিংবা জেলায় রিকশা চালালে লিজাকে অনেকের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হতে হয়। সহপাঠীরা লিজাকে রিকশাচালকের মেয়ে বলে হেয় করে। তাই লিজার অনুরোধে দূর শহরে রিকশা চালান রমজান।
ছোটবেলা থেকে মেধাবী ছিল লিজা। জিপিএ ৫ পেয়ে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করার কারণে উপজেলায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লিজা নামটি বেশ আলোচিত। উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সংগঠন থেকে লিজা পায় কৃতী শিক্ষার্থী সংবর্ধনা। তাই রমজান আলী রিকশার হ্যান্ডেলে হাত আর প্যাটেলে পা রেখে স্বপ্ন দেখেন মেয়েকে নিয়ে। বড় মেয়ে লিজা একদিন অনেক বড় হবে। পড়ালেখা শেষ করে চাকরি করবে। দেশ সেবার পাশাপাশি ছোট ভাইবোনদেরও প্রতিষ্ঠিত করবে। একদিন হয়তো আর রিকশা চালাতে হবে না তাকে। লিজা চাকরি করলে অফিস থেকে গাড়ি পাবে। সেই গাড়ি নিয়ে গ্রামে আসবে। সবাই বলবে দেখ রমজানের মেয়ে গাড়ি নিয়ে এসেছে। গর্বে ভরে যাবে বুক। আর আমার মেয়ে লিজা তা পারবে। কেননা এ পর্যন্ত সব পরীক্ষায় ফার্স্ট হয়েছে সে।
এইচএসসি পাস করার পর উচ্চশিক্ষার জন্য লিজা ভর্তি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। প্রকৌশলী বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধা তালিকায় স্থান পায় সে। কিন্তু ভর্তি হলেই তো আর পাসের সনদ হাতে চলে আসবে না। পড়ালেখা চালিয়ে যেতে হবে। আর পড়ালেখা চালানোর এত খরচ জোগানো সম্ভব নয় তার রিকশাচালক বাবার। তাই ওই আকাশ ছোঁয়া স্বপ্নকে কবর দিয়ে রংপুরে সরকারি বেগম রোকেয়া কলেজে ইংরেজিতে পড়ার সুযোগ পায়।
নিয়মিত ক্লাস শুরু করে লিজা। বেগম রোকেয়া সরকারি কলেজে দুটি ছাত্রী হোস্টেল। ছাত্রীর তুলনায় কলেজ হোস্টেলে সিট কম। তাই হোস্টেলের সিট পেতে লবিং তদবির করতে হয়। কিন্তু এ ধরনের সুপারিশ করার কেউ ছিল না লিজার। তাই প্রথম দিকে কলেজের পাশে মালিকানা ছাত্রী নিবাসে সিট নিতে হয় তাকে। কষ্টের জীবনে নেমে আসে আরও কষ্ট। পড়ালেখার খরচ চালাতে চালাতে হিমশিত খান রিকশাচালক রমজান।
লিজার মা শারীরিকভাবে খুবই অসুস্থ। স্থানীয় ডাক্তার বলেছেন, এভাবে ওষুধ খেলে হবে না। শহরে নিতে হবে। ভালো ডাক্তার দেখাতে হবে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে। তার লিভারের সমস্যা আছে। কিন্তু রমজান আলীর ইচ্ছা থাকলেও উপায় নেই। কারণ এত টাকা তার কাছে নেই। চিকিৎসা করাবে না মেয়েকে পড়ার খরচ দেবে।
মায়ের অসুস্থতার খবর পেয়ে গ্রামে ছুটে আসে লিজা। অসুস্থ মাকে জড়িয়ে কান্না করে। মেয়ের চোখের পানি মুছে দিতে দিতে বলে, এভাবে কাদিস না। আমার কিছু হবে না। তুই পড়ালেখা শেষ করে চাকরি করবি। আর তোর চাকরির টাকা দিয়ে আমাকে ভাল ডাক্তার দেখাবি। আমি সুস্থ হয়ে যাব। পারবি না তুই। আমি জানি আমার মেয়ে পারবে। মায়ের মুখের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে লিজা। কয়েকদিন মায়ের সেবা করে আবার ক্যাম্পাসে চলে আসে সে।
এবার মাথায় ঢোকে পড়ালেখার পাশাপাশি আয় করার চিন্তা। রুমমেট মৌরির কাছে জানতে চায় কীভাবে আয় করা যায়। অন্তত নিজের পড়ালেখার খরচ হলেই হবে। অনেক ভেবে মৌরি বলে, উপায় একটা আছে।
কি উপায়?
প্রাইভেট পড়াতে হবে। কিন্তু....
প্রাইভেট পড়াতে আমি পারব। কিন্তু কি?
কিন্তুটা হচ্ছে, প্রাইভেট পাওয়াটা কঠিন হবে। তবুও দেখি আমার একটা বন্ধু আছে। তাকে বলে দেখি কোন ব্যবস্থা করা যায় কি না?
আমার বন্ধু ইমরান। কারমাইকেলে মাস্টার্সে পড়ে। রংপুরের স্থানীয় বাসিন্দা। ওদের বাড়ি গাড়ি সবই আছে। এলাকার প্রভাবশালীও বটে। পরদিন তার সঙ্গে দেখা করে প্রাইভেট এর কথা জানালো। ইমরানও প্রস্তাবটা লুফে নিয়ে প্রাইভেট খুঁজতে শুরু করল। প্রাইভেট এর আপডেট প্রতিদিন ফোনে জানায় ইমরান। কয়েকদিন পর একটা প্রাইভেট পড়ার সুযোগ পায় লিজা। ইংরেজি ছাত্রী হওয়ায় প্রাইভেট পেতে বেশি সময় লাগেনি। সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী হৃদি। পুলিশ লাইনে পড়ে। মেয়েটির বাবা পুলিশে চাকরি করেন। মেয়েটিকে তার বাসায় গিয়ে পড়াতে হয় ।
প্রাইভেট খুঁজে দেয়ার কারণে প্রায় প্রতিদিন ফোনে ইমরানের সাথে কথা হয় লিজার। কথা বলতে বলতে ভালো বন্ধুত্ব হয় দুজনের মধ্যে। লিজাও কৃতজ্ঞতার জায়গা থেকে এ সর্ম্পকটা ধরে রাখে।
প্রাইভেট থেকে নিয়মিত বেতন পাওয়ায় পড়ালেখা চালিয়ে যায় লিজা। সময় গুছিয়ে নিয়ে প্রতিদিন দুটো প্রাইভেট পড়ায় সে। নিজের খরচ চালানোর পরও ছোট ভাই বোনের জন্য টাকা পাঠায় পড়ালেখার জন্য।
সময়ের ব্যস্ততার মাঝে ইমরান থেমে নেই। ফোনে কথা বলার ফাঁদে ফেলে আস্তে আস্তে দেখা করা শুরু করে। একটা সময়ে রোজ দিনেই দেখা হয় তাদের। প্রায় বছর খানিক পাড়ি দেয়ার পর লিজার মনে ভিতরে একটা আস্থার জায়গা করে নেয় ইমরান। ভালো লাগা থেকে শুরু হয় ভালোবাসা।
লিজা অনেকটা ভেবেই এ পথের পথিক হয়েছে। ইমরান ভালো ছেলে শহরের স্থানীয়। সে পাশে থাকলে অনেক সমস্যা থেকে রেহাই পাবে সে। পথে ঘাটে কত ছেলে প্রতিদিন উৎপাত করে। ইমরান থাকলে রাস্তায় ছেলেরা আর উৎপাত করার সাহস পায় না।
বন্ধু মৌরি ওদের দুজনের প্রেমের সম্পর্ক জেনেছে। মৌরিও বাধা দেয়নি। কারণ লিজার মত একটি মেয়ে যদি ভালো ছেলে খুঁজে পায় তাতে সমস্যা কী? উল্টো লিজার উপকার হবে। লেখাপড়ায় আর কোন বেগ পেতে হবে না। জীবনে স্টেও ঘানি অনেক টেনেছে। এভাবে যদি সুখের সন্ধান পায় তবুও ভালো।
ইমরান প্রতিদিন লিজাকে নিয়ে ঘুরতে যায়। কোন দিন সুরভী উদ্যান, কোনদিন চিকলীর বিল, শিরিন পার্ক, খেয়া পার্ক, চিড়িয়াখানা, তাজহাট জমিদার বাড়ী ও ভিন্নজগৎ। রংপুরে থাকলেও এ জায়গাগুলো দেখা হয়নি লিজার। হাতে হাত রেখে পথ চলতে চলতে কেটে যায় মাস বছর।
জীবনের ঘোড়াঘুড়ি শেষ হতে না হতেই সরকারি চাকরি হয় ইমরানের। খুশিতে আত্মহারা লিজা। জীবনে যাকে নিয়ে ঘর বাঁধবে, সে এখন সরকারি চাকুরে। কিন্তু এ হাসি দীর্ঘ হলো না লিজার।
চাকরির ক মাস যেতে না যেতেই পাল্টে যেতে থাকে ইমরান। আগের মত খোঁজ রাখে না লিজার। দেখা করে না আগের মত । নেয় না ফোনে কোন খবর। ব্যস্ততার অযুহাতে আড়াল করতে থাকে নিজেকে। কোন কিছুতেই হিসাবে মেলে না লিজার। অস্থির হয়ে ওঠে সে। কারণ বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে দুজনের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক হয়েছে কয়েক মাস ধরে। অনার্স শেষ বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা দিয়েছে লিজা। পরীক্ষার ফল প্রকাশ পেলেই বিয়ে পিঁড়িতে বসবে তারা। কিন্তু ইমরানের এমন আচরণ মোটেও ভালো লাগছে না।
কি করবে ভেবে পাচ্ছে না লিজা।
বান্ধবী মৌরির কাছে খুলে বলে সব কথা। কিভাবে কবে কখন তাদের শারীরিক সম্পর্কও হয়েছিল। এখন সে কি করবে। কোথায় যাবে। কার কাছে গিয়ে দাঁড়াবে।
মৌরি আশ্বস্ত করে বলে আপাতত ভেঙে পরিস না। অপেক্ষা কর। তুই বিসিএস কোচিং চালিয়ে যা। কিছুদিন পর সব ঠিক হয়ে যেতে পারে। প্রেম পিরিতির মধ্যে এসব মান অভিমান থাকবে। প্রায় রাতে ফোনে ঝগড়া হয় দুজনের মধ্যে। দুজনের শারীরিক সম্পর্কের সময় মোবাইলে নগ্ন ছবি তুলেছিল ইমরান। সেই ছবি ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়ারও হুমকি দেয় সে। এসব হুমকি আমলে নেয় না লিজা। তবুও ভাঙা মন অস্থির জীবন কাটতে থাকে তার।
সেদিন শুক্রবার। সকাল থেকে কাপড় ধুইয়েছন লিজা। মনের ভিতর কাল বৈশাখী ঝড় বয়ে যাওয়ার চিত্র তার শরীরে ফুটে ওঠেছে। হঠাৎ রুমে দৌড়ে আসে মৌরি। লিজাকে ধমক দিয়ে মৌরি বলে, ছেলে মানুষ কথা বললেই তার প্রেমে পড়তে হয় না। কাছে ডাকলে বিছানায় যাওয়া যায় না। ছেলেরা শুধু ভোগ করেই ক্ষান্ত হন না। তারা আরো অনেককিছু করতে পারে।
লিজা জানতে চায় কেন?
কী হয়েছে?
কিছু হওয়ার তো বাকি নেই। সর্বনাশ হয়ে গেছে রে লিজা। এই বলে হাতে থাকা মোবাইলটা সামনে ধরে। লিজা মোবাইলের মনিটরেও তাকিয়ে নিজেকে বিশ্বাস করতে পারছে না। এটা কি করে সম্ভব। ইমরান এ কাজ কেমনে করল।
লিজা আর তার নগ্ন ছবিগুলো ফেসবুকে দিয়েছে। লিজার ফেসবুক বন্ধুদের এ ছবি ট্যাগ ও করেছে। লিজার বন্ধু তালিকায় তার স্কুল কলেজের শিক্ষকরাও আছেন।
কী করবে লিজা? চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে পাথর হয়ে গেছে সে। রিকশা চালক বাবা অসুস্থ মা, ছোট ভাই বোনের স্বপ্ন। কী করবে লিজা...................
ম্যাসের মধ্যে সকলের কাছ থেকে আস্তে আস্তে আলাদা হয় সে। রুমে একাই বসে থাকে। কোন প্রাইভেট সে পড়েও না আবার পড়াতেও যায় না। স্বাভাবিক জীবন থেকে সরে আসে লিজা। নিজেকে আপোষ না করে গভীর রাতে আত্মহত্যার দিকে ধাবিত হয় সে।
অস্পষ্ট শব্দে রাতে ঘুম ভেঙে যায় মৌরির। মনটা তার মোচড় দিয়ে ওঠে। তাই রুমের সুইচ অন করে দেয়। বৈদ্যুতিক আলোয় নিজের রুমটা ভালো করে দেখে নেয়। কিন্তু না তেমন কোন আলামত চোখে পড়লো না। তাই আবার ঘুমানোর প্রস্তুতি নিয়ে বিছানার দিকে যায়। তার আগে বাথরুমে যেতে ধরে।
কিন্তু, গোঙরানী শব্দ কানে ভেসে আসে। বাথরুম না গিয়ে আস্তে আস্তে করে লিজার রুমের দিকে যায় মৌরি। যতই এগিয়ে যায় ততই গোঙরানী শব্দটা স্পস্ট হয়। লাথি মারতেই খুলে যায় দরজা । ভিতরে ঢুকেই সুইচ অন করতেই দেখে ফ্যানের সাথে ঝুলে আছে লিজা।
চিৎকার দিতেই আশপাশে থেকে সকলেই ছুটে আসে। দ্রুত ফ্যান থেকে খুলে নিয়ে যায় হাসপাতালে। ডাক্তার দেখে বললেন মারা যায়নি। তবে তার অবস্থাও ভাল নয়। রাতে তো আর তেমন কিছু করা যাচ্ছে না। সকালে টেস্টগুলো করতে হবে। লিজাকে রেখে সবাই চলে আসে।
পরদিন সকালে মৌরি চোখের পানি মুচছে আর আর কেয়া বলছে, মনটা ভাল লাগছে না। এমন সময় রুমে আসে শাহনাজ। সে জানায় অনার্স ফাইনালের রেজাল্ট হবে আজ। মৌরি আরও কেদে ওঠে। লিজার আজ রেজাল্ট হবে অথচ কোন বিপদে সে এখন জীবন মৃত্যুর মাঝে। চল আমরা কলেজে যাই। কলেজে রেজাল্ট নিয়ে হাসপাতালে যাব।
কিছুক্ষণ পর টেবিলের ড্রয়ার থেকে লিজার রোল নম্বর বের করে নেয় মৌরি। কেয়াকে সঙ্গে নিয়ে কলেজে যায়। কলেজের নোটিশ বোর্ডে নিজের রোল খুঁজে পায় কেয়া ও মৌরি। তারা দু জনে দ্বিতীয় বিভাগে পাস করেছে। পাসের আনন্দে মুখে হাসি আসলেও মনের হাসি হাসতে পারছে না। এবার লিজার রোল মেলাতে গিয়ে দেখে ফাস্ট ক্লাস পেয়েছে লিজা। খুবই আনন্দিত দু জন। লিজার ভালো রেজাল্টে কলেজের শিক্ষকরাও বেশ আনন্দ বোধ করছে। কিন্তু প্রকাশ করতে পারছে না। কয়েকজন তো বলেই দিলেন এত ভালো রেজাল্ট অথচ মেয়েটা কী ভুল পথে পা দিয়েছে। নষ্ট হয়ে গেছে মেয়েটা। এমন মেয়েকে নিয়ে কোন বাবা মাই স্বপ্ন দেখবে না।
এসব কথা শুনেও না শোনার ভান করে মৌরি ও কেয়া কলেজ গেটে এলেন। চল কেয়া আমরা হাসপাতালে যাই। ওর পাসের খবরটা দেই। এত বড় খবর শোনার পর হয়তো কিছুটা হলেও শান্তি পাবে। রিকশায় বসে দুজনেই রওয়ানা দেন হাসপাতালে। রিকশায় ওটার পর দুজনের মধ্যে কোন কথা নেই। দুজনেই নীরব। দুজনেই ভাবছেন লিজার কথা। কত সাদা সিদে মেয়েটা । অথচ কোন ঝড়ে সবকিছু তছনছ হয়ে গেল। যে লিজাকে নিয়ে বাবা-মা, ভাই, বোন, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবী, শিক্ষক শিক্ষিকা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গর্ববোধ করবে। তারা সবাই আজ ঘৃণাভরে ধিক্কার দিচ্ছে। এভাবে ভাবতে ভাবতে হাসপাতালের গেটে এসে দাঁড়ালো রিকশা। দুজনেই ওয়ার্ডে যান। নির্ধারিত বেডে গিয়ে দেখেন অন্য রোগী শুয়ে আছে। পাশে তার স্বজন। রোগীর শরীরে স্যালাইন চলছে। পাশে থাকা স্বজনের কাছে মৌরি জানতে চায়, এই বেডে যে রোগী ছিল সে কোথায়?
কোন জবাব দিতে পারেনি স্বজনরা। দুজনেই হেঁটে গেলেন নার্স রুমে। ডিউটিরত নার্স চেয়ারে নেই। অপেক্ষা করলেন দুজন। কিছুক্ষণ পর ডিউটিরত নার্স চেয়ারে বসলেন।
মৌরি জানতে চাইলেন, ওই বেডের রোগী লিজা এখন কোথায়। বেডের নম্বর আর নাম শুনে থমকে গেলেন নার্স। জানতে চাইলেন লিজা আপনাদের কি হন?
আমরা ওর বান্ধবী।
ওর বাবা-মা কেউ আসেনি।
না। তাদেরকে জানানো হয়নি।
কেন?
লিজা একটু সুস্থ হলে তারপর ওদের পরিবারকে জানাবো। তাছাড়া ওর মা অনেক বড় রোগে আক্রান্ত। এ খবর জানলে আরো সমস্যা হবে। শুনেছি ওর বাবা রিকশাচালান ঢাকায়।
কিন্তু লিজা তো আর সুস্থ হবে না।
চমকে যায় মৌরি ও কেয়া। দুজন দুজনের দিকে তাকায়।
মৌরি নিজেকে আর সামলে রাখতে না পেয়ে নার্সকে ধমক দিয়ে বলেন, এসব আজে বাজে কথা বলে সময় নষ্ট করবেন না। লিজার জন্য অনেক বড় সুখবর নিয়ে এসেছি। ওকে তাড়াতাড়ি জানাতে হবে। বলুন লিজা কোথায়। মাথা নিচু করে নার্স বললেন, ভোরবেলায় লিজা শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছে। লিজা এখন লাশ ঘরে....
এইচআর/জেআইএম