কবিতা আমার মেয়ে : ছন্দোবদ্ধ কাব্যের অনুপম নিবেদন
মনে মনে কিংবা মনে-প্রাণে সিংহভাগ বাঙালিই কবিতা ভালোবাসে। কবিতা পছন্দ করে। তাছাড়া আমরা বাঙালিরা স্বভাবতই কবি- এ কথা সবারই কমবেশি জানা। কম করে হলেও আমরা প্রায় প্রত্যেকেই কৈশোর পেরিয়ে যৌবনে কবিতা লিখেছি। নতুন প্রেমে পড়ে মনের মানুষকে নিবেদন করে চিঠির পাতায় কাব্যচর্চা করেনি এমন প্রেমিক-প্রেমিকা খুঁজে পাওয়া সত্যিই মুশকিল।
এখন অবশ্য চিঠি লেখা যুগের অবসান ঘটেছে। তারপরও প্রেম নিবেদনে কাব্যচর্চা চলছে ফেসবুকে নয়তো সেলফোনের ইনবক্সে। প্রেম-বিরহে, সংগ্রামে-সমরে, ধ্বংসে-সৃজনে আমরা কবিতার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করি। তাই কবিতা আমাদের সবার প্রিয়। কবিরা সবার আপনজন। একারণেই বুঝি কবি হাবীবাহ্ নাসরীন তার প্রথম কাব্যগ্রন্থের নাম রেখেছেন ‘কবিতা আমার মেয়ে’।
কাব্যগ্রন্থের নাম ‘কবিতা আমার ছেলে’- রাখা হলো না কেন? কবি কী তাহলে ছেলের চেয়ে মেয়েকে বেশি ভালোবাসেন? নাকি কবির স্বজাতির প্রতি প্রগাঢ় টান অনুভব করেছেন? হয়তো এ প্রশ্নের জবাব সামনের কোনো কবিতায় পাওয়া যাবে বলে প্রত্যাশা করছি।
এবার কবি হাবীবাহ্ নাসরীনের কাব্যভুবনে প্রবেশ করা যাক। ‘কবিতা আমার মেয়ে’ কাব্যগ্রন্থের একেকটি কবিতা একেকটি বিষয়ের দৃশ্যপট ধারণ করেছে। প্রেম-ভালোবাসা, বিরহ-মিলন, স্বদেশ ভাবনা, সমসাময়িক প্রেক্ষাপট তার কবিতার ছত্রে ছত্রে অবলীলায় উঠে এসেছে।
‘কবির চোখে রাত নেমেছে নীল
কাঁচপোকাদের আনন্দ ঝিলমিল
বাতাস যেন অন্য সুরে গায়
সুগন্ধি ফুল অন্য আঙিনায়।’
‘কবির চোখে’ শীর্ষক এমন ছন্দোবদ্ধ কবিতা দিয়েই ‘কবিতা আমার মেয়ে’ গ্রন্থের সূচনা হয়েছে। এরপর কবি তার কাব্যগ্রন্থে ‘এই ছলনা এই অভিনয়’, ‘বলবো কাকে’, ‘এ কোন আলোর দিন’ এবং ‘কেন’সহ প্রায় ৬০টি কবিতার সন্নিবেশ ঘটিয়েছেন।
‘কোন অপরাধে’ কবিতায় কবির কোমল মনের পরিচয় প্রতিভাত হয়েছে। আমাদের আশপাশের সাম্প্রতিক সময়ের শিশু নির্যাতন ও হত্যার করুণ চিত্র তিনি এ কবিতায় তুলে ধরেছেন। কবি বলেছেন-
‘নিষ্পাপ শিশু ফুলেরই মতন, ওদের কী অপরাধ
বেলা ফুরোবার আগে ঢলে পড়ে নিয়ে মৃত্যুর স্বাদ!
কচি কচি দেহ পুড়ে ছারখার, যায় নাতো চেনা মুখ
মানবতা তুমি নিশ্চুপ কেনো তোমার কী অসুখ?’
‘চোখ ফেরালেই তুমি’ নামের কবিতায় কবি বলেছেন-
‘ফুরিয়ে গেছে একলা থাকার সময়
চোখ ফেরালেই দেখতে পাবো তোমায়।
এই তুমি তো সেই সে তুমি, আজন্মকাল চেনা
হৃদয়জুড়ে প্রেম, বিরহ, ক্ষমায়।’
এ কবিতার প্রতিটি পঙক্তিতে কবি মানব-মানবীর মিলন ও বিরহের কথা সুনিপুণভাবে চিত্রায়িত করেছেন। প্রেম, মিলন, বিরহের পাশাপাশি মৃত্যু ভাবনাও কবিকে আন্দোলিত করেছে ব্যাপক পরিসরে।
হাবীবাহ্ নাসরীন ‘মৃত্যু তোমাকে স্বাগত জানাতে’ কবিতায় লিখেছেন-
‘চারদিকে শুধু মৃত্যুর ঘ্রাণ মৃত্যুরা ডাকে আয়!
কুয়াশার মত মৃত্যু জমে বন্ধ এ জানালায়!
আঙুল ছুঁইয়ে লিখে দেবো নাম কুয়াশার ভেজা কাচে
মৃত্যুরা তবু অদ্ভুত কেন, পিশাচের মত নাচে!’
হাবীবাহ্ নাসরীনের ‘কবিতা আমার মেয়ে’ কাব্যগ্রন্থের প্রতিটি কবিতাই ছন্দোবদ্ধ। বিশেষ করে ছন্দপ্রিয় কাব্যপ্রেমীদের কাছে তার কবিতা অনেক পছন্দ হবে। ২০১৬ সালের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত ‘কবিতা আমার মেয়ে’ কাব্যগ্রন্থটি ইতোমধ্যে ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা লাভ করেছে। সেইসঙ্গে হাবীবাহ্ নাসরীনকে কবি হিসেবে সুখ্যাতি এনে দিয়েছে।
বইটির দৃষ্টিনন্দন প্রচ্ছদ এঁকেছেন চিত্রশিল্পী চারুপিন্টু। ১৪০ টাকা মূল্যমানের কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশ করেছে দেশ পাবলিকেশন্স।
এসইউ/এমএস