জোবায়ের মিলনের পাঁচটি কবিতা
লবণাক্ত ছাপাখানা
এই যে ভোরে নেমেছি রাস্তায়
এই যে হেঁটে যাচ্ছি প্রচণ্ড গতিতে...
আসলে কোথায় যাচ্ছি?
পথের দু’ধারে সোডিয়াম লাইট, ল্যাম্পপোস্ট,
পাতাহীন গাছ, ক্ষয়িষ্ণু দেয়াল, ছুটতে থাকা যানবাহন,
পরিচ্ছন্ন কর্মী জানতে চায়-
এই নিরন্তর দৌড়ে চলার অর্থ কী?
বোবা সত্তা মৃদু আলো ভেদ করে পেরিয়ে যায়
এক স্টেশন থেকে আরেক স্টেশনে, আর
ছাপাখানার রোলারের মতন চলতে থাকে, চলতে থাকে
চলতেই থাকে দ্বিধান্বিত দু’টি পা...
একসময়, মুদ্রিত পৃষ্ঠা ও আমার মধ্যে কোন ফারাক দেখি না
শুধু বুঝি, আমি যেন এক লবণাক্ত ছাপাখানা।
***
ছায়া
ভিড়ের মধ্যে ধাবমান-
এই যে কালো কালো ছায়া
এই ছায়াগুলো কীসের, কার?
ছায়া শাশ্বত। ছায়া কালো;
মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠের সত্য স্বরূপ।
কিছু ছায়ার পিঠ নেই, বুক নেই
দু’পিঠেই শাণিত অন্ধকার, কুৎসিত দাঁত!
এই ছায়াগুলোই কালো ঘোড়ার মতন ভাঙছে সফেদ চাঁদ
গর্ভবতী জ্যোৎস্না, সরল বিশ্বাসের মায়াবি ওলান!
ভিড়ের ভেতরে ধাবমান...
এই ছায়াগুলো কার?
কীসের?
***
ইদানিং বিভ্রাট
তোমার সাথে কথা বলতে গিয়ে ইদানিং
কোনো বিরাম চিহ্ন পড়ে না,
যেমন কবিতা পড়তে গিয়ে হয়।
কবিতা পড়তে গিয়েও ইদানিং
কোনো বিরাম চিহ্ন পড়ে না,
যেমন তোমার সাথে কথা বলতে গিয়ে হয়।
এই বিভ্রাট ছিল না আগে; অল্প ক’দিন হলো- এমন।
কোনটি ‘কবিতা’ আর কোনটি ‘তুমি’
এই দুইয়ে খুব গোলযোগ গেলে যায়...
কবিতাকে ‘তুমি’ ভেবে চুমু খেলে
কবিতা তেমন কিছু দুঃখ নেয় না; বলেছে।
তোমাকে ‘কবিতা’ ভেবে পাঠ করলে
কিছু বেদনা জাগে কি না; বলবে?
***
মৌন ক্রন্দন ও বৃষ্টিঘন দিন
আমি বারান্দায়
তুমি উঠোনে
আমি চেয়ে আছি
তুমি নৃত্যরত...
আমি পরাধীন- শেকল অথবা মনের বেড়ি;
তুমি স্বাধীন- তা-ধিন-না-ধিন।
তুমি যখন তখন
আমি সূচিপত্র
তুমি সুস্থ সবল
আমি ক্র্যাচে ধরা...
এঘর ওঘর।
***
কিছু কি শুনছো
শুনছো?
কান পাতো বাসের হুইসেলে
কান পাতো রিকশার টুংটাংয়ে
কান পাতো বিকট অহংকারে ছুটে যাওয়া ট্রাকের গর্জনে...
শুনছো?
কিছু কি শুনছো?
কান পাতো রেলক্রসিং পার হয়ে যাওয়া ছেলেটির কণ্ঠস্বরে
মুঠোফোনে মেয়েটির ফিসফাস কথায়,
মধ্যবয়সী পুরুষের দৃষ্টিতে,
সদ্যরমণী হওয়া নারীর বাহু বালায়...
শুনছো?
কিছু কি শুনছো?
কান পাতো নিস্তব্ধ রাতের হৃদয়-স্পন্দনে
দিনের নখ-আঙুল, কব্জির গরল রেখায়
কান পাতো প্রবাহিত শব্দের পকেট ভাঁজে
ধীর লয়ে চলাচল পায়ের ছায়ায়;
প্রতিদিন গত হওয়া তারিখ পাতায়...
শুনছো?
কিছু কি শুনছো?
এসইউ/আরআইপি