চাঁদপুর থেকে প্রকাশিত মৃত্তিকা এবং ত্রিনদী
এবছর ফেব্রুয়ারি মাসে চাঁদপুর থেকে প্রকাশিত হয়েছে দু’টি লিটলম্যাগ। একটি ‘মৃত্তিকা’, অন্যটি ‘ত্রিনদী’। বইমেলা উপলক্ষে বিশেষ কবিতা সংখ্যা প্রকাশ করেছে মৃত্তিকা। যেখানে দুই বাংলার প্রবীণ ও নবীন পঞ্চাশজন কবির কবিতা স্থান পেয়েছে। কবি নির্বাচনের ক্ষেত্রে লিটলম্যাগটির সম্পাদক মুহাম্মদ ফরিদ হাসান যথেষ্ট দূরদৃষ্টির পরিচয় দিতে সক্ষম হয়েছেন।
এ বিশেষ সংখ্যায় যেমন মুহম্মদ নূরুল হুদা, মৃণাল বসুচৌধুরী, হাবীবুল্লাহ সিরাজী, অসীম সাহার মতো প্রবীণ কবিরা লিখেছেন; তেমনই লিখেছেন সারাজাত সৌম, পলিয়ার ওয়াহিদ, রফিকুজ্জামান রণি, রাসেল রায়হানের মতো ঝরঝরে তরুণরা।
লিখেছেন ইসহাক সিদ্দিকী, পরিতোষ হালদার, ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত, মাসুদ খান, শাহ বুলবুলের মতো প্রচারের বাইরে থাকা কবিরাও। কামাল চৌধুরী, সোহরাব পাশা, ফরিদ কবির, অদিতি ফাল্গুনী, ইকবাল পারভেজ, খালেদ রাহী, রোমেনা আফরোজ, সৌম্য সালেকসহ আরো অনেকের কবিতা পড়ে মৃত্তিকার আলোচ্য সংখ্যার পাঠকরা সমৃদ্ধ হবেন বলেই আমার বিশ্বাস।
মৃত্তিকার অন্য কবিরা হলেন- আনোয়ারা সৈয়দ হক, পূরবী বসু, যশোধরা রায়চৌধুরী, আইউব সৈয়দ, সৌমিত্র চক্রবর্তী, রেজাউদ্দিন স্টালিন, খালেদ হোসাইন, রহমান হেনরী, ফকির ইলিয়াস, টোকন ঠাকুর, আমিনুল ইসলাম, মুহাম্মাদ আমানুল্লাহ, মুজিব ইরম, জুনান নাশিত, মাসুদ মুস্তাফিজ, শাহানা সিরাজী, শুভাশিস সিনহা, জিনাত জাহান খান, চাণক্য বাড়ৈ, রহিমা আফরোজ মুন্নী, নূর কামরুন নাহার, নিখিল নওশাদ, মাহী ফ্লোরা, সিকতা কাজল, মোস্তফা হামেদী, ইমরান মাহফুজ ও মুহাম্মদ ফরিদ হাসান।
মৃত্তিকার চলতি সংখ্যার সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, ‘তাঁদের (কবিদের) কবিতা পাঠপূর্বক প্রবীণ ও নবীনদের সমকালীন সাহিত্যচর্চা ও গতি প্রকৃতি সম্পর্কে পাঠক অবহিত হতে পারবেন। প্রতিটি লেখাই যেন মানসম্মত হয়- আমাদের সেই প্রচেষ্টা ছিলো।’
মৃত্তিকাটি সম্পূর্ণ পাঠের পর সম্পাদকীয় প্রতিশ্রুতির যথাযথ উপস্থাপন আমরা দেখতে পাই। ষাটের দশক থেকে শুরু করে দ্বিতীয় দশকের বিভিন্ন কবির মানসম্মত কবিতার ধারাবাহিকতা ছোটকাগজটিকে ঋদ্ধ করেছে। যার ফলে খুব সহজেই পাঠক সমকালীন কবিতাচর্চা সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারবেন।
মৃত্তিকা ৬৪ পৃষ্ঠার স্বল্পায়তনের একটি কাগজ হলেও মানসম্মত লেখার কারণে এটি যেন বিন্দুর মধ্যে সিন্ধু ধারণ করে আছে।
এ মাসেই প্রকাশিত হয়েছে ‘ত্রিনদী’র চতুর্থ সংখ্যা। সারা দেশের অর্ধশতাধিক লেখক এ সংখ্যায় প্রবন্ধ, গল্প, ভ্রমণ, গদ্য ও কবিতা লিখেছেন। ছোটকাগজটিতে স্থান পেয়েছে অনুবাদ কবিতা, বই আলোচনাও। ত্রিনদীর এ সংখ্যার বিশেষ দিক নির্বাচিত গল্প ও মন্তব্য বিভাগটি। এ বিভাগে অনুজ তিনজন গল্পকারের গল্প নিয়ে আলোচনা করেছেন অগ্রজ তিন লেখক।
হারুন পাশার গল্প ‘পোস্টমর্টেম’ নিয়ে আলোচনা করেছেন সমীর আহমেদ, আহমাদ শামীমের গল্প ‘নির্লিপ্ততা ভালোবাসার একটি প্রায়োগিক মাধ্যম’র আলোচনা করেছেন পূরবী বসু এবং সাব্বির জাদিদের ‘ফরিদ ডাক্তারের গল্পকার হয়ে ওঠার গল্প’ শিরোনামের গল্পটি নিয়ে মন্তব্য করেছেন হাসান হাবিব। নির্বাচিত গল্প ছাড়া ত্রিনদীতে গল্প লিখেছেন সেলিনা হোসেন, দীলতাজ রহমান, পিন্টু রহমান, রফিকুজ্জামান রণি, কাদের পলাশ, লিটন মহন্ত ও সোহেল নওরোজ।
নানা কারণে ত্রিনদীর প্রবন্ধগুলো আলোকিত। সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের গল্প ‘লাশ’ নিয়ে বিশদ আলোচনা করেছেন শামস আলদীন, আশরাফ জুয়েল লিখেছেন মুহম্মদ নূরুল হুদার কবিতা নিয়ে। সংগীতজ্ঞ রামকানাই দাশ ও শামসুন্নাহার মাহমুদকে নিয়ে লিখেছেন যথাক্রমে তপন বাগচী ও রহিমা আক্তার মৌ। কবিতায় শব্দ প্রয়োগ ও বিবিধ প্রসঙ্গ নিয়ে তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ করেছেন সৌম্য সালেক। বিষয় বিবেচনায় গল্প, কবিতা, সংগীত, বরেণ্য নারী ও তাত্ত্বিক প্রবন্ধ- এসবই ত্রিনদীর এ সংখ্যাকে সমৃদ্ধ ও বৈচিত্র্যপূর্ণ করেছে।
সে তুলনায় ত্রিনদীতে স্থান পাওয়া কবিতাগুলো কিছুটা ধীরস্থির। কবিতা বিশেষ ভালো লেগেছে আমিনুল ইসলাম, জুনান নাশিত, জিয়াবুল ইবন, শাহ বুলবুল, জোবায়ের মিলন, ইকবাল পারভেজ, মনিকাঞ্চন ঘোষ প্রজীৎ, তানভীর আহমেদ হৃদয়, কবির হোসেন মিজি, বিদ্যুৎ দেব, দুখাই মুহাম্মাদ প্রমুখের। ত্রিনদীতে যারা কবিতা লিখেছেন তারা হলেন- তছলিম হোসেন হাওলাদার, পীযূষ কান্তি বড়ুয়া, হাসান হাবিব, আনোয়ার কামাল, মাহফুজ রিপন, দীপ্র আজাদ কাজল, ম. নূরে আলম পাটওয়ারী, মুহাম্মদ ফরিদ হাসান, সৈয়দ মেহেদী হাসান, আশিক বিন রহিম, জাহিদ নয়ন, মোকসেদুল ইসলাম, আতিক মুহাম্মদ আবু বকর, আজিম হোসেন, রইস মুকুল, আজিজ আহমেদ, অব্যয় রাসেল, নিশীথ দাস, মেহেদী ইকবাল, শারমিন সুলতানা রীনা, শাহমুুব জুয়েল, মোস্তফা হায়দার, তৌফিকুল ইসলাম চৌধুরী, জাহিদ জাবের, ইয়াছিন মাহমুদ আরাফাত ও হিরণ্য হারুন।
নজরুলের জায়গীর বাড়ি ও রবীন্দ্রনাথের শ্বশুর বাড়িতে যাওয়ার ভ্রমণ কাহিনি লিখেছেন কাজী শাহাদাত এবং কয়েক মিলিয়ন বইয়ের সাম্রাজ্য নিউইয়র্কের ‘স্ট্র্যান্ডবুক স্টোর’-এ যাওয়ার কথা লিখেছেন শিশুসাহিত্যিক হুমায়ূন কবীর ঢালী। গদ্য লিখেছেন পলাশ আহসান ও ক্ষুদীরাম দাস। আলী আহমাদ আদোনিসের কবিতা অনুবাদ করেছেন মাইনুল ইসলাম মানিক। বই আলোচনা বিভাগে স্বকৃত নোমানের ‘কালকেউটের সুখ’ উপন্যাস নিয়ে লিখেছেন পলাশ মজুমদার ও সৌম্য সালেকের ‘আত্মখুনের স্কেচ’ নিয়ে দু’কথা বলেছেন তুষার প্রসূন।
সব মিলিয়ে ত্রিনদীর চতুর্থ সংখ্যা নির্দিষ্ট ভারসাম্য নিয়ে পাঠকদের দুয়ারে হাজির হয়েছে।
এসইউ/জেআইএম