ফকির ইলিয়াস এর কবিতা
বিনয়ী কোদাল হাতে
ভাবনাগুলো লেখকের নিজস্ব অথবা মতামতের জন্য সম্পাদক
দায়ী নহেন, এমন কিছু নিয়মাবলি মেনে শুরু হয় দুপুরের দ্বৈত
জ্যোতিকরণ। বিপণন প্রভাতের কাছে বন্ধক রেখে মানুষের মেধা
সূর্য উঁকি দেয় এই ভূপালে, কেউ কুড়োয় রোদ- কেউ কুড়োয় কষ্ট
আর কেউ ঘামলব্ধ সংবিধানে হামাগুড়ি দিতে দিতে ভিজায় গামছা।
কারো মতের জন্য কাউকে দায়ী থাকতেই হয়। কারো চেতনার
বিকাশ ঘটাতে কাউকে মেনে নিতে হয় গারদের লৌহজীবন।
গাণ্ডিব হাতে উষর মরুর দিকে কিংবা কোদাল হাতে চৈত্রের
খরার দিকে তাকাতে তাকাতে , বলে দিতে হয়
আমি ভেঙেছি আল, তুমি পারো তো ভেঙে দিও সব আর্যবলয়।
প্রকাশিত ভবিষ্যতের দিকে
কারারক্ষীর ছায়া হয়ে দাঁড়িয়ে আছে দরোজা। আমরা
অতিক্রম করবো বলে ভেদ করছি সবটুকু সংবেদ, আর
পালিয়ে বেড়ানো রাতের পালকে মুখ গুঁজে অনেকটা
পার করে দিতে চাইছি ঘোর মৈথুনের কংক্রিট কালাকাল।
জমাট ভোরগুলো তাকিয়ে আছে প্রকাশিত ভবিষ্যতের দিকে
মিথাশ্রয়ী পায়ের নুপুর বেজেই চলেছে। মধ্যরাতের পর বাঈজী
তারাদের নাচ থেমে গেলে মাটিও যেমন নিস্তেজ হয়ে পড়ে।
আবার জড়িয়ে ধরার উষ্ণতা খুঁজে কে যেনো হারায়, কে যেনো
জাগে । মাথার উপর ঝুলে থাকে কিছু দণ্ডাদেশ , কিছু পদছাপ।
সাজানো জলের ছায়া
কিনারার কদর জানে নদী। ভাঙার শব্দ পেলেই ছাড়ে
নি:শ্বাস আর তাকায় নিজের উচ্চতার দিকে।ঢেউ এলে
যে গভীর শ্রাবণের নিদ্রা আমাদের দুপুর ঘিরে রাখে,ঠিক
তেমনি কোনো ছায়াকে সাজায় নদী, বিভাসূত্রের তন্দ্রায়।
জীবন তন্দ্রা ভালোবাসে।
আর ঋতু ভালোবাসে একটু উষ্ণতা
নদীতে বটপাতা ভাসিয়ে কার মুখ দ্যাখে ঋতু
কার অনামিকা বাজায় দোতারার গোধূলিয়া সুর !
পরিণয়ের নেপথ্য কাঠি
কেউ হাত বুলিয়ে দেয়। মাথায় ,মননে চাঁদের বিন্দু জমে
নামে মেঘ। ভারী বর্ষণ হবে রাতের নদীতে। জলে জল মিশে
একাকার হয়ে যাবে প্রাণের পরত। শরত এলে কাশফুলে ভরে
যাবে বন, এমন গুন্জন নিয়ে ভোর এসে ডাকে কাছে , এসো
মানব-মানবী । ভাবি , এই হাত কার ? কোন জনম তার গর্বের
আকাশে প্রথম ছড়িয়েছিল রঙের নিদ্রা। ঢুলুঢলু চোখে সমুদ্র
সান্নিধ্যে গিয়ে বসেছিল একজোড়া দোয়েল। তবে কি তাদের
হাতেও ছিল পরিণয়ের নেপথ্য কাঠি। এতোটুকু নতুন নৃত্যমেঘ !
সার্বজনীন সন্ধ্যার ঘ্রাণ
বলয় নিয়ে বাড়ন্ত আকাশের ও একটা গৌরব থাকে। দিন
কিংবা রাতের শরীরে নির্মাণ করে যাবার প্রহর এবং প্রত্যয়
ধারন করে শিল্পীর চোখ তাকায় জ্বলন্ত ইচ্ছেগুলোর দিকে।
কে পোড়ায় এই প্রতিশ্রুতির নন্দন কানন! কার পদছায়া
জমা থাকে মনের শোকেসে! কোন নিখিলের প্রথম অভিজাত
অভিষেকে বার বার প্রবাহিত হয় সারিবদ্ধ মানুষের বিমূর্ত পরাণ।
অনেক মেঘ উড়ে। অনেক সার্বজনীন সন্ধ্যার ছায়া মাড়িয়ে ঝরে
বৃষ্টির বহুগামী রূপ। প্রথম কে এলো তৃষ্ণার সমুদ্রপাড়ে, তার নাম
লেখা থেকে যায় তিস্তাতোরণের দৈর্ঘ্যে, নিঃশ্বাসের বিনম্র আষাঢ়ে।
এইচআর/এমএস