ভিডিও EN
  1. Home/
  2. সাহিত্য

সার্কাসসুন্দরী : সচেতন শিল্পীর অনবদ্য রচনা

সাখাওয়াত হোসেন সুজন | প্রকাশিত: ১০:০২ এএম, ১৬ এপ্রিল ২০১৭

সমকালীন তরুণ লেখকদের মধ্যে সালাহ উদ্দিন মাহমুদ একটি পরিচিত নাম। দীর্ঘ একযুগেরও বেশি সময় ধরে লেখালেখি করলেও তার প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘সার্কাসসুন্দরী’। বিভিন্ন সময়ে পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত গল্প নিয়ে যার আত্মপ্রকাশ। বইটি তাকে বাংলা সাহিত্য অঙ্গনে দাঁড়াবার একটি সুন্দর জায়গা করে দেবে বলেই বিশ্বাস করি।

এবছরের অমর একুশে বইমেলায় ‘সার্কাসসুন্দরী’ সচেতন পাঠক হৃদয়কে নাড়া দিয়েছে। কেননা বইটি পাঠ করলে হৃদয় আন্দোলিত হয়, শরীরে শিহরণ জাগে, কামনা ও বাস্তবতা দুই জগতেই তোলপাড় সৃষ্টি হয়। এ যেন এক দক্ষ ও সচেতন শিল্পীর অনবদ্য রচনা। যার রস আছে, গাম্ভীর্য আছে, সমসাময়িক বিষয় থেকে বিগতকাল সবকিছুরই সাবলীল উপস্থাপনা আছে।

সার্কাসসুন্দরীর মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যে একটি নতুন গল্পগ্রন্থ সংযোজিত হয়েছে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর ছিন্নপত্রের একটি চিঠিতে লিখেছিলেন, ‘যুদ্ধ জমানো থেকে গল্প জমানো কঠিন।’ সালাহ উদ্দিন মাহমুদ সেই কঠিন কাজটিই সুনিপুণ লেখনী এবং মেধা দিয়ে সহজ করে তুলেছেন।

তার প্রথম গ্রল্প ‘মাহিনের ইচ্ছেগুলো’তে তিনি মাহিন-মিথিলা রসায়নকে জীবনের এমন এক প্রান্ত পর্যন্ত নিয়ে গেছেন যেখানে মিলনটা হাহাকারের। শেষ বাক্য- ‘বহুদিন পর পাশাপাশি দু’জন।’ তাদের কাছে আসার ছোট গল্পটিতে যদি নদীতীরে মিলনের দৃশ্য থাকে তাহলে বলতে হবে এজন্য পাড়ি দিতে হয়েছে দুঃখের মহাসমুদ্র। মানুষ তার ইচ্ছার কাছে কখনোই অবদমিত হয় না। বরং ইচ্ছা পূরণের জন্য অনেক কিছুই ত্যাগ করে। মাহিনের একাগ্রতা মিথিলাকেই পরাজিত করেছে।

‘কবির সঙ্গে ফোনালাপ’ একজন রবীন্দ্রপ্রেমীর কবির সঙ্গে স্বপ্নালাপ। প্রিয়ার ফোনে ঘুম ভাঙলেও রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে কথার রেশ যেন কাটে না! অনিন্দিতার হাসি পাঠককেও হাসায়। গল্পের নায়িকার সঙ্গে পাঠকও যেন হাসিতে অংশ নেয়। গল্পটির উপস্থাপনাই বলে দেয় রবীন্দ্রজগত সম্পর্কে লেখকের কতটুকু ধারণা আছে। লেখকের ‘অন্তহীন’ গল্পটি বাস্তবতার উপস্থাপন। একজন সংবাদকর্মীর কঠিন বাস্তবতা ফুটিয়ে তুলেছেন লেখক। ‘যুবতী এবং চাঅলা’ যেন গল্পে উপস্থাপিত একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য টিভি নাটক। গল্পে নাটকীয়তার আশ্রয় নিয়ে ভালোবাসার মাপকাঠি তুলে দিয়েছেন লেখক।

‘ক্ষত’ গল্পে যৌনজীবন আর যৌনতার বিষয়টি সামনে এনে লেখক মোটেই কোনো বিব্রতকর কাজ করেননি। এটা সমাজ বাস্তবতা। এই সমাজে যৌনতার বিষয়গুলো খোলাসা না থাকাতেই অনৈতিকতা পথ পায়। পেটে অখাদ্য গেলে বদহজম হয়। খাদ্যমান নিম্ন হলে আমরা অকপটে কথা বলি। অথচ যৌনতাও অপরিহার্য বিষয়। এরও তৃপ্তি-অতৃপ্তির বিষয় খোলাসা হওয়া দরকার। মন অস্পৃশ্য তাই মনের মানুষের শরীরেই মানুষ মনোতুষ্টি খোঁজে। শরীরী এ ক্রিয়াকে অগ্রাহ্য করা যায় না। এ নিয়ে আলোচনাও প্রয়োজন। লেখক সে আলোচনাই করেছেন। বাকিটা পাঠক সিদ্ধান্ত নেবে সময় ও সমাজ বুঝে।

‘মাউছ্যা ভূত’ গল্পটি গ্রামে প্রচলিত ভূতের কিসসা বা গল্প থেকে সংগৃহিত হতে পারে। মানুষের মুখে মুখে শোনা যায় এমন গল্প। নামগল্প ‘সার্কাসসুন্দরী’তে বাংলার গ্রামীণ জনজীবনের উপস্থাপনা রয়েছে। লেখক অনবদ্য লেখনীর শক্তিতে গাঁয়ের মেঠোপথে হেঁটেই তার বর্তমান অবস্থানে এসেছেন। ‘সার্কাসসুন্দরী’র কথাগুলো কামাতুর পুরুষদের জন্য একটি বড় প্রশ্ন- ‘কোথায় পালাবো আমি। আপনিও পুরুষ। জগতের সব পুরুষ এক। সবাই মাংসলোভী। শরীরের স্বাদ খোঁজে। মনের বন্দর ছুঁতে পারে না।’

‘মিথিলা এখনো কানামাছি খেলে’ এবং ‘মাঝরাতে কবির সঙ্গে’ গল্প দু’টি ভিন্ন আমেজে হৃদয় কাড়ে। প্রেম-ভালোবাসা, সাহিত্যচর্চা সমার্থক না হলেও লেখকের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে মিশে আছে। সে কথাই হয়তো পাঠককে জানান দিচ্ছেন গল্পের মাধ্যমে। তবে ‘হাক্কা’ গল্পটা পুরোপুরি আঞ্চলিক ভাষায় রচিত। এর কিছু শব্দ অপরিচিত। তবে গল্পে উপস্থাপিত হয়েছে হারিয়ে যাওয়া গ্রামীণ জীবন, বদলে যাওয়া সংস্কৃতি, সময়ের যত উন্নয়ন।

‘দিখণ্ডিত কণ্ঠনালী’ একটি অযাচিত অথচ প্রত্যহ সংঘটিত ঘটনা। গণমাধ্যমে নারী নির্যাতনের নিত্য উপস্থাপনও গল্পটির মতই আমাদের ব্যথিত করে। ভালোবাসার একটি অনন্য গল্প ‘কাশফুল’। পাঠকের গালে বুলিয়ে দিয়েছে কাশফুলের আলতো ছোঁয়া। পাঠক ভালোবাসতে বাধ্য। নিজের সঙ্গে পাঠককে মনের সুতোয় বেঁধে ফেলার ক্ষমতা লেখকের আছে। মিথিলার আবেগ পাঠকেরও- ‘তুমি আমায় অনেক ভালোবাসো। এই শরতের কাশফুলই তা প্রকাশ করে।’

সর্বশেষ গল্প ‘বাসর রাতের বেড়াল বৃত্তান্ত’ প্রাণিপ্রেম-মানবপ্রেমকে একাকার করেছে। ভাবনার জগতে নতুনত্বের আবির্ভাব ঘটিয়েছে। হাস্যরসাত্মক উপস্থাপনায় গল্পটি ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে। সব মিলিয়ে বইটি সবার ভালো লাগবে- এতে কোনো সন্দেহ নেই।

১৩টি গল্পসমৃদ্ধ বইটি প্রকাশ করেছে দোয়েল প্রকাশনী। প্রচ্ছদ করেছেন আল নোমান। মূল্য রাখা হয়েছে ১৫০ টাকা।

এসইউ/পিআর

আরও পড়ুন